Web bengali.cri.cn   
নেপাল ভূমিকম্পে চীনের সহায়তা
  2015-08-01 15:48:28  cri


সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন সুদূর পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'মুক্তার কথা'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু মুক্তা এবং আমি আলিমুল হক।

প্রিয় শ্রোতা, আপনারা জানেন সম্প্রতি নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভয়াবহ সে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই একের পর এক আরও ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশটিতে। এরই মধ্যে নেপালে চলছে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে পুনর্গঠনের কাজ। ভূমিকম্প দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং দুর্গতদের চিকিত্সাসেবাসহ প্রয়োজনীয় সেবা দিতে চীনের উদ্ধারকারী দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আসলে, চীনের উদ্ধারকারী দলই সবার আগে নেপালে পৌঁছায়। বন্ধুরা, আজকের শুরুতেই আমি নেপালে চীনা উদ্ধারকারী দল সম্পর্কে আপনাদের কিছু কথা বলবো।

২৪ এপ্রিল নেপালে যে ভূমিকম্প আঘাত হানে তার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৮.১। মাত্র দশ দিন পর দেশটিতে আবারও ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে এক কোটিই ভূমিকম্পে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় নিহত হয় সাড়ে আট সহস্রাধিক মানুষ; আহত হয় কুড়ি হাজারের বেশি। প্রতিবেশী নেপালের এ দুঃসময়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ায় চীন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তখন নেপালে উদ্ধারকারী দল গিয়েছে। কিন্ত সবার আগে নেপালিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় চীনা উদ্ধারকর্মীরা।

ভূমিকম্পের পর দুর্গত এলাকায় 'চীনা রেড ক্রস' ও 'চীনা বেসামরিক প্রশাসন সংস্থা: উদ্ধার' লিখিত ব্যানার সহজেই চোখে পড়ত। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ৭ মে পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন সংস্থা নেপালকে ৬ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি মূল্যের ৫৪৬ টন ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করেছে। পরে গত ২০ মে চীন সরকার নেপালকে আরো ৪০ টন ত্রাণসামগ্রী দান করে।

নেপালে চিকিত্সাসেবা দিয়েছে চীনের চিকিত্সকদল। তারা সেখানে সম্ভাব্য মহামারী প্রতিরোধেও কাজ করেছে। কাজ শেষে চীনের একাধিক ত্রাণ, চিকিত্সা ও উদ্ধারদল নেপাল ত্যাগ করেছে। গত ২৪ মে চীন সরকারের ৫৬ জন কর্মী নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় চিকিত্সকদল নেপাল থেকে স্বদেশে ফিরে আসে। এ দলের উপপরিচালক ও ছংছিং প্রাথমিক চিকিত্সা কেন্দ্রের উপপরিচালক দু দিংইউয়ান বললেন,

(রে ১)

'চিকিত্সকদলটি দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেছে। তাঁদের কাজ ও প্রচেষ্টা নেপালি দুর্গতদের মুগ্ধ করেছে। এর মাধ্যমে দু'দেশের জনগণের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। এ দলটি নেপালে মোট ৭৩৭ জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিত্সাসেবা দিয়েছে এবং ১২৮ জনকে হাসপাতালে চিকিত্সা দিয়েছে। চিকিত্সকদলটি বেশ ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করেছে। চীনের সরকারি চিকিত্সকদল আন্তর্জাতিক উদ্ধার তত্পরতায় চীনের মানবতাবাদের প্রতীক। নেপাল ও চীনের নেতৃবৃন্দ এ দলের প্রশংসা করে।'

একই দিন ছেংদু সামরিক অঞ্চলের উদ্ধারকারী দল নেপালে ২০ দিনব্যাপী উদ্ধারকাজ পরিচালনা শেষে দেশে ফিরে আসে। আর চীনা সরকারি চিকিত্সক ও মহামারী-প্রতিরোধদল মে মাসের শেষ দিকে চীনে ফিরে আসে। নেপালের মহামারী পরিস্থিতি সম্পর্কে দলটির প্রধান লু লিন বলেন,

(রে ২)

'দ্বিতীয় ভূমিকম্পের পর নেপালে মহামারী প্রতিরোধের কাজ আরও কঠিন হয়ে যায়। এ ধরণের কঠিন পরিস্থিতি এর আগে আমরা মোকাবিলা করিনি। নেপালে মহামারী প্রতিরোধের কাজ দীর্ঘ সময় ধরে চালাতে হবে।'

তিনি জানান, চীনা চিকিত্সক ও মহামারী-নিরোধদল প্রায় ১ হাজার নেপালিকে মহামারী প্রতিরোধের কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও, দেশের বেসরকারি উদ্ধারকারী দলও নেপালে ত্রাণ ও উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নেয়। পেইচিং লিয়ানহুয়াং স্বেচ্ছাসেবক সমিতির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছাই ফেং গুরুতর দুর্গত এলাকার তিন গ্রামের সাত শতাধিক বাড়িতে ১২০ টন চাল, ৭০০ কেজি লবন ও ৮০০ কেজি ভোজ্যতেল বিতরণ করেন। এর মধ্যে দু'টি গ্রামের ৪৫০০ জন মানুষের পানীয় জলের অভাব মেটাতে তিনি ১০ কিলোমিটার পানির পাইপ এবং পানি ধরে রাখার সরঞ্জাম ক্রয় করেন।

তিনি জানা, ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণের সময় দুর্গত এলাকায় তাবুর সংকট তার চোখে পড়ে। এসময় তিনি এ সমস্যা সমাধানের একটি উপায় বের করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

(রে ৩)

'ভূমিকম্পের পর নেপালের সবগুলো দুর্গত এলাকায় তাবুর অভাব দেখা দেয়। কিন্তু পরিবহন-ব্যবস্থা ভালো না-হওয়ায় অনেক দুর্গম এলাকায় তাবু সরবরাহ করা কঠিন হয় যায়। এ অবস্থায় চীনা স্বেচ্ছাসেবকরা কাছাকাছি পাহাড় থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে দুর্গতদের জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন। আমরা লোহার শিট কিনে সেসব ঘরের ছাদ তৈরি করি। একটি ঘরের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৪শ ইউয়ান রেনমিনপির লোহার শীট। এ ধরনের ঘর আসলে তাবুর চেয়েও ভাল। একেকটি ঘরের আয়তন প্রায় ২০ বর্গমিটার।'

তিনি জানান গত ২২ মে পর্যন্ত তাঁর সমিতি দুই লক্ষাধিক ইউয়ান চাঁদা সংগ্রহ করে।

নেপালের পর্যটন শিল্পের আয় হল সারা দেশের জিডিপির ১০ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু এবারের ভূমিকম্পে ১২টি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস হয়েছে। এতে দেশটির পর্যটনশিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু চীনে মেয়ে পর্যটক ছেন ইয়াংজুন মনে করেন, এ আঘাত নেপালের পর্যটন খান ঠিকই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন,

(রে ৪)

'নেপালে যেসব পর্যটক আসেন তারা দেশটির সংস্কৃতি ও সভ্যতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। তবে, নেপালের শান্ত পরিবেশ আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে, যা ভূমিকম্প কেড়ে নিতে পারেনি।'

গান

বন্ধুরা, শুনছিলেন নেপাল ভূমিকম্পে চীনের সহায়তা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন।

এবার শুনবো আপনাদের কথা। আমাদের বাংলাদেশি মনিটর দিদারুল ইকবাল সম্প্রতি শ্রোতাদের একটি মোবাইল কনফারেন্স আয়োজন করেছিল। এখন কনফারেন্সে অংশ নেওয়া শ্রোতাদের কণ্ঠে সরাসরি তাদের মতামত শুনবো আমরা।

....

আচ্ছা, প্রিয় বন্ধুরা, আমরা ভবিষ্যতেও নিয়মিত এ ধরণের মোবাইল কনফারেন্স আয়োজন করবো, যাতে আরো বেশি শ্রোতার মতামত সংগ্রহ করা যায়। যদি আপনারা আমাদের মোবাইল কনফারেন্সে অংশ নিতে চান তাহলে আমাদের মনিটর দিদারুল ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040