সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা শিক্ষা বিষয়ক বেশ কয়েকটি খবর শুনলেন। এখন শুনবেন পেইচিং কেমিক্যাল টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি সম্পর্কিত তথ্য।
বন্ধুরা, গত সপ্তাহের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানে আপনারা এ ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রুবেল মেহেদির সাক্ষাতকার শুনিয়েছি। আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের জন্য তুলে ধরবো এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত তথ্য।
পেইচিং কেমিক্যাল টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (বিইউসিটি) ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আগে এটি ছিলো পেইচিং কেমিক্যাল ইন্সটিটিউট। বর্তমানে তা চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম একটি।
১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে এ বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ৩টি বিভাগ ও ১২টি স্নাতক পর্যায়ের প্রধান বিষয় নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩১৫০ জন।
চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলাকালে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে পেইচিং ফাইবার ইন্সটিটিউটের সঙ্গে যুক্ত করে এতে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রধান বিষয় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে পুনরায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তি করা শুরু হয় এবং ১৯৭৮ সাল থেকে মাস্টার্স পর্যায়ের বিভিন্ন প্রধান বিষয় চালু করা হয়।
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের রাসায়নিক শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় বিইউসিটি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ, আইন বিভাগ, অর্থনীতি, সাহিত্য ও দর্শনসহ বিভিন্ন প্রধান বিষয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে।
তিনটি শাখা ক্যাম্পাস নিয়ে বিইউসিটি গঠিত। পূর্ব ক্যাম্পাস পেইচিংয়ের তৃতীয় রিং রোডের উত্তরাঞ্চলে, পশ্চিম ক্যাম্পাস পেইচিং জিজুইউয়ান পার্কের পশ্চিম দিকে এবং উত্তর ক্যাম্পাস পেইচিং উপকণ্ঠ এলাকার ছাংপিংতে অবস্থিত। প্রতিটি ক্যাম্পাসই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভীষণ আকর্ষণীয় জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।
বিইউসিটিতে মোট ১২টি ইন্সটিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৯২ জন শিক্ষক অত্যন্ত প্রজ্ঞার সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করে চলেছেন। তাদের মধ্যে অধ্যাপকের সংখ্যা ৭০১ জন, চীনের একাডেমিশিয়ানের সংখ্যা ৯ জন, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইয়াংজি নদী পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ১০ জন এবং চীনের চমত্কার যুব পুরস্কার বিজয়ী ১৭ জন।
এ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় মোট ১২টি শাখা একাডেমি স্থাপন করে ৪৮টি স্নাতক পর্যায়ের প্রধান বিষয় চালু করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়কে চীনের প্রথম পর্যায়ের প্রধান বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিমার কেমিস্ট্রি অ্যান্ড ফিজিক্স চীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান বিষয়।
২০০৭ সালে বিসিইউটি প্রথমবারের মতো চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে উদ্ভাবনী পরীক্ষা প্রকল্প চালু করতে শুরু করে।
২০১৪ সাল পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় ২০টিরও বেশি বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিসিইউটি নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থী বিনিময়, বিদেশে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ও বিদেশে ইন্টার্নশিপ করা এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাসহ নানান প্রকল্পে অংশ নিয়ে থাকে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর চৌ সিয়াও ছুয়ান ১৯৭৫ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অটোমেশন' বিষয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
মি. চৌ সিয়াও ছুয়ান ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইশিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বিসিইউটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি পেইচিং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি গবেষণাগারে চাকরি করা শুরু করেন।
এরপর তিনি মেশিনারি রিসার্স ইন্সটিটিউট অব পেইচিং, ইন্সটিটিউট অব অটোমেশনে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্প বিষয়ের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কার ও গবেষণাগারের উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি চীনের বৈদেশিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি চায়না ব্যাংকের উপ-গভর্নর ছিলেন।
১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপ-গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন এবং চীনের বৈদেশিক মুদ্রা প্রশাসনিক ব্যুরোর প্রধান ছিলেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি চীনের কনস্ট্রাকশন ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি চায়না সিকিউরিটিস রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নির্বাচিত হন এবং এ পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দ্বাদশ গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
মুরোং সিয়াও সিয়াও চীনের মূলভূভাগের একজন বিখ্যাত গায়িকা। ২০০১ সালে তিনি পেইচিং কেমিক্যাল টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ২০০৬ সালে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন।
২০০৯ সালে তিনি 'প্রেমের ব্যবসা' নামে একটি গান পরিবেশন করেন। এ গানের পর তিনি চীনে দারুণ জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হয়ে উঠেন।
১৯৮১ সালের ২৭ অক্টোবর তিনি চীনের আনহুই প্রদেশের আনছিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় অঞ্চলের হুয়াংমেই অপেরা সুর গাইতে শিখেছিলেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি আনছিং শহরের পক্ষ থেকে হুয়াংমেই অপেরা উত্সবে অংশ নেন এবং প্রথম শ্রেণির পুরস্কার লাভ করেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি হুয়াংমেই অপেরার বিশেষ স্কুলে ভর্তি হন এবং অপেরা গাওয়া শিখতে শুরু করেন। ২০ বছর বয়সে তিনি নিয়মিতভাবে গান গাইতে শুরু করেন।
মূলত ২০০১ সালে বিইউসিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি গান গাইতে শুরু করেন। তার প্রথম সংগীত অ্যালবাম 'আমাকে ভালোবাসি' বেশিষ্ট্যময় কণ্ঠের কারণে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
২০০৪ সালে তিনি 'নারীর স্বর্গ' নামে দ্বিতীয় সংগীত অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ২০০৫ সালে তিনি 'সুন্দর শেয়াল' নামে একটি গান প্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তিনি 'প্রেম ব্যবসা' নামে গানের মাধ্যমে সারা চীনে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এ গানের সুর ও কথা ভীষণ আকর্ষণীয়। এখন আমরা আপনাদের এ গানটি শোনোবো।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, মুরোং সিয়াও সিয়াও'র কণ্ঠে গান শোনার পর এখন আমরা আপনাদের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রুবেল মেহেদির গাওয়া একটি গান প্রচার করবো। রুবেল মেহেদি লেখাপড়ার পাশাপাশি ছুটির দিনগুলোতে বা অবসরে গান রচনা করেন।
বন্ধুরা, আর এ সুন্দর গানের মধ্য দিয়েই শেষ করছি আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানটি। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com
রেডিও'র মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে মিস করলে আমাদের বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn
এবার তাহলে বিদায়। আগামী সপ্তাহের একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান।(সুবর্ণা/টুটুল)