0802jiankang
|
প্রথমেই যার দীর্ঘ জীবন লাভের রহস্য নিয়ে কথা বলবো তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্না মেরি রবার্টসন মোজেস। ইনি তার ডাকনাম 'গ্রান্ডমা মোজেস' নামেই বিখ্যাত। এই বিখ্যাত মার্কিন চিত্রশিল্পী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। হ্যা, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০১ বছর।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ৭৮ বছর বয়সে তিনি ছবি আঁকা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাদুঘরে তাঁর আঁকা ছবিগুলো শোভা পাচ্ছে। বেঁচে থাকতে তিনি বলেছিলেন, ছবি আঁকা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেকেই ব্যস্ত রাখা। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন তিনি। বলতেন, এতে তার মন তরুণ থাকে। জীবন সম্পর্কে এই দৃষ্টিভঙ্গি তাকে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়তা করেছে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।
অথচ আমাদের অনেকের কথা ভাবুন। তারা একটু বয়স হলেই নেতিয়ে পড়েন। বলেন, 'বয়স হয়েছে। আর কয়দিন।' আবার কেউ কেউ বলেন, 'এ কাজ আমার দ্বারা হবে না। এটা যুবক-যুবতীদের কাজ।' আসলে বয়সের অজুহাতে কোনো কাজ না-করার মানসিকতা আমাদের থাকা উচিত নয়। যারা দীর্ঘদিন বাঁচতে চান, তাদের উচিত নিজেকে সবসময় তরুণ ভাবা এবং নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখা।
পেইচিং প্রবীণ চিকিত্সা গবেষণালয়ের সাবেক প্রধান কাও ফাং খুন বলেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মরণশক্তি কমতে পারে। কিন্ত তার মানে এই নয় যে, বয়স হলে তারা লেখাপড়া বা অন্য কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করতে অক্ষম। বরং সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত হলে তাদের মানসিক ও শারীরিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।
যে শতায়ু ব্যক্তির কথা বলবো তিনি খুবই বিখ্যাত একজন মানুষ। তিনি হলেন ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাতা। তিনি ১৯০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। 'রাণী এলিজাবেথের মাতা' গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনাকে মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
তিনি আরও বলেছেন, দেরিতে নয়, বরং জীবনের প্রথম দিক থেকেই স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে। সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য চাই পরিকল্পিত জীবনযাপন।
বিশেষজ্ঞরাও এ ব্যাপারে একমত। তারা বলেন, পরিকল্পিত জীবন ক্রনিক রোগ এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া, প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও জরুরি।
আপনি নিশ্চিয় জেমস্ ক্যামেরনের 'টাইটানিক' মুভিটি দেখেছেন? হ্যা, এতে বৃদ্ধা রোজের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন সেই গ্লোরিয়া স্টুয়ার্টও শত বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ১৯১০ সালের ৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন ২০১০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।
জীবনে কখনোই স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি গ্লোরিয়া। তার মতে এটাই তাকে দীর্ঘজীবন দান করেছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একজন বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী হবার। কিন্তু তরুণ বয়সে তিনি তার সেরা সময়ে ছিলেন না। সেরা সময়টির জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু বছর। ১৯৯৭ সালে ৮৭ বছর বয়সে তিনি বৃদ্ধা রোজের চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্ববিখ্যাত হন। শত বছর বয়সী রোজ ডাওসনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রের জন্য অ্যাকাডেমি এওয়ার্ড নমিনেশান পান।
এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, টাইটানিক মুভিতে তিনি তার শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষের ওপর এক জরিপ চালানো হয়েছিল। জরিপে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, নতুন কিছু পাওয়ার স্বপ্নে কাজ করে যান, তাদের হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। বিশেষজ্ঞরা জানান, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। লক্ষ্য ঠিক করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বিখ্যাত মার্কিন কৌতুকাভিনেতা জর্জ বার্ণস্ও শত বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ১৮৯৬ সালের ২০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালের ৯ মার্চ মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। তিনি তার স্মৃতিকথা 'কীভাবে ১০০ বছর বাঁচলাম' গ্রন্থে নিজের দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, দীর্ঘায়ু লাভের উপায় হচ্ছে মানসিক চাপ না-নেওয়া এবং প্রচুর হাঁটাহাটি করা।
গবেষণা থেকে জানা গেছে, মানবদেহের ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগ মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কিত। মানসিক চাপের প্রভাবে আমাদের রক্তচাপ বাড়ে, হৃতপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুততর হয়। এক্ষেত্রে সাবধান না-হলে হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগ ও রক্তনালীর বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। অতএব মানসিক চাপমুক্ত থাকুন, প্রচুর হাঁটুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।
আরেক মার্কিন বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা লেসলি টাউনেস 'বব' হোপ-ও শতায়ু হয়েছিলেন। তিনি ১৯০৩ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই মারা যান। তিনিও বলেছেন, নিয়মিত হাঁটাহাঁটিই তার দীর্ঘজীবন লাভের গোপন রহস্য। তিনি বলেন, নিজের বয়স আসলে গোপন রাখা উচিত।
বেঁচে থাকতে তিনি স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সবসময় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩.২ কিলোমিটার হাঁটতেন। তিনি জানান, তাঁর দাদাও ৯৬ বছর বয়সে নিয়মিত অন্তত ৩.২ কিলোমিটার করে হাঁটতেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজের বয়স ভুলে যাওয়া শুধু একটি কৌতুক নয়, সুস্থ থাকার একটি ভাল উপায়ও বটে। আর নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বার্ধক্যকে সহজে কাছে আসতে দেয় না। ব্রিটেনের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, যারা সপ্তাহে তিন বার অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটাহাটি করেন, তাদের যে কোনো একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)