Web bengali.cri.cn   
রূপ চর্চায় প্রাকৃতিক প্রসাধনী!
  2015-10-22 15:19:54  cri


আজকাল ভালো মানের প্রসাধন সামগ্রীর দাম এতো বেশি, যা শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়। তবে শুধু দামি প্রসাধনীই নয়, বাজারে যে সব প্রসাধনী পাওয়া যায়, তা মূলত রাসায়নিক পদার্থ। এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আপনি জানেন কি, দৈনন্দিন খাবার হিসেবে আমরা যা খাই, তাও কিন্তু নিজের ত্বক চর্চায় ব্যবহার করা যায়। এতে আপনার খরচ কমে যাবার পাশাপাশি রাসায়নিক পদার্থের প্রসাধনীগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

আটা

নিশ্চয়ই আপনার রান্নাঘরে আটার কোনো অভাব নেই, তাইনা ? আপনার ত্বক পরিচর্যায় অনেক সহায়ক হতে পারে আটা। আটা সব ত্বকের জন্যেই ভালো কাজ করে। ১ টেবিল চামচ পরিষ্কার আটা নিয়ে তার সাথে গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে মুখে মেখে ১০/১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। আটা পানিতে ফুটিয়ে পেস্টের মতো করে মুখমণ্ডলে লাগালে মুখের ছিট ছিট তিল দাগ অনেক হালকা হয়ে যায়। বেসনের মতো আটা হাতে নিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে সাবানের মতো মুখ পরিষ্কারও করা যায়।

গোলাপ জল

গোলাপ জল চিনেন না এমন লোক হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। মেয়েদের রূপচর্চা গোলাপ জল একটি অপূরণীয় উপাদান। গোলাপ ফুলের নির্যাস থেকেই এ পানিটি তৈরি হয়। গোলাপ জল দিয়ে স্কিন-ফ্রেশনার টনিক আপনি নিজেই বানাতে পারেন। আধা কাপ গোলাপ জল, একটা লেবুর রস, কয়েক ফোঁটা মধু একত্রে মিশিয়ে নিলে স্কিন-ফ্রেশনার টনিক হয়ে যায়। এ টনিক দিনে দু'বার তুলোয় করে মুখে লাগাতে পারেন। যাদের মুখের চামড়া খসখসে তারা রাতে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে সমপরিমাণ গোলাপ জলের সাথে গ্লিসারিন মুখে, হাতে এবং পায়ে মেখে নিতে পারেন। ভোরে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এতে মুখের খসখসে ভাব থাকবে না এবং ধীরে ধীরে আপনার ত্বক কোমল হয়ে উঠবে।

মধু

মধুর গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। মধু ত্বকের জন্যে খুবই উপকারী। বহু ফেসপ্যাক মধু দিয়ে তৈরি হয়। কয়েক ফোঁটা মধু ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে মুখে মাখলে মুখের রং উজ্জ্বল, কোমল ও মসৃণ হয়। মধু ও বেসন একত্রে মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে মেখে ১৫/২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি ও পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুলে মুখের ত্বক খুব সুন্দর ও মসৃণ হয়। কয়েক ফোঁটা মধু,কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, ১ চা চামচ গাজরের রস এবং ১ চা চামচ ছোলার ডালের বেসন একত্রে পেস্টের মতো করে মুখে মেখে ২০/৩০ মিনিট রেখে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখ মসৃণ ও কোমল হয়ে উঠবে। এ প্যাকটি শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বকের জন্যে উপকারী। মধু খেলেও নানা রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ চামচ মধু খেলে ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আয়ুর্বেদী বহু চিকিৎসায় মধু ব্যবহৃত হয়। বাসক পাতার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা মধু নিয়মিত খেলে ঘুম ভালো হয়।

খাবার সোডা

খাবার সোডা রুটি, বিস্কুট, চটপটি ইত্যাদি বহুবিধ রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু রূপচর্চা বা কোনো কিছু পরিষ্কারের জন্যও যে সেটি ব্যবহার হয়, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। রূপোর গয়না একটু খাবার সোডা দিয়ে ব্রাশ করে ধুলে দেখবেন ঝকঝকে হয়ে উঠছে। অনেকের মুখের দাঁত দেখতে হলদেটে ভাব। তারা যদি একটু খাবার সোডা দাঁত মাজার ব্রাশের ওপর নিয়ে মেজে নেন, তাহলে দেখবেন দাঁতগুলো ঝকঝকে হয়ে উঠেছে। তবে, এ পদ্ধতিটি আপনি প্রতিদিন করবেন না। এতে দাঁতের মাড়ির ক্ষতি এড়ানো যাবে।

আলু

শুধু রান্না-বান্না, খাবার-দাবারেই যে আলু ব্যবহার করা হয়, তাই নয়। রূপচর্চায় আলুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনেকে গায়ের রং ফর্সা করার জন্য নানা জিনিস ব্যবহার করে থাকেন। তারা হয়তো অনেকেই জানেন না আলু ব্যবহার করেও শরীরের রং উজ্জ্বল করা যায়। গোল আলু খোসাসহ গোল গোল করে কেটে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর পানি থেকে তুলে হাতে পায়ে মুখে গলায় ঘষে মেখে নিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত করতে পারলে গায়ের রং উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

ডিম

সৌন্দর্য চর্চায় ডিম অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। ডিম দিয়ে মাথা ধোয়াসহ ডিমের তৈরি প্যাক বিভিন্নভাবে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডিমের প্যাক ব্যবহারে মুখের লাবণ্য ফিরে আসে। ডিমের কুসুমের প্যাক শুকনো ত্বকের পক্ষে খুবই ভালো। শুকনো ত্বকের জন্য ডিমের কয়েকটি প্যাক তৈরির পদ্ধতি জানিয়ে দিচ্ছি এখানে।

‌এক: ডিমের হলুদ অংশ, আধা চা চামচ অলিভ অয়েল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এ প্যাকটি মুখ ধুয়ে, পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে প্রথমে হালকা কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ও পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ত্বকের জন্য খুবই ভালো ফল হবে।

দুই: ডিমের কুসুম ও তার সাথে অলিভ অয়েল আধা চা চামচ মিশিয়ে মুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখে প্রথমে হালকা কুসুম গরম পানি, পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। সাধারণত সপ্তাহে ২/৩ দিনের বেশি লাগানোর দরকার নেই। এতে আপনার ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে।

শসা

শসার গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। শসা যেমন রান্না-বান্নায়, খাওয়া-দাওয়ায় ব্যবহৃত হয় তেমনি ব্যবহৃত হয় রূপচর্চায়। মুখে কোনো কালো দাগ পড়লে কচি শসার রস মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নেবেন। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত লাগালে দাগ উঠে যায়। শসার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মুখে মেখে শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিলে মুখের রং উজ্জ্বল ও কোমল হয়। তবে নিয়মিত কিছুদিন করতে হবে। মুখকে রোদ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে শসা। মুখের দাগ তুলতে ও ময়লা থেকে যদি রেহাই পেতে চান, শসা দিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানান। একটি কচি শসা পাতলা করে কেটে থেঁতো করে তার সাথে একটি ডিমের কাঁচা কুসুম, এক টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে তৈরি করুন ফেসপ্যাকটি। তার পর প্যাকটি মুখে, গলায় ও হাতে মেখে নিন। ২৫/৩০ মিনিট রেখে প্রথমে গরম পানি, পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক সারাদিনের জন্য যেমন চকচকে, মসৃণ ও কোমল থাকবে তেমনি বাইরের নানা জীবাণু থেকে ত্বক রক্ষা করা সম্ভব হবে।

টমেটো

টমেটোতে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে। তাই কাঁচা টমেটো খাওয়া খুবই উপকারী। টমেটোতে ভিটামিন-বিও রয়েছে। ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি এগুলো ত্বকের জন্যে বেশ উপকারী। টমেটো খেয়ে এবং ফেসপ্যাক তৈরি করে আপনি রূপচর্চা করতে পারেন অনায়াসে। ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি মাঝারি ধরনের গোটা তিনেক টমেটোর রসের সঙ্গে ২ চা চামচ গ্লিসারিন, ৩ চামচ লেবুর রস, ৪ চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে, গলায় ও হাতে ভালো করে মেখে নিয়ে ১৫/২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখটি কেমন সুন্দর মনে হচ্ছে।(ওয়াং তান হোং/তৌহিদ)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040