Web bengali.cri.cn   
কাজাখস্তানের নারী ও উত্তর-পশ্চিম চীনের পুরুষের ভালোবাসার গল্প
  2015-10-30 19:04:30  cri


ঐতিহাসিক রেশম পথ পূর্ব দিকে ছাং আন অর্থাত্ বর্তমান শান সি প্রদেশের রাজধানী সি আন শহর থেকে শুরু হয়ে, কান সু প্রদেশের হেসি করিডোর এবং সিয়াং চিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর এবং ইতালির রোম পর্যন্ত পৌঁছেছে। হাজার বছর ধরে ৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সিল্ক রোডে আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় কল্যাণকর ছিল, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের রাজপথ তৈরি হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের জন্য আধুনিক সিল্ক রোডের একটি ভালোবাসার গল্প শোনাবো।

২০০০ সালে সিল্ক রোডের সঙ্গে আমার সম্পর্ক শুরু হয়। ভাগ্য, সত্যই ভাগ্যবান আমি। কখনও জানতাম না সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এ কোম্পানির নাম সিল্ক রোড।

সি আনে কাজাখস্তানের মেয়ে ডক্টর সোফিয়া আমাদেরকে তাঁর এ গল্প বলেছেন। সে বছর একটি চলচ্চিত্রের কারণে ২০ বছর বয়স পার হওয়া সোফিয়া সিল্ক রোডের মাধ্যমে তার ভাগ্য গড়ে তুলেছেন। কাজাখস্তানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সোফিয়া, প্রাচীন সিল্ক রোডে বাণিজ্যের সময় শুল্ক ক্লিয়ারেন্সের বিষয় নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই তিনি সিল্ক রোড শুল্ক আইন সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেন। তাঁর ডক্টরেট থিসিস এর বিষয় হলো সিল্ক রোডের শুল্ক আইন। তিনি বলেন,

২০০৪ সালে আমি শুল্ক আইন নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম। তাই আমি সিল্ক রোড নিয়ে গবেষণা শুরু করেছি। আমি জানতে চাই হান, থাং ও মিং রাজবংশের সময় এতো দীর্ঘ সিল্ক রোডে মালামাল কিভাবে আসতো এবং কিভাবে কাস্টমস ব্যবস্থাপনা করা হতো। যেমন ফু চিয়ান প্রদেশের চা কয়েকটি দেশের কয়েকটি কাস্টমস পার হতো। সে সময় দাম কিভাবে নির্ধারণ করা হতো। আমি সবসময় এটা নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছি।

আইন ডক্টর হিসেবে সোফিয়ার বর্তমানে সি আনের একটি ল ফার্মের 'সিল্ক রোড আইন সেবা কেন্দ্রের বিশেষ উপদেষ্টা', পাশাপাশি সি আন চিয়াও থোং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি বিশেষজ্ঞ। ২০০৪ সালে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য সোফিয়া সিল্ক রোডের প্রারম্ভ-বিন্দু—চীনের প্রাচীন নগর সি আনে এসেছেন। এখানেই তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে যায়।

এখানে তিনি তার জীবনসঙ্গী—সি আনের অধিবাসী জাং ফানকে খুঁজে পান। দু'জন দেখা হওয়ার পেছনের গল্প হলো, এর আগে জাং ফান সোফিয়ার ছবি দেখেছেন। সুন্দর ও অমায়িক চেহারার ওই মেয়ের প্রতি প্রথম দর্শনেই তার হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরি হয়।

সোফিয়া বলেন,

আমি ২০০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারিতে চীনে আসি। ১ মার্চে জাং ফানের সঙ্গে দেখা হয়। ২ মার্চে সে আমাকে বলেছে, আমরা বিয়ে করবো!

পরিচিত হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টাও হয়নি, অথচ উত্তর-পশ্চিম চীনের পুরুষ জাং ফান নিশ্চিত হন যে, সোফিয়াই হবে তার স্ত্রী। পরিচয়ের শুরুতে দু'জনের ভাষা ছিল ভিন্ন। এক সঙ্গে বসার জন্য জাং ফান কাজাখস্তানে তাঁর অনুবাদকের উপর নির্ভর করতো।

জাং ফানের উষ্ণ ও আন্তরিকতা এবং তাঁর চরিত্রের বিশালতা, উদারতা শীঘ্রই সোফিয়াকে স্পর্শ করে। পরিচিত হওয়ার ৫ মাস পর ২০০৪ সালের ৮ অগাস্টে সিল্ক রোড দেশগুলো থেকে আসা মানুষদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। যদিও সি আনের অধিবাসী, তবুও চাকরির কারণে দু'জনকে মাঝেমাঝে চীন ও কাজাখস্তানে যাতায়াত করতে হয়। জাং ফান ছিলেন কাজাখস্তানের সাবেক চীনা বংশোদ্ভুত বণিক-সভার প্রধান। চীন ও কাজাখস্তানে তাঁর নিজের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানা আছে। সোফিয়া এই আইন বিশেষজ্ঞ নিজের স্ত্রী হিসেবে বলেন, জাং ফানের ব্যবসা খুবই সফল। এ ছাড়া তাঁর নিজের ব্যবসায়িক দক্ষতাও আছে। তিনি বলেন,

সোফিয়া শুধু আমার কাজের জন্য সহায়ক, তাই নয়, বরং কাজাখস্তানে চীনা ব্যবসায়ীদের জন্যও সহায়ক। কোন আইনগত সমস্যা থাকলে বিনা খরচে সে পরামর্শ দেয়। বিদেশে ব্যবসা করা সবার জন্য সহজ নয়, প্রথমে বিনা খরচে, যখন মুনাফা হয়, তখন উপযুক্ত খরচ দেওয়া হয়। অন্যদের স্বার্থ প্রথম স্থানে বিবেচনা করা হয়, তারপর নিজের স্বার্থ দেখা হয়। তারপর ব্যবসা আস্তে আস্তে বেড়ে যায়। ব্যবসাটা স্থায়ীভাবে করতে চাইলে, আস্তে আস্তে তা বাড়াতে হয়।

বর্তমানে সোফিয়া তিনটি বাচ্চার মা। কাজের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর স্বামীর চেয়ে দুর্বল নয়। আইন উপদেষ্টা ছাড়া, তিনি কয়েকটি সাংস্কৃতিক কোম্পানির সহযোগী অংশীদার। এ ছাড়া তিনি হলেন সি আন চিয়াও থোং বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদী বিদেশি বিশেষজ্ঞ। পেশাদার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং সুষ্ঠু আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে প্রতিদিন সোফিয়াকে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি বলেছেন, তিনি একটি সেতুতে পরিণত হয়ে, চীন ও কাজাখস্তানের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্য ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র সংযুক্ত করতে চান। তার পরিকল্পনা সম্পর্কে সোফিয়া বলেন,

একটি প্রতিযোগিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে হবে এ প্রতিযোগিতা। চিয়াও থোং বিশ্ববিদ্যালয় 'সিল্ক রোড বিশ্ববিদ্যালয় জোট'-এ যোগ দিয়েছে। শতাধিক ছাত্রছাত্রী এতে অংশ নেবে। সিল্ক রোডের সঙ্গে আপাতত কোনো তরুণ-তরুণীর সম্পর্ক নেই। এ ধরনের একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন তাদের জন্য একটি সুযোগ এনে দেবে। প্রত্যেক ছাত্র চীনের ৩টি পণ্যদ্রব্য--যেটা ব্যবস্থাপনা করা যায়, সেটা নিয়ে ব্যবসা করবে। তারপর দেখবে কার ব্যবসা ভালো। টিভি কেন্দ্র এর শুটিং করবে। অন্য কাজ হচ্ছে, কাজাখস্তানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গ্রন্থাপারে একটি চীনা প্যাভিলিয়ন খুলে চীনা ভাষার বই কাজাখস্তানে দেওয়ার মাধ্যমে কাজাখস্তানের জনগণ চীনের সংস্কৃতি ও চীনের অক্ষর সম্পর্কে জানবে। বর্তমানে মধ্য এশিয়ায় এমন একটি চীনা প্যাভিলিয়ন নেই। যদি বছরের শেষে তা খোলা হয়, তাহলে এটি একটি বড় ব্যাপার হবে।

সুন্দর ও সক্ষম সোফিয়া শুধু একজন দৃঢ় চরিত্রের নারীই নয়, বরং বিবাহ ও পরিবার ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম বুদ্ধিমান নারী। মিশ্র সংস্কৃতির বিয়েতে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত না হলেও এটা সোফিয়ার জন্য কোনো সমস্যা নয়। তিনি বলেছেন, মনোযোগ দিলে সব সমস্যা সমাধান করা যায়। তিনি বলেন,

দু'জনের ভাষা, সংস্কৃতি, লেখাপড়ার বিষয়, ভালো লাগার জিনিস ও বন্ধু মহল ভিন্ন। যদি দু'জনকে এক সঙ্গে চলতে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই একটা পথ খুঁজে বের করতে হবে। যদি কোনো বিষয়ে মনমালিন্য হয়, ঝগড়া হয়, তা সমাধান ও যোগাযোগের উপায়ও নিশ্চয়ই আছে।

চলতি বছরের অক্টোবরে সোফিয়ার নতুন বই 'আমার সিল্ক রোড' প্রকাশ করা হয়। বইটিতে তিনি চীনে বসবাসের জীবন ও দশ-বারো বছর ধরে সিল্ক রোডে কাজাখস্তান ও চীনের 'সেতু' প্রতিষ্ঠার গল্প বলেছেন। তারপর এ দম্পতির মধ্য এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের মাধ্যমে সি আনের উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তি অঞ্চলে আমদানির পরিকল্পনা আছে। সোফিয়া বলেন, সিল্ক রোডের সঙ্গে তার বিশেষ আবেগ জড়িত। সিল্ক রোডের মাধ্যমেই তিনি এবং তাঁর স্বামী পরিচিত হয়েছেন। ঠিক সিল্ক রোডের কারণে তাদের কাজ ও জীবন দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040