চীনা কলেজ
ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা কলেজের ডিন অভিজিত ব্যানার্জি বহু বছর আগে চীনে পড়াশোনা করেছেন। তখন থেকেই চীন ও চীনা ভাষার প্রতি তার ভালোবাসা। ভারতে ফিরে যাওয়ার পর চীনা ভাষা পড়ানো এবং চীন-ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর অভিজিত সারা জীবন কাজ করেছন।
সম্প্রতি সি আর আই'র এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, সাংস্কৃতিক বিনিময় হলো, চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের ভিত্তি। দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সারা বিশ্বের জন্য কল্যাণকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ব বিখ্যাত কবি, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চীনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কবিতা ছাড়াও শিক্ষা মহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক অবদান রয়েছে। ১৯২১ সালে তিনি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিশ্বভারতী'র ডিন হলেন, অধ্যাপক অভিজিত। তিনি অনর্গল চীনা ভাষায় কথা বলতে পারেন। চীনা ভাষা নিয়ে সংবাদদাতাদের কাছে চীনের সঙ্গে ঠাকুরের দিনগুলো সম্পর্কে বলেন,
"১৯১৩ সালে ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর, চীনে তার অনেক ভক্ত তৈরি হয়। ১১ বছর পর ঠাকুর চীনে যান। অনেক চীনা লেখক ঠাকুরের ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়। যেমন স্যু চি মৌ। চীনে ঠাকুরের বক্তব্যের আয়োজন করে চীনা লেখকদের সঙ্গে সম্পর্ক করে দেন তিনি। আর ঠাকুরের চীন সফরের প্রধান লক্ষ্য ছিল, চীন-ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময় চালু করা।"
অভিজিত বলেন, ঠাকুরের চীন সফরের পর চীন ও ভারতের স্কলাররা দু'পক্ষের সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চীন থেকে ভারতে ফেরার পর চীনা সংস্কৃতি নিয়ে ভারতে গবেষণা শুরু হয় যা চীন-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে অনেক অবদান রাখে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অধ্যাপক অভিজিত বলেন,
"ঠাকুর ভারতে ফেরার পর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ধারণা দেন। কিন্তু বিশ্বভারতী'র আগে তিনি একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেটি হলো, চীন-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সমিতি। আর ১৯৩৭ সালে তিনি এবং জনাব থান ইয়ুন সান যৌথভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন।"
অভিজিত মনে করেন, চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর হলো সাংস্কৃতিক বিনিময়। এটি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার একটি লক্ষ্য। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভারত সফরে বিশ্বভারতীকে 'শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি' পুরস্কার প্রদান করেন। অভিজিত বলেন, বিশ্বভারতী চীনের ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিনিময়মূলক একটি সহযোগিতা প্রকল্প চালু রেখেছে।
"২০১১ সালে আমরা সহযোগিতা প্রকল্প স্বাক্ষর করেছি। ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেখানে যান। আর প্রতি বছরে ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০জন ছাত্র-ছাত্রীও এখানে এসে ১০ দিন অবস্থান করে। অন্যদিকে আমাদের ২০ জন ছাত্রছাত্রীও প্রতি বছরে ইয়ুননানে গিয়ে পড়াশোনা করে।"
গত কয়েক বছরে, সারা বিশ্বে আরো বেশি মানুষ চীনা ভাষা শেখায় আগ্রহী হয়েছে। কিন্তু ভারতে চীনা ভাষার অনুরাগী বেশি নেই। বিশ্বভারতীতে মোট ১৩০ জন ছাত্রছাত্রী চীনা ভাষা, চীনের প্রাচীন ইতিহাস এবং চীনা সাহিত্য নিয়ে কোর্স করছে। ২৪ বছর বয়সী ভারতের ছেলে রামানুজ বিশ্বভারতীতে স্নাতকোত্তর কোর্স পড়ছে। ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলে সে। চীনের সুস্বাদু খাবার ও সংস্কৃতিতে তার অনেক আগ্রহ। তার একটি চীনা নামও আছে---ল্যাং ছিং। সে জানায়,
ডিন অভিজিত ব্যানার্জি
"চীনে যাওয়ার আগে, আমার মনে হয়েছিল চীন একটি রহস্যময় দেশ। কিন্তু দু'দেশের নেতাদের সফর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, চীনের প্রতি ভারতের মানুষের ধারণা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দু'দেশের উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ বাড়ায়, দু'দেশের জনগণের সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আমি মনে করি যে, চীন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল।"
অধ্যাপক অভিজিত বলেন, চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক বিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ বিনিময়ের ভিত্তি হলো দুই সরকারের ইতিবাচক চেষ্টা। 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রতিষ্ঠার কাজ ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নেওয়া হলো চীন ও ভারতের এক ও অভিন্ন ইস্যু। তিনি বলেন,
"আমি মনে করি, ভারতের উচিত চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' ধারণা উপলব্ধি করা, কারণ 'এক অঞ্চল, এক পথ', আমার মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বাড়বে।"
চীন ও ভারত বিশ্বের দু'টি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ, দু'টি দেশের লোকসংখ্যাও বেশি। প্রতিবেশী বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে, দু'দেশের উচিত সহযোগিতা জোরদার করে সারা বিশ্বের জনগণের কল্যাণে অবদান রাখা।
তিনি আরো বলেন,
"আমি আশা করি, চীন ও ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়াবে। যাতে এশিয়া, ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এমনকি সারা বিশ্বের জনগণের জন্য তা কল্যাণকর হয়।"