1014
|
গত ৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের অর্থমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পাঁচ বছর ধরে চলা আলোচনাশেষে তারা একটি সমঝোতাস্মারকও স্বাক্ষর করেন।
টিপিপি'র ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ ছিল বরাবরই। এখন চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের প্রতিক্রিয়া জানতে সবাই ছিলেন উদগ্রিব। কারণ, এ চুক্তিতে চীন অংশীদার নয়।
চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী কাও হু ছেং গত ৮ অক্টোবর টিপিপি সম্পর্কে বলেন, চীন বরাবরই মনে করে টিটিপি'সহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত এবং ভবিষ্যতে যেসব চুক্তি হবে—সবগুলোই এ অঞ্চলের বাণিজ্য উদারীকরণ ও সহজীকরণের জন্য সহায়ক। এ ধরনের চুক্তি বৈশ্বিক অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির সাথে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি একীকরণের জন্য সহায়ক সকল চুক্তি ও ধারণার প্রতি চীনের সমর্থন রয়েছে। চীন আশা করে, টিপিপি ও এতদঞ্চলের মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা পরস্পরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং এ অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখবে।
টিপিপি কার্যকর হলে এর নেতিবাচক প্রভাব চীনের অর্থনীতিতে পড়বে বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন। এ প্রসঙ্গে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী কাউ হু ছেং বলেন, যে-কোনো আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি অ-সদস্য দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে। চীন এ চুক্তি বিশ্লেষণ করে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে একটা ধারণা নেবার চেষ্টা করবে।
এদিকে, চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের বৈদেশিক অর্থনীতি গবেষণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের প্রধান ছাং চিয়ান পিং মনে করেন, টিপিপি চীনা অর্থনীতির ওপর কম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, 'টিপিপি'র সদস্যরাষ্ট্রগুলোর তিন ভাগের দু'ভাগের সাথে চীনের দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি আছে। তা ছাড়া, রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)-এর আওতায় আছে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ এবং চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত। যদি এ বড় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয় তবে টিপিপি'র নেতিবাচক প্র্রভাব এমনিতেই কমে আসবে।'
সম্প্রতি পেইচিংতে অনুষ্ঠিত হয় চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য এলাকার অষ্টম দফা মূখ্য আলোচক সম্মেলন। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেন তান ইয়াং এ সম্পর্কে বলেন, তিনটি দেশই বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিন দেশের মোট জিডিপি বৈশ্বিক জিডিপির ২০ শতাংশ। চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য এলাকা প্রতিষ্ঠিত হলে তিন দেশের অর্থনীতিই উপকৃত হবে। এবারের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সেন তান ইয়াং বলেন, 'তিন পক্ষ পণ্যবাণিজ্য, সেবাবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীরভাবে মত বিনিময় করেছে এবং কিছু বিষয়ে অগ্রগতিও অর্জিত হয়েছে। চীন সবসময় চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য এলাকার ওপর গুরুত্ব দেয় এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনায় আরও অগ্রগতি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক।' তিন দেশের আগামী আলোচনা ডিসেম্বরে জাপানে অনুষ্ঠিত হবে বলেও তিনি জানান।
সম্প্রতি ব্যাংককে চীন ও থাইল্যান্ড রেল সহযোগিতা যৌথ কমিটির সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দু'পক্ষ চীন-থাইল্যান্ড রেল সহযোগিতাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করে। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেন তান ইয়াং এ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তঃযোগাযোগ হচ্ছে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়। রেলখাতে চীন-থাইল্যান্ড সহযোগিতা 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সেন তান ইয়াং বলেন
"বর্তমানে, চীন ও লাওসের মধ্যে রেল-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। নির্মাণাধীন এ রেলপথ চীন ও থাই রেলের সঙ্গে যুক্ত হলে চালু হবে ট্রান্স-এশিয়ান রেলের অন্তর্বর্তী চ্যানেল। এ প্রকল্প চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং চীন, লাওস, থাইল্যান্ড ও অন্য আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃপরিবহন পরিস্থিতি উন্নত করবে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নানাভাবে উপকৃত হবে।" (সংগীত)
সোসাইটি ফর ওয়ার্লড ওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যানসিয়াল টেলিকমিউনিকেশান্স (এসডাব্লিউআইএফটি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি অক্টোবর মাসে চীনা মুদ্রা রেনমিনপি (আরএমবি) আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম লেনদেনকৃত মুদ্রায় পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে আরএমবি ছাড়িয়ে গেছে জাপানের ইয়েনকে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, অক্টোবর মাসে বিশ্ব পেমেন্ট বাজারে রেন মিন পি'র হিস্যা ছিল ২.৭ শতাংশ। অন্যদিকে মার্কিন ডলার, ইউরোপের ইউরো এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের হিস্যা ছিল যথাক্রমে ৪৪.৮, ২৭.২ ও ৮.৫ শতাংশ।
অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী ১০০টির বেশি দেশ পেমেন্টের ক্ষেত্রে রেন মিন পি ব্যবহার করে। এ ছাড়া, এসময় ১৭০০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী রেন মিন পি ব্যবহার করেছে।
১২১ বছর আগে, অর্থাত ১৮৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীন ও জাপানের নৌবাহিনী হুয়া হাই সাগরে (চীনা লাও নিং প্রদেশের তান তুন শহরের কাছে) পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। অধিনায়ক তেং সি ছাং'র নেতৃত্বে চীনা জাহাজ 'ছি ইউয়ান' অন্য একটি চীনা জাহাজকে কভার করার জন্য একটি জাপানি জাহাজকে ধাক্কা দিতে গিয়ে পথিমধ্যে টর্পেডোর আঘাতে ডুবে যায়। এতে তেং সি ছাংসহ ২৫২ জন নাবিকের মধ্যে ৭ জন ছাড়া সবাই প্রাণ হারান।
সম্প্রতি সাগরের তলদেশে একটি জাহাজ আবিস্কার করেন চীনা প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মীরা। তাদের ধারণা, জাহাজটি ১২১ বছর আগে ডুবে-যাওয়া চীনা জাহাজ 'ছি ইউয়ান'।
গত অগাস্টে চীনা জাতীয় পুরাকীর্তি ব্যুরো সংশ্লিষ্ট এলাকায় শুরু করে অনুসন্ধানকাজ। দু'মাসের অনুসন্ধানশেষে সাগরের তলদেশ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মীরা শতাধিক পুরাকীর্তি উদ্ধার করেন। এর মধ্যে রয়েছে একটি টাইল। টাইলের ওপর খোদাই করা আছে 'ছি ইউয়ান' শব্দদু'টি। এ টাইলের মাধ্যমে এ জাহাজের পরিচয় সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। এ ছাড়া, উদ্ধারকৃত পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে তেং সি ছাংয়ের একটি ব্যক্তিগত জিনিস রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে: ডুবে যাওয়া গোটা জাহাজটিকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়? এ ব্যাপারে এখনও পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করা হয়নি। এদিকে, দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে বলে অনুসন্ধানকাজ স্থগিত রেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা।
বসন্ত উত্সব, গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও জাতীয় দিবসের ছুটির সময়টা চীনা চলচ্চিত্র বাজারের জন্য তিনটি স্বর্ণসময়। এবার জাতীয় দিবসের ছুটিতে চীনা চলচ্চিত্র বক্স অফিস ১৮৫ কোটি ইউয়ান আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের আয়ের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। চলচ্চিত্র Goodbye Mr. Loser ৫৫.৮ কোটি ইউয়ান আয় করে এসময় শীর্ষে অবস্থান করে।
Goodbye Mr. Loser স্বল্প বাজেটে তৈরি একটি চলচ্চিত্র। এতে কোনো বিখ্যাত অভিনেতা বা পরিচালকও নেই। তাই এটি এতটা ব্যবসাসফল হবে তা শুরুতে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়। যারা-ই ছবিটি দেখেছেন, তারাই এর উচ্চ প্রশংসা করেছেন। বিবিএসে এ চলচ্চিত্র ১০-এর মধ্যে ৮.৪ পয়েন্ট পেয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদ যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ৯০তম বার্ষিকী পালন করা হয়; শুরু হয় ধারাবাহিক প্রদর্শনীর। তা ছাড়া, এ উপলক্ষ্যে যাদুঘরের ছি নিং ভবন এবং সো খাং ভবন প্রথমবারের মতো দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যাদুঘরের প্রধান কর্মকর্তা সান জি সিয়াং বলেন,
"চলতি বছর রাজপ্রাসাদ যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ৯০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। আমরা গত দুই বছর ধরে এ জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছি। চলতি বছর থেকে যাদুঘরের আরও কিছু এলাকা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। আগে দর্শকরা কেবল রাজপ্রাসাদ যাদুঘরের পূর্ব অঞ্চলে যেতে পারতেন। এখন তারা পশ্চিম অঞ্চলেও যেতে পারবেন। গত ৯০ বছরে পশ্চিমের ছি নিং ভবন এবং সো খাং ভবন একবারও উন্মুক্ত করা হয়নি, যা খুবই রহস্যময় ব্যাপার।
চিকিত্সায় ২০১৫ সালের নোবেল ঘোষণা করা হয় গত ৫ অক্টোবর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে। চীনা চিকিত্সক থু ইউ ইউ ম্যালেরিয়ার নতুন চিকিত্সাপদ্ধতি আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার চিকিত্সা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। অবশ্য তার সঙ্গে এবার যৌথভাবে উইলিয়াম সি. ক্যাম্পবেল ও সাতোশি ওমুরাও চিকিত্সা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। তবে, থু পাবেন পুরস্কারের মোট অর্থের অর্ধেক।
থু ইউ ইউ ১৯৩০ সালে চীনে জন্মগ্রহণ করেন। গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০-এর দশকে থু ইউ ইউ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনের ঐতিহ্যিক ওষুধপত্র থেকে সক্রিয় উপাদান বের করেন এবং তা দিয়ে তৈরি করেন ম্যালেরিয়া-বিরোধী নতুন ধরনের ওষুধ। এ ওষুধ পরবর্তী কালে জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থা মৌলিক ওষুধ হিসেবে ম্যালেরিয়া-বিরোধী ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
নোবেল চিকিত্সা পুরস্কার কমিটির সদস্য ইয়ং অ্যান্ডারসন থু ইউ ইউর অবদান মূল্যায়ন করে বলেন, "১৭০০ বছর আগে থেকেই চীনে ম্যালেরিয়ার চিকিত্সায় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ব্যবহারের প্রচলন ছিল। তবে থু ইউ ইউ সেসব ওষুধের কার্যকর উপাদানগুলো চিহ্নিত করে তা প্রাচীন ওষুধ থেকে আলাদা করতে সক্ষম হন। এটা তার বিশেষ কৃতিত্ব।'
২০১১ সালে থু মার্কিন লাস্কার পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছিলেন। থু ইউ ইউ'র আবিষ্কার বিশ্বের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে দশ থেকে বারো লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। থু ইউ ইউ আশা করেন, ভবিষ্যত বিজ্ঞানীরা ঐতিহ্যিক চিকিত্সা-পদ্ধতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হবেন এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সে পদ্ধতিকে যুক্ত করে নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারে সক্ষম হবেন। তিনি বলেন, "বিশ্বের মানুষকে সাহায্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিত্সাবিজ্ঞানে ঐহিত্যিক উপাদান অনেক এবং আধুনিক প্রযুক্তিও দিন দিন উন্নত হচ্ছে। চিকিত্সাবিজ্ঞানের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহ্যিক ওষুধের কার্যকর উপাদান খুঁজে বের করা আমার এবং আমাদের আগামী প্রজন্মের দায়িত্ব।" (শিশির/আলিম)