Web bengali.cri.cn   
বিশ্বে ইরানের চলচ্চিত্রের বিস্তার
  2015-07-30 16:30:54  cri



বাইরে থেকে গত কয়েক বছরের ইরানের পরিস্থিতির আলোকে বলা যায়, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক তেমন ভালো নয়। রাজনৈতিক সংগ্রাম ইরানের বৈদেশিক সম্পর্কের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। তবে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন অবরোধ আরোপের পরও দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করেছে এবং করে চলেছে ।

২০১২ সালে অস্কার পুরস্কারে ইরানের 'এ সেপারেশন' চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার পুরস্কার লাভ করে। আসলে অস্কার পুরস্কার ছাড়াও, এ চলচ্চিত্র আরো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে।

ইরানের চলচ্চিত্র হিসেবে 'এ সেপারেশন' চলচ্চিত্রটি বিশ্বের বিশেষ করে অস্কার পুরস্কারসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কার পেয়েছে। এটিকে একটি বিস্ময় বলা যেতে পারে। আসলে 'এ সেপারেশন' চলচ্চিত্র বিশ্বে ইরানের চলচ্চিত্রের প্রভাবশালী শক্তির সংক্ষিপ্তসার।

গত শতাব্দীর ৮০'র দশক থেকে ইরানের চলচ্চিত্র ধাপে ধাপে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি বারবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করে।

হয়তো এ বিষয়ে কেউ কেউ বলতে পারেন, আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনকারী ইরানের চলচ্চিত্রগুলো বিশেষভাবে পশ্চিমা মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে নির্মাণ করা হয়। আসলে এ ধরনের কথা ঠিক নয়। 'এ সেপারেশন' চলচ্চিত্রকে একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ইরানের ভিতরে এ চলচ্চিত্র অনেক জনপ্রিয়।

১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর রাজনীতির ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশের সাথে ইরানের এধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান তার মনোভাব পরিবর্তন করার চেষ্টা শুরু করে। তাই বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী দেশটি নিজের বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিতে শুরু করে।

এসব কিছু বিবেচনায় রেখে ইরানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে মূল্যবোধ বিস্তারের যন্ত্র হিসেবে নির্ধারণ করে। সংস্কৃতি বিস্তারের মাধ্যমে ইরান প্রসঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর জানাশোনা ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এর ফলে রাজনীতির ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করা শুরু করে দেশটি।

বারবার পশ্চিমা দেশগুলোর স্বীকৃতি পাওয়া ইরানের চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করার সময় পশ্চিমের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক সংঘর্ষও এড়ানো যায় না। ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক মোহসেন মাখমালবাফের পরিচালিত 'কান্দাহার' চলচ্চিত্রে আফগানিস্তানের যুদ্ধ তুলে ধরা হয়। এতে প্রদর্শিত সন্ত্রাসদমনের যুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কিত হৃদয়বিদারক দৃশ্য পশ্চিমা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

ইরানের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামি অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল ও শিথিল সাংস্কৃতিক নীতিমালা জারি করেন। নীতিমালার দিক থেকে সংস্কৃতির বিস্তার প্রাণবন্ত উন্নয়নকে নিশ্চিত করে। এই সময় মাখমালবাফের নেতৃত্বে ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালকরা ঘন ঘন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে আবির্ভূত হন। তারা উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন শিল্পকর্ম দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তি তুলে ধরেন।

ইরানের সাংস্কৃতিক বিস্তার খুব সফল হওয়া সত্ত্বেও এটি হলো দেশটির কঠোর রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব দ্বারা সৃষ্ট একটি শিল্প। যেমন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে খুব জনপ্রিয় তরুণ ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক বাহমান ঘোবাদি ইরানের যুদ্ধ সম্পর্কিত 'এ টাইম অব ড্রাঙ্কেন হর্সেস' চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার পরিচালিত 'টার্টল্স ক্যান ফ্লাই' চলচ্চিত্রে কুর্দি জনগণের ইতিহাস ও বাস্তবতা একটি প্রেমের গল্পের সঙ্গে সংমিশ্রণ করা হয়। অস্কার পুরস্কার বিজয়ী 'এ সেপারেশন' চলচ্চিত্রে পরিচালক শান্ত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বর্তমান জীবনে ইরানিদের বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্ব তুলে ধরেন।

বাইরে থেকে দেখে বলা যায়, ইরানের বর্তমান চলচ্চিত্রে দেশটির সমাজের অপেক্ষাকৃত ধনী মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং কম শিক্ষিত শ্রম শ্রেণীর মধ্যে সংঘর্ষ ও বিরোধ প্রদর্শিত হয়। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আমরা সহজেই আবিষ্কার করতে পারি, আসলে ইরানের মতো এমন ধরনের সংঘর্ষ বিশ্বে বিরাজমান। যেমন ইউরোপে কম শিক্ষিত অধিবাসী এবং ধনী শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ম্যানহাটনের শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এবং ব্রুকলিনের নিগ্রোদের মধ্যেও সংঘাত আছে।

আসলে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা নিয়ে ইরানের চলচ্চিত্রে যে আত্মসমালোচনা করা হয় তা বিশ্বের সমাজের বণ্টন সংকট সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে মিল আছে। পাশাপাশি ইরানের চলচ্চিত্র পরোক্ষভাবে পশ্চিমা দেশগুলোকে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংকেত দিয়েছে যে, 'তোমাদের তুলনায় আমরা এত খারাপ নই এবং আমাদের চেয়ে তোমরা এত ভালোও নও'। (লিলি/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040