Web bengali.cri.cn   
বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে চীনের যুদ্ধক্ষেত্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যুদ্ধক্ষেত্র
  2015-09-04 16:10:46  cri

গত ২ সেপ্টেম্বর ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণপত্র স্বাক্ষরের ৭০তম বার্ষিকী। পাশাপাশি চীনাদের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ ও বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধজয়ের ৭০তম বার্ষিকী। চীন ও গোটা বিশ্ব এ যুদ্ধজয় স্মরণ করার পাশাপাশি যুদ্ধে মানবজাতি ও সমাজের জন্য ডেকে আনা বিপর্যয় ও বেদনার স্মরণ করেছে, অতীত কর্ম পুনর্বিবেচনা করছে, যাতে ইতিহাসকে মনে রাখা এবং শান্তিকে মূল্যায়ন করা যায়। আজ আমরা বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে চীনা যুদ্ধক্ষেত্র ও দক্ষিণ-পূর্ব যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে কথা বলবো।

১৯৩১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাপান উত্তর-পূর্ব চীনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে। চীনা জনগণ আংশিক আগ্রাসন প্রতিরোধের মাধ্যমে বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই জাপান চীনের পেইপিং (বর্তমান পেইচিং)-এ 'মার্কো পোলো সেতু ঘটনা' দিয়ে সার্বিক চীনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন যুদ্ধ শুরু করে দেয়। এ ঘটনার পর চীনা জাতি জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধ শুরু করে।

চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণ ইন্সটিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের উপ-প্রধান জাং স্যুয়েই কাং মনে করেন, চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধ ছিল বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধের প্রধান অধ্যায়। চীনা যুদ্ধক্ষেত্রে জাপানি বাহিনীর প্রধান সেনাদের পরাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেখা গেছে, চীনা যুদ্ধক্ষেত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র ও প্যাসিফিক যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। চীনা যুদ্ধক্ষেত্রের জয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের জয় এবং পুরো প্যাসিফিক যুদ্ধজয়ে বিরাট সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমরা জানি, চীনের বিরোধী যুদ্ধ মাত্রা ছিল অভূতপূর্ব। আমাদের সেনা ও জনগণের হতাহতের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। সুতরাং বলা যায়, চীনের বিরোধী যুদ্ধ ছিল বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধক্ষেত্রের প্রধান অবলম্বন এবং জাপানের প্রধান সেনা শক্তিকে তা প্রতিরোধ করে রেখেছে। চীনা যুদ্ধক্ষেত্রের জয়, দক্ষিণ-পূর্ব যুদ্ধক্ষেত্র ও প্যাসিফিক যুদ্ধক্ষেত্রের সার্বিক জয় দ্রুততর করেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানি বাহিনী উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ, পশ্চিমাঞ্চলে আক্রমণ ও দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণের কৌশল তৈরি করেছে। উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ ছিল চীনকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূরপ্রাচ্য আক্রমণ ও দখল করা। পশ্চিমাঞ্চলে আক্রমণ ছিল ভারত ও ভারত মহাসাগর আক্রমণ করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, জার্মানি ও ইতালির সঙ্গে একত্রিত হয়ে ব্রিটেনকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করা, তারপর যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করা। জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশ। লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চল দখল করে সেখানকার কৌশলগত প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণে আনা। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপানি বাহিনী প্যাসিফিক অঞ্চলে যুদ্ধ চালিয়েছে এবং ছয় মাসেরও কম সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দখল করেছে। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ব্যর্থ হওয়ায় চীনা যুদ্ধক্ষেত্র অধিকাংশ জাপানি স্থলবাহিনী ও কিছু সংখ্যক নৌ সেনাকে বন্দি করে। ফলে জাপানি বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চল আক্রমণের পরিকল্পনা পিছিয়ে যায় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জার্মানি ও জাপানের সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম দু'টো দিকে যুদ্ধ মোকাবিলার গুরুতর হুমকি এড়ানো যায়।

১৯৪২ সালের মার্চে জাপানি বাহিনী মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন দখল করে নেয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিভিন্ন মিত্র দেশের কৌশলগত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য মিত্র বাহিনীর অনুরোধে বিরোধীরা খুব কঠিন অবস্থানে ছিল। কিন্তু চীন মিয়ানমারের যুদ্ধে দু'বার তার বাহিনী পাঠিয়েছে এবং জাপানি বাহিনীর ওপর ভারি আঘাত হেনেছে। ১৯৪৩ সালের প্রথম দিকে প্যাসিফিক যুদ্ধক্ষেত্রে জাপানের বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রতিরক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ স্থলবাহিনী দরকার ছিল। তখন প্যাসিফিকে মার্কিন বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ এবং প্যাসিফিক যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চীনা গণমুক্তি ফৌজের সামরিক বিজ্ঞান একাডেমির বিশ্ব সামরিক গবেষণা বিভাগের গবেষক হো সিন ছেং বলেন, চীনা যুদ্ধাভিযান বাহিনীর মিয়ানমারে যুদ্ধ না চালালে, সেখানে ব্রিটিশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হতো। এ ছাড়া মিয়ানমারে মোতায়েন জাপানি বাহিনীর প্রধান একটি অংশ চীনের ইয়ুননানে এসে হামলা চালাতো এবং চীনকে পাল্টা আক্রমণকে মোকাবিলা করতে হতো। তাই এতে জাপানি বাহিনীর বড় পরাজয় হয়েছে।

হো সিনছেং মনে করেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চল জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানি ফ্যাসিবাদ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে জনসাধারণের বিদ্রোহ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে জাপানের আগ্রাসন আরো গুরুতর হবার কারণে অবশ্যই বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন অঞ্চলের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের পার্থক্য। সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ছিল সশস্ত্র যুদ্ধ। এসব সশস্ত্র যুদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, যেমন মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স ও ইন্দোনেশিয়ায় গেরিলাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এশীয় অঞ্চলে ফিলিপিন্সের গেরিলাযুদ্ধ তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। হো চি মিন শহর কেন্দ্রীক ভিয়েতনামে জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ মানুষের কাছে আরো বেশি সুপরিচিত।

চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমি সিএএসএস-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এবং বিশ্ব কৌশল গবেষণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমাজ ও সংস্কৃতি গবেষণা বিভাগের পরিচালক স্যুই লি পিং মনে করেন, ঠিক এ সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ থাকার কারণে বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জাপান ও জার্মানি প্রধান ফ্যাসিস্ট হিসেবে বড় আগ্রাসন শুরু করে।

এরপর ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট, জাপান বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করে। ২ সেপ্টেম্বর জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে পুরোপুরি জয় অর্জিত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে চীনের বিরাট অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, 'যদি চীন না থাকতো, যদি চীন ব্যর্থ হতো, তাহলে কল্পনা করুন ! কতো বেশি জাপানি সেনা অন্যান্য ক্ষেত্রে গিয়ে যুদ্ধ করতো ? তারা অস্ট্রেলিয়া জয় করতো, ভারত জয় করতো......তারা অনায়াসে এসব জায়গা দখল করে সোজা মধ্যপ্রাচ্যে চলে যেতো।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040