0815muktarkotha
|
প্রিয় বন্ধুরা, সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৬০ বছর ধরে অঞ্চলটির উন্নয়নে ভূমিকা রেখে এসেছে প্রডাকশান অ্যান্ড কনস্ট্রাকশান কর্পোরেশান (পিসিসি)। প্রতিষ্ঠানটি পতিত জমিতে গড়ে তুলেছে পেইটুন শহর। চলুন ওই শহর থেকে ঘুরে আসি।
সিনচিয়াংয়ের সবচে' উত্তরে সীমান্ত এলাকায় ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পিসিসি। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে 'পেইটুন শহর' প্রতিষ্ঠা করে। পতিত জমিতে শহর গড়ে ওঠার কথা বিবৃত হয়েছে পেইটুন শহরের কমিউনিস্ট পার্টির কমিশনের স্থায়ী সদস্য ওয়েই কুওছিং-এর কবিতায়। তিনি তার কবিতায় লিখেছেন,
(রে ১)
'অর্ধেক বালি, অর্ধেক বাতাস। অর্ধেক সাধারণ নাগরিক, অর্ধেক সৈন্য। সৈন্যদের কত অশ্রু এ পতিত জমিতে মিশে আছে। এটি পিসিসি'র কর্মীদের অর্ধ-শতাব্দের ইতিহাস।'
একটি পতিত জমিতে গড়ে উঠেছে সুন্দর পেইটুন শহর। এ সুন্দর রূপান্তরের ঘটনা তরুণ-তরুণীদের উত্সাহিত করে। হুপেই প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফু হুইফিং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পেইটুন শহরে এসেছেন। তিনি বলেন,
(রে ২)
'আসার আগে ভেবেছিলাম, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কয়েক বছর কাজ করার পর নিজের জন্মস্থানে ফিরে যাব। কিন্তু পিসিসি'র চেতনা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁদের নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম আমার মত তরুণ-তরুণীদের এখানে দীর্ঘ সময় অবস্থানে উত্সাহ দিচ্ছে।'
বর্তমানে পেইটুন শহরে নতুন কৌশল কার্যকর করা হচ্ছে। শহরটি রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে ব্যাপকভাবে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ওরিঅন পেইটুন কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন কোম্পানির পরিচালক পার্ক হিওউন-সু জানান, তার কোম্পানিই প্রথম পেইটুন শিল্পনগরীতে ব্যবসা শুরু করে। তিনি মনে করেন, এখানে সুবিধা বেশি। তিনি বলেন,
(রে ৩)
'আমাদের উত্পাদিত অনেক খাবারের কাঁচামাল হ'ল আলু। আগে চীনের অন্য অঞ্চল থেকে আলু ক্রয় করতে হ'ত। এখন আমরা এখানে নিজেরাই আলু চাষ করছি। সিনচিয়াংয়ের আবহাওয়া আলু চাষের উপযোগী। এ ছাড়া, পেইটুন শহরের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা যথেষ্ট সহযোগিতাও পাচ্ছি।'
পেইটুনের কৃষিখাতের উন্নয়নে হেলংচিয়াং প্রদেশের অবদান উল্লেখযোগ্য। প্রদেশটি এখানে কয়েক শ' গ্রিন হাউস নির্মাণ করে সেখানে সবজি ও ফুল উত্পাদন করছে, যা স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা মেটায়। এতে এতদঞ্চলের প্রায় ৫ শত পরিবারের বার্ষিক আয় কমপক্ষে ৫০ হাজার ইউয়ান করে বেড়েছে। হেলংচিয়াং প্রদেশের কৃষিবাণিজ্য গ্রুপের কর্মকর্তা লি ফেংবো বলেন,
(রে ৪)
'আমরা ৬০ লাখ ইউয়ান রেনমিনপি ব্যয়ে একশ কোল্ডশেড নির্মাণ করেছি। এরপর আমাদের মুদানচিয়াং ৮৫৬ নম্বর কৃষি খামার এখানে ৫০ টনেরও বেশি চারাগাছ সরবরাহ করেছে। আমরা স্থানীয় নাগরিকদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশলও শিখিয়েছি। এর মাধ্যমে স্থানীয় নাগরিকদের বার্ষিক আয় বাড়ছে।'
গান
প্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছিলেন সিনচিয়াংয়ের পেইটুন শহরের ওপর একটি প্রতিবেদন। এখন আপনাদের চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়ার পালা।
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার মোঃ উজজল হোসেন তার ইমেলে লিখেছেন, সুপ্রিয় মুক্তা আপু, শুরুতে রইল প্রীতি ও শুভেচ্ছে। আশা করি আল্লাহর রহমতে আপনি ও CRIএর সকলকেই বেশ ভাল আছেন। আমার একটি প্রশ্ন আছে। প্রশ্নটি হচ্ছে: চীনের সবচে' বড় বাত্সরিক অনুষ্ঠানের নাম কী? তা কোন সময় পালিত হয়? কী ধরনের অনুষ্ঠান?
বন্ধু মোঃ উজজল হোসেন, আপনাকে নিয়মিত ইমেল লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি এখন আপনার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। চীনা মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচে' বড় বাত্সরিক উত্সব হল 'বসন্ত উত্সব'। তাই প্রতি বছর বসন্ত উত্সবে চীনা কেন্দ্রীয় টেলিভিশন একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত্ অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা পারফর্ম করেন। আর বসন্ত উত্সব যেহেতু চান্দ্রপঞ্জিকা অনুসারে পালিত হয়, তাই এর সুনির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বসন্ত উত্সব পালিত হয়েছিল। আচ্ছা, আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশের যশোর জেলার সুর-সংলাপ রেডিও ক্লাবের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শারমিন হক তার ইমেলে লিখেছেন, আপনাদের প্রচারিত প্রতিটি অনুষ্ঠান আমাদের খুবই ভাল লাগছে। আমরা নিয়মিত আপনাদের অনুষ্ঠান শুনছি। তবে অনুষ্ঠানে গান প্রচারের সময় তুলনামূলকভাবে বেশি। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে প্রতিদিন একই হারে গান প্রচার না-করে সে সময়ে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করলে শ্রোতারা বেশি আকৃষ্ট হবে। চীনের মানুষদের সফলতার পিছনের ইতিহাস, তাদের সংগ্রাম, অধ্যাবসায়, সততা, পরিশ্রম ইত্যাদি তুলে ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠান প্রচার করলে তা শ্রোতাদের নিকট অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এ ছাড়া, চীনা রূপকথার গল্প নিয়ে আগের মতো অনুষ্ঠান প্রচার করার অনুরোধ রইল। এ রূপকথার গল্প আমাদের নতুন প্রজন্মের ক্ষুদে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে শ্রোতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বর্তমানে মুক্তার কথা, হালশৈলী, আলো-ছায়া, এশিয়া টুডে, স্বাস্হ্য ও জীবন, দৃষ্টির সীমানায়, পূবের জানালার মত অনুষ্ঠান আমাদের খুবই ভাল লাগছে। তবে 'বিশ্ব সংবাদে' আমরা তেমন তেজীভাব লক্ষ্য করতে পারছি না। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই। গত কিছুদিন আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বলতে গেলে গোটা বাংলাদেশ প্রায় এক দিন এক রাত বিদ্যুত্হীন ছিল। তখন বেতারের সাহায্যেই আমরা বিশ্বের খবরাখবর রাখছিলাম। বিবিসি, ভয়েজ অব আমেরিকার মত রেডিও থেকে তাত্ক্ষণিক তাজা খবরে এ বিদ্যুত্সংকটের কারণ জানতে পারলেও, সিআরআই-এর বাংলা বিভাগের বুলেটিনে এ সম্পর্কিত কোনো খবরই ছিল না। এমনি সব তাজা খবর আমরা সিআরআই বাংলার বুলেটিনে প্রায়ই পরেরদিন পেয়ে থাকি যখন আমাদের সে খবরের আর চাহিদা থাকে না। তাই আমাদের পরামর্শ হল, অন্তত বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া খবরাখবর তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আচ্ছা, বন্ধু শারমিন হক, আপনাকে মতামত দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আপনার পরামর্শ আমাদের অনুষ্ঠানকে আরো আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করবে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আমরা এখন দক্ষিণ এশিয়ার ওপর আলাদা একটি বুলেটিন প্রতিদিন প্রচার করছি। এ বুলেটিনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তাজা খবর থাকে। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। আশা করি, আপনি নিয়মিত আমাদের ইমেল লিখবেন এবং এ ধরনের পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবেন।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার সি আর আই ফ্রেন্ডস ক্লাবের কানন রানী টিকাদার তার ইমেলে লিখেছেন, মুক্তা দিদি অবশ্যই আমি আপনাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে নিয়মিত মতামত পাঠাচ্ছি, ভবিষ্যতেও পাঠাব। তবে মনে রাখবেন, আমরা যারা নিয়মিত শ্রোতা আছি তারা লিখে উত্তর না পেলে খুব কস্ট হয় তাই লিখতে আর শেষে ইচ্ছা হয় না। দৃষ্টির সীমানায় আসরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে দারুণ আকর্ষণীয় প্রতিবেদনগুলি খুবই ভালো লাগছে। 'স্বাস্থ্য ও জীবন' আসরে সুস্থ থাকার জন্য খুবই উপকারী টিপসগুলিও আমাদের উপকারে আসছে। চীনা ভাষা শিক্ষার আসরটি শুনেও ফল পাচ্ছি। মোটকথা দারুণ উপভোগ করছি সিআরআই-এর বাংলা অনুষ্ঠানের সকল পরিবেশনাগুলি।
বন্ধু কানন রানী টিকাদার, আমরা সব শ্রোতার চিঠির উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। আপনার চিঠিও আমাদের অনুষ্ঠানে বলতে গেলে নিয়মিতই পড়া হয়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার নিউ হরাইজন রেডিও লিসনার্স ক্লাবের সম্পাদক রবিশংকর বসু তার ইমেলে লিখেছেন, গত ২রা অগাস্ট, ২০১৫, রবিবার 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে ওয়াং হাইমানের (ঊর্মি) পরিবেশনায় বিশ্বের ৫ জন শতায়ু ব্যক্তির দীর্ঘজীবন লাভের রহস্য নিয়ে নিয়ে আলোচনা আমার খুবই ভালো লেগেছে। মার্কিন চিত্রশিল্পী আন্না মেরি রবার্টসন মোজেসের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। তিনি যথার্থই বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন বাঁচতে চান, তাদের উচিত নিজেকে সবসময় তরুণ ভাবা এবং নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখা। আমি ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাতার সঙ্গেও পুরোপুরি একমত। এটা ঠিক যে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য চাই পরিকল্পিত জীবনযাপন। এ ছাড়াও 'টাইটানিক' মুভিতে বৃদ্ধা রোজের চরিত্রে অভিনয়কারী গ্লোরিয়া স্টুয়ার্ট, মার্কিন কৌতুকাভিনেতা জর্জ বার্ণস্ ও লেসলি টাউনেসের দীর্ঘায়ু লাভের পরামর্শগুলি সব শ্রোতার জন্যই ফলদায়ক বলেই আমি মনে করি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়:
"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে
মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই
এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।"
এই কবিতায় বিশ্বজীবনের কাছে ক্ষুদ্র-জীবনের এই আত্মনিবেদন প্রকাশ পেয়েছিল। বেঁচে থাকতে কে-না চায়? এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় কেউই চায় না পরপারে পাড়ি জমাতে। আপনাদের ধন্যবাদ দীর্ঘজীবন লাভের গোপন রহস্য নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
বন্ধু রবিশংকর বসু, আপনাকে নিয়মিত মতামত দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি স্বাস্থ্য ও জীবন অনুষ্ঠানের প্রযোজককে আপনার প্রশংসার কথা জানিয়ে দিয়েছি। আশা করি এ প্রশংসা অনুষ্ঠানটিকে সুন্দর করে সাজাতে তাকে উত্সাহিত করবে।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে।
আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/আলিম)