0913jiankang
|
চোখ প্রাণীর আলোক-সংবেদনশীল অঙ্গ ও দর্শনেন্দ্রীয়। প্রাণিজগতের সবচেয়ে সরল চোখ কেবল আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির পার্থক্য করতে পারে। উন্নত প্রাণীদের অপেক্ষাকৃত জটিল গঠনের চোখগুলো দিয়ে আকৃতি ও বর্ণ পৃথক করা যায়। অনেক প্রাণীর, যাদের মধ্যে মানুষ অন্যতম, দুই চোখ একই তলে অবস্থিত এবং একটি মাত্র ত্রিমাত্রিক "দৃশ্য" গঠন করে। আবার অনেক প্রাণীর দুই চোখ দুইটি ভিন্ন তলে অবস্থিত ও দুইটি পৃথক দৃশ্য তৈরি করে, যেমন খরগোশের চোখ।
চোখের অনেকগুলো উপাঙ্গ থাকে। এখানে সংক্ষেপে সেগুলোর একটু বর্ণনা দিই।
স্ক্লেরা (sclera): এটা চোখের আচ্ছাদনকারী সাদা অংশ। এটা চোখে বহীরাবরকের পেছনের দিকের ৫/৬ অংশ স্থান জুড়ে অবস্থিত। এটা এবং ভিতরের তরল পদার্থগুলো (অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার) মিলে চোখের সূক্ষ্ম অংশগুলোকে রক্ষা করে। এটি সাদা ও অস্বচ্ছ।
কর্নিয়া (cornea): এটা গম্ভুজ আকারের স্বচ্ছ পর্দা যা চোখের সামনের অংশ ঢেকে রাখে। এটি চোখে বহীরাবরকের সামনের দিকের ১/৬ অংশ স্থান জুড়ে অবস্থিত। এটা স্বচ্ছ, কারণ এতে কোন রক্তজালিকা নেই। চোখ প্রতিস্থাপন (eye transplant) বলতে আসলে কর্নিয়ার প্রতিস্থাপন বুঝায়।
অ্যাকুয়াস হিউমার (aqueous humor): এটা পানির মত তরল পদার্থ যা সিলিয়ারি বডি থেকে উৎপন্ন হয়। চোখের সামনের অংশ (লেন্স এবং কর্নিয়ার মধ্যবর্তী অংশ) এই তরলে পূর্ণ থাকে।
আইরিশ (iris): এটা চেখের রঙিন অংশ, যা অনেকটা আংটির মত। এটা বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন- বাদামি, সবুজ, নীল ইত্যাদি। আলোর তীব্রতার উপর নির্ভর করে আইরিশ সংকোচিত বা প্রসারিত হয়। এতে পিউপিলের আকার পরিবর্তিত হয় এবং লেন্স ও রেটিনায় আপতিত আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
পিউপিল (pupil): এটা আইরিশের মাঝের খোলা অংশ, যেখান দিয়ে আলো লেন্সে প্রবেশ করে। এটার আকার আইরিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
লেন্স (lens): রেটিনার উপর আলোক রশ্মি কেন্দ্রীভূত করে। এতে রক্তের প্রবাহ নেই। এর আকার সিলীয় পেশী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি ক্রিস্টালাইন প্রোটিন দিয়ে তৈরি।
ভিট্রিয়াস হিউমার (vitreous humor): এটা জেলির মত পদার্থ, যা চোখের বেশিরভাগ অংশ পূর্ণ করে রাখে (লেন্সের পিছন থেকে রেটিনা পর্যন্ত)।
কোরয়েড (choroid): এটা স্ক্লেরা ও রেটিনার মধ্যবর্তী রক্তজালিকার স্তর। এটা রেটিনাতে রক্ত সরবরাহ করে এবং রেটিনা হতে আগত অতিরিক্ত আলো শোষণ করে নেয়।
রেটিনা (retina): রেটিনা চোখের আলোক সংবেদী অংশ। এটা আলোকরশ্মিকে তড়িৎ সংকেতে (electrical signal) রূপান্তর করে দর্শন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। রেটিনায় দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ (photoreceptor) থাকে। এগুলো হচ্ছে– রডকোষ (rod) এবং কোন্কোষ (cone)। রডকোষ আবছা/মৃদু আলোতে দেখতে সাহা্য্য করে, আর কোন্কোষ স্বাভাবিক/উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে। কোন্কোষ থাকায় আমরা বিভিন্ন রং চিনতে পারি এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের রঙিন বস্তু দর্শনে কোন্কোষগুলো দায়ী।
ফোভিয়া (fovea): রেটিনার মাঝামাঝি এবং অন্ধবিন্দুর কাছাকাছি একটি খাঁজ দেখা যায়। এটাই ফোভিয়া। এখানে প্রচুর কোন্কোষ থাকে কিন্তু কোন রডকোষ থাকে না। আমাদের দর্শনানুভূতির বেশিরভাগই এর উপর নির্ভর করে।
অন্ধবিন্দু (optic disk/ blind spot): এটি দর্শন স্নায়ুর প্রান্তবিন্দু। এখানে কোন আলোকসংবেদী কোষ (রড ও কোন্) থাকে না।
দর্শন স্নায়ু (optic nerve): এটা মানুষের দ্বিতীয় করোটিক স্নায়ু (cranial nerve)। এর মাধ্যমে চোখ থেকে আলোকসংবেদ মস্তিষ্কে পৌছায়।
যখনই বাইরে বের হবেন, সানগ্লাস পড়ে বের হোন, বিশেষ করে রোদে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্ষু বিভাগের অধ্যাপক বলেছেন, সূর্যের অতিবেগুনি আলোকরশ্মির সংস্পর্শে এলে আমাদের চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে সাবধান না-হলে আমাদের চোখে সহজে ছানি পড়তে পারে বা আমরা চোখের অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত হতে পারি। সুতরাং, বাইরে গেলে সানগ্লাস পড়ার চেষ্টা করুন।
ঘুমানোর আগে মুখ ভাল করে ধুয়ে নিন।
এই অভ্যাস নিয়ে আগের অনুষ্ঠানে আমরা আলোচনা করেছি। সারাদিন কাজ করার পর, আমাদের মুখের ত্বকে ধুলি ও ব্যাকটেরিয়াল অবশেষ জমে থাকতে পারে। শোয়ার আগে মুখ না-ধুলে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি চোখও রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আরেকটি কথা, চোখকে ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে মেয়েদের উচিত মাস্কারাসহ মুখের বিভিন্ন প্রশাধন সামগ্রী প্রতি তিন মাস অন্তর পরিবর্তন করা। অর্থাত পুরনোটা বাদ দিয়ে নতুন প্রশাধন সামগ্রী ব্যবহার করা।
হাত দিয়ে চোখ কচলানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। বাতাসে জলীয় কণার অভাব দেখা দিলে চোখেও পানির অভাব হতে পারে। তখন আমাদের চোখে চুলকানি হয়। অনেকেই আমারা তখন হাত দিয়ে চোখ কচলাই। এটা ভাল অভ্যাস নয়। প্রয়োজনে ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন এবং ঘরের আর্দ্রতা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রাখুন। চোখ চুলকালে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটাও দিতে পারেন।
চোখের ছোট ছোট সমস্যাকে অবহেলা করবেন না।
অনেক সময় আমরা চোখের ছোটখাটো সমস্যাকে পাত্তা দিই না। মনে করি, ঠিক হয়ে যাবে। চিকিত্সকরা এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, চোখের যে-কোনো ছোটখাট অস্বাভাবিকতাও উপেক্ষা করা উচিত নয়। চোখে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই চিকিত্সকরে শরণাপন্ন হতে হবে। তা ছাড়া, এমনিতেও বছরে অন্তত দু'বার চোখ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা।
কারণে-অকারণে চোখে ড্রপস্ ব্যবহার করা পরিত্যাগ করুন। বাজারে এমনকিছু আপাত নির্দোষ চোখের ড্রপস্ পাওয়া যায় যেগুলো চোখে দিলে আরাম বোধ হয় এবং ছোটখাট সমস্যা দূর হয়ে যায় বলে মনে হয়। তাই আমরা অনেকেই অতিরিক্ত এ ধরনের ড্রপস্ ব্যবহার করি। এটা ঠিক নয়। চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া চোখে কোনো ধরনের ড্রপস্ ব্যবহার করবেন না।
কম্পিউটারের পর্দায় পলকহীন দৃষ্টি ফেলবেন না। হ্যা, অনেকেই কম্পিটারের দিকে পলকহীন দৃষ্টি ফেলেন। অথচ স্বাভাবিকভাবে আমাদের উচিত মিনিটে অন্তত ১২ থেকে ১৫ বার চোখের পলক ফেলা। যদি আপনি লম্বা সময় ধরে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তবে আপনার চোখের পলকের সংখ্যা কমে যাবে। এটা চোখের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং, কম্পিউটার , টেলিভিশন বা মোবাইলফোনের স্ক্রিনের দিকে এক টানা তাকিয়ে থাকবেন না। মাঝে মাঝে দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরান। ভাল হয় যদি দূরের আকাশের দিকে বা সবুজ কোনোকিছুর দিকে মাঝেমাঝে তাকান।
গোসলের সময় কন্টাক্ট লেন্স খুলে রাখুন। অনেকে কন্টাক্ট লেন্স না-খুলেই গোসলে ঢুকে যান। স্বাধারণত তারা লেন্স খুলে রাখার ঝামেলা পোহাতে চান বা বেখেয়ালে এটা করেন। এ অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। আরেকটি কথা, গ্রীষ্মকালে ও বসন্তে যখন বাতাসের গতি বেশি থাকে, তখন কনটাক্ট লেন্স না-পড়ার বা কম পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চোখের বিশেষজ্ঞরা।
সাঁতারের সময় চোখে গগল পড়ে নিন। এতে আপনার চোখ নিরাপদ থাকবে। অনেকে পানির নিচে ডুব দিয়ে চোখ খুলে তাকান। এটা চোখের জন্য ভাল নয়। এতে পানির ময়লা চোখে প্রবেশ করে চোখের ক্ষতি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে গগল ব্যবহার করা নিরাপদ।
ধূমপান ত্যাগ করুন। হ্যা, আগের অনুষ্ঠানগুোতে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আমরা তো অনেক আলোচনা করেছি। ধূমপান চোখেরও ক্ষতি করে থাকে। প্রতিদিন যারা গড়ে ২০টি সিগারেট খেয়ে থাকেন, তাদের অধূমপায়ীদের তুলনায় ছানি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ। ধূমপায়ীদের চোখ অন্য অনেক ছোটভাট সমস্যায়ও পড়তে পারে।
সময়মতো চোখ পরীক্ষা করান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চোখের দৃশ্যমান কোনো সমস্যা না-থাকলেও আমাদের উচিত নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো। বছরে দু'বার বা অন্তত একবার চোক পরীক্ষা করানোর কথা বলেন তারা। বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা অনেক বেশি জরুরি।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)