Web bengali.cri.cn   
সামুদ্রিক সিল্ক রোড সংলগ্ন অঞ্চলের রেল পরিবহন যন্ত্রপাতি উন্নয়ন জোরদার করবে সিআরআরসি
  2015-10-02 18:47:52  cri


সামুদ্রিক সিল্ক রোডের কথা উল্লেখ করলে, মিং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত নাবিক জেং হো অর্থাত্ হাজি মাহমুদ সামসুদ্দিনের সাত বার সমুদ্রযাত্রা, পাঁচ বার মালাক্কা সফরের গল্প বলতেই হয়। প্রাচীন সামুদ্রিক সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া বর্তমানে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে '২১ শতাব্দীর সামুদ্রিক সিল্ক রোড' নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারে পরিণত হয়েছে। চীনের রেলওয়ে কর্পোরেশন সিআরআরসি'র উত্পাদিত মোটরগাড়ি সামুদ্রিক সিল্ক রোডের পাশাপাশি মালয়েশিয়া পর্যন্ত যোগাযোগ বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের রেলপথের সাজ-সরঞ্জাম দেশের বাইরে যোগাযোগ ও উন্নয়নের কাজ করছে। তার অংশ হিসেবে চীনের সিআরআরসি মালয়েশিয়ায় আসিয়ান নির্মাণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, মালয়েশিয়া ভিত্তিক আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক সিল্ক রোড সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের রেল যোগাযোগ উন্নয়ন জোরদার করছে।

১৮ বছর বয়সী আদাওয়িয়াহ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে লেখাপড়া করছে। প্রতি সপ্তাহে সে ইন্টারসিটি রেলগাড়িতে করে স্কুল ও সেলাঙ্গরে অবস্থিত তার বাসায় যাতায়াত করে। গোলাপি রঙের বিশেষ বগিতে বসে তিনি বলেন,

নতুন ট্রেনটিতে বসে বেশ আরাম লাগে। গতিও আগের ট্রেনের চেয়ে অনেক দ্রুত। এ ছাড়া নারীদের জন্য বিশেষ বগি আছে। যা আমার জন্য অনেক নিরাপদ।

আদাওয়িয়াহ'র মুখে নতুন ট্রেন হলো সিআরআরসি'র জুজৌ বিদ্যুত্শক্তি চালিত রেল ইঞ্জিন লিমিটেড কোম্পানির ২০১০ সালে মালয়েশিয়ায় রপ্তানিরত ৩৮টি মিটারগেজ ইন্টারসিটি রেলগাড়ি। এটি কুয়ালালামপুরের সবচেয়ে ব্যস্ত দক্ষিণ-উত্তর লাইনে ব্যবহার করা হয়। প্রায় চারশ' কোটি ইউয়ান ব্যয়ে সিআরআরসি'র জুজৌ বিদ্যুত্শক্তি চালিত রেল ইঞ্জিন লিমিটেড কোম্পানির প্রকল্প মালয়েশিয়ান বাজারে প্রবেশের প্রথম পদক্ষেপ।

গত ৫ বছরে জুজৌ বিদ্যুত্শক্তি চালিত রেল ইঞ্জিন লিমিটেড কোম্পানি মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৫টি প্রকল্পে ৯৮টি ট্রেনের কাজের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি মালয়েশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশ দখল করেছে। দেশটির রেল পরিবহন যন্ত্রপাতি উন্নয়নের বৃহত্তম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে এ প্রকল্প। এতো কম সময়ে বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন সম্পর্কে সিআরআরসি (মালয়েশিয়া) রেল পরিবহন যন্ত্রপাতি লিমিটেড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং লু খে বলেন,

এর কারণ হলো, ২০১০ সালে আমাদের ৩৮টি রেল মোটর গাড়ি মালয়েশিয়ার বাজারে প্রবেশ করে সুষ্ঠুভাবে চালু হয়েছে। এ ছাড়া আমরা রক্ষণাবেক্ষণের সেবাও দিয়ে থাকি। কর্তৃপক্ষ আমাদের সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং আমাদের ওপর তাদের পুরোপুরি আস্থা আছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে মালয়েশিয়ার লাইট রেল লাইন ও ট্রাঙ্ক রেলওয়েসহ বিভিন্ন কাজ আমরা পেয়েছি।

চীনা রেল কর্তৃপক্ষের 'দেশের বাইরে' কাজের গতি দ্রুত বাড়ার পাশাপাশি সিআরআরসি'র জুজৌ বিদ্যুত্শক্তি চালিত রেল ইঞ্জিন লিমিটেড কোম্পানি তার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিনিময় করেছে ও স্থানীয় উন্নয়নে ব্যবহার করেছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সিআরআরসি (মালয়েশিয়া) রেল পরিবহন যন্ত্রপাতি লিমিটেড কোম্পানি (বা 'আসিয়ান উত্পাদন কেন্দ্র) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। ৪০ কোটি মালেশিয়ান রিঙ্গিত মূল্যের এ কোম্পানি বছরে ১শ'টি ট্রেন তৈরি এবং ১৫০টি ট্রেন আন-হুইলিং মেরামত কাজ, রেলপথ সরঞ্জাম উত্পাদন, ডিজেল লোকোমোটিভ, মেট্রোকার, মোটরট্রেন ইউনিট, ডিজেল গাড়ির গ্রুপ ও লাইট রেল যানবাহনসহ বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম উত্পাদন করতে পারে। ফলে মালয়েশিয়া আসিয়ানের প্রথম রেল পরিবহন যন্ত্রপাতি উত্পাদন ক্ষমতার দেশে পরিণত হয়েছে।

পেরাক অঙ্গরাজ্যের ছোট শহর বাটু গাজাহ'র সিআরআরসি আসিয়ান উত্পাদন কেন্দ্রে প্রবেশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়ে কয়েক মাস পার হয়েছে। পরিষ্কার ও প্রশস্ত যুগ্ম কার্যালয়ে প্রথম ৬টি উচ্চ গতির ট্রেনের বগি একত্রিকরণ ও ত্রুটি সংশোধের কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই অফলাইনে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা চালু করা হবে। রেলমোটর কোচের গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। এটা হলো বর্তমানে বিশ্বের মিটারগেজ রেলে সর্বোচ্চ গতি।

প্রযুক্তিগত বিনিময় ছাড়া সিআরআরসি'র আসিয়ান উত্পাদন কেন্দ্র প্রথম দিক থেকেই স্থানীয় লোকদের এ কাজে অংশগ্রহণ করানোর মৌলিক নীতিতে অবিচল রয়েছে। বর্তমানে ১৬৫ জন কর্মীর মধ্যে স্থানীয় লোকজনের হার ৯০ শতাংশ। মালয়েশিয়ান কর্মী মোহাম্মদ আশরাফ বি আবুদুল্লাহ কোম্পানিতে সাড়ে তিন বছর চাকরি করেছেন। বলা যায়, তিনি প্রবীণ কর্মী। ভাল পারফরমেন্সের কারণে কোম্পানি তাঁকে চীনে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পাঠায়। তিনি প্রযুক্তিবিদে হিসেবে ফিরে যান এবং প্রথম মিটারগেজ মোটর ট্রেন কোচের উত্পাদনে অংশ নেন। তিনি বলেছেন, ছোটবেলা থেকে ট্রেনের প্রতি তাঁর খুব আগ্রহ। মালয়েশিয়ার উত্পাদিত প্রথম মোটর ট্রেনের কাজে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বন্ধুরাও অনেক প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেন,

আমি গর্বিত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজেদের তৈরি প্রথম মোটর ট্রেনে বসবো। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হব।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলর উ জেং পিং বলেছেন, সিআরআরসি'র আসিয়ান উত্পাদন কেন্দ্রের উত্পাদন মূলত মালয়েশিয়া কেন্দ্রীক হয়েছে। একদিকে চীনে তৈরির সফলতা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে স্থানীয় কর্মী ও স্থানীয় শিল্প উত্পাদন দক্ষতার উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় কর আদায় ও কর্মসংস্থান এতে বাড়ানো যায়। উ জেং পিং বলেন,

সিআরআরসি'র আসিয়ান উত্পাদন কেন্দ্র চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ার নতুন হাই স্পিড ট্রেন, দক্ষিণাঞ্চলের রেলপথ বৈদ্যুতিক ডবল ট্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে। আংশিক গাড়ির উত্পাদন স্থানীয়করণ হয়েছে। ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত সেবা সরবরাহের জন্য এটি সুবিধাজনক। পাশাপাশি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে মালয়েশীয় রেল পথ প্রকল্পে প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা বাড়বে।

সিআরআরসি মালয়েশিয়া বাজারে প্রবেশের পর ৫ বছরে যথাক্রমে 'পণ্য, সেবা, পুঁজি, প্রযুক্তি'র বহুমাত্রিক উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে। ওয়াং লু খে বলেছেন, ভবিষ্যতে সিআরআরসি মালয়েশিয়ার আসিয়ানের কেন্দ্রীয় অঞ্চল এবং মালাক্কা প্রণালীর গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ এলাকায় অবস্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসিয়ান বাজারে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন,

বর্তমানে আমরা মালয়েশিয়া বাজারে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এতে প্রতিবেশী দেশ যেমন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিনসে কাজের সুযোগ হয়েছে। এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক প্রভাব দিয়ে নিকটবর্তী দেশের স্বীকৃতি অর্জন করা যায়। অন্য দেশের কর্তৃপক্ষও ঘন ঘন মালয়েশিয়ায় পরিদর্শন করতে আসে। তারা এ ধরনের কাজে খুব আগ্রহ প্রকাশ করে।

প্রাচীন সামুদ্রিক সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া চীনের সঙ্গে ২১ শতাব্দীর সামুদ্রিক সিল্ক রোড' নির্মাণের গুরুত্বর্পূণ অংশীদার। নতুন কাঠামোয় 'এক অঞ্চল এক পথ'-এ অন্তর্ভুক্ত দেশ ও অঞ্চলে রেলপথ পরিবহণের বিরাট চাহিদা আছে। মালয়েশিয়ার জন্য '২১ শতাব্দীর সামুদ্রিক সিল্ক রোড'-এর উদ্যোগে নিঃসন্দেহে অভ্যন্তরীণ পরিবহণ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণ উন্নত করার সুষ্ঠু সুযোগ। দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী লিওউ থিয়ং লাই বলেন,

যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমার কাজ হলো ভালোভাবে রেলপথ ও জাহাজঘাটের নির্মাণ করা। এটা হলো মালয়েশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর উন্নয়ন। মালয়েশিয়া সার্বিকভাবে চীনের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের অংশীদার। কারণ উদ্যোগটি মালয়েশিয়ার বর্তমানের অর্থনৈতিক রূপান্তর ও সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। 'এক অঞ্চল, এক পথ' দু'দেশের উন্নয়নের জন্য অনেক কল্যাণকর।

এ সম্পর্কে উ জেং পিং বলেছেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগটি প্রধানত অভিন্ন আলোচনা, অভিন্ন নির্মাণ ও অভিন্ন বিনিময়ের ক্ষেত্রে তিন দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। দু'পক্ষ স্বেচ্ছায় পরস্পরের উপকার ও কল্যাণ সাধন করবে।

লিওউ থিয়ং লাই'র চোখে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের বাস্তবায়ন এশিয়াকে এগিয়ে নেবে। তিনি বলেন,

আশা করছি চীনের জন্য মালয়েশিয়া হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এবং আসিয়ানের জানালা।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040