Web bengali.cri.cn   
নারীকণ্ঠ
  2015-07-26 15:13:03  cri


প্রথম পর্ব : প্রধান প্রতিবেদন : হরিপ্রভা তাকেদাঃ আদি ঢাকার আধুনিক নারী

বিয়ের আগে নাম ছিলো হরিপ্রভা মল্লিক। বাবার নাম শশীভূষণ মল্লিক। শশীভূষণ মল্লিক ছিলেন উদার মনের ভালো মানুষ। একদিন রাস্তায় ফেলে দেয়া এক সদ্যজাত শিশুকে কুড়িয়ে বাড়ি এনেছিলেন বাঁচানোর জন্য। এই অপরাধে গোঁড়া হিন্দু সমাজে তার জাত গেলো। তাকে সমাজচ্যুত করা হলো। বাধ্য হয়ে শশীভূষণ যোগ দিলেন ব্রাহ্মসমাজে। রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক প্রচারিত এই ধর্মের মূল ভিত্তি ছিল সনাতন হিন্দু ধর্ম। কিন্তু ব্রাহ্ম ধর্মে সে সময়ের হিন্দু সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার আর ধর্মীয় অনাচারগুলোর কোন স্থান ছিলো না। শশীভূষণ তার উদার নৈতিক মানুষিকতা আর কর্মদক্ষতা দিয়ে অল্প সময়েই ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হন। ১৮৯২ সালে তিনি ঢাকায় নিরাশ্রয় নারী, শিশু ও অসহায় মানুষের কল্যাণে 'মাতৃনিকেতন'নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। শশীভূষণ মল্লিকের উদার ও প্রগতিশীল মানসিকতা আর ব্রাহ্মসমাজের কল্যাণকামী শিক্ষা ও আবহ প্রভাব ফেলছিলো শশীভূষণের সন্তানদের উপর। বিশেষ করে তার বড় মেয়ে হরিপ্রভা মল্লিকের উপর।

হরিপ্রভা মল্লিকের জন্ম হয় ১৮৯০ সালে। সে সময়ের ঢাকার খিলগাঁও গ্রামে। তার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। ধারণা করা হয়, তিনি ইডেন স্কুলে মেট্রিক পর্যন্ত পড়েছিলেন। হরিপ্রভা শশীভূষণের বড় মেয়ে হিসেবে আশ্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। আশ্রমে কাজ করার সুবাদেই পরিচয় হয় জাপানি যুবক উয়েমন তাকেদার সাথে। উয়েমেন তখন পূর্ববাংলার খ্যাতনামা 'ঢাকা বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরি'-তে হেড কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। পরিচয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের পরস্পরকে ভালো লেগে যায়। তারপর দু'পরিবারের সম্মতিতে ১৯০৭ সালে ১৭ বছর বয়সে উয়েমেন তাকেদার সাথে হরিপ্রভা মল্লিকের বিয়ে হয়। এই বিয়ে ছিল সেসময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই প্রথম কোন বাঙ্গালি নারী কোন জাপানিকে বিয়ে করলেন। আবার কোন জাপানিও কোন বাঙ্গালি নারীকে এই প্রথম বিয়ে করলেন। তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো, যে গোড়া ধার্মিক দেশে নয় বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে না হলে সমাজের মুখে চুনকালি পড়ে, একজন সদ্যজাত অনাথের জীবন বাঁচাতে বাড়ি আনার কারণে যে দেশে সমাজচ্যুত হতে হয়; সেই একই দেশে মেয়ের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পারিবারিক সম্মতিতে এক ভিনদেশীর সাথে ১৭ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে হলো। সে ভিনদেশীয়ও এমন এক ভিনদেশী, সে দেশের আর কোন পুরুষের সাথে পূর্ব-বাংলার আর কোন নারীর বিয়ে হয়েছে কিনা এমন খবর আগে কেউ কখনও শুনে নি। তবে, হরিপ্রভার বিয়ে নিয়ে এর চেয়েও বড় ঘটনাটি ঘটে বিয়ের সাত বছর পর, ১৯১২ সালে।

স্বামীর উপাধি নিয়ে হরিপ্রভার নাম হলো হরিপ্রভা তাকেদা। এই নামেই তিনি পরিচিত হন। শশীভূষণ মেয়ে-জামাইকে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। উয়েমন শ্বশুরের সহযোগিতায় ঢাকায় গড়ে তোলেন 'ইন্দো-জাপানিজ সোপ ফ্যাক্টরি' নামে একটি সাবানের কারখানা। এ কারখানার আয়ের কিছু অর্থ 'মাতৃনিকেতন'আশ্রমে দান করা হতো। কারখানাটি বছর খানেক পর অলাভজনক হয়ে উঠলে উয়েমন ব্যবসা গুটিয়ে সস্ত্রীক জাপান চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হরিপ্রভা-উয়েমন দম্পতির জাপান যাত্রার খবরে চারদিকে রীতিমত হৈ চৈ পরে গেলো। ঢাকার এক বাঙ্গালি মেয়ে অজানা-অচেনা কল্পপুরীর এক দূরদেশ জাপানে তার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে - ভাবা যায়! দিনাজপুরের মহারাজা তাদের জাপান যাত্রার কথা শুনে উপহার পাঠালেন ২৫ টাকা। যাত্রার শুভকামনা করে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে প্রার্থনা ও উপাসনার আয়োজন করা হলো।

৩ নভেম্বর, ১৯১২ সাল। বাংলার নারী জাগরণের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ঢাকার মেয়ে হরিপ্রভা তার জাপানি স্বামীর সাথে জাপানে তার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ স্টিমার ঘাট লোকে লোকারণ্য। কৌতুহলী ঢাকাবাসী এমন অদ্ভুত ঘটনা নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে চাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টিমারে গোয়ালন্দ, গোয়ালন্দ থেকে ট্রেনে কলকাতা। কলকাতা থেকে জাহাজে করে জাপান। একজন নারী ঠিক কতটুকু সাহসী আর আত্ববিশ্বাসী হলে নিজের দেশ নিজের পরিবার-পরিজন ছেড়ে অজানা-অচেনা এক দেশে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যে দেশের মানুষ আর সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বা তার দেশের মানুষ বলতে গেলে কিছুই জানে না। যে দেশে ভারতবর্ষের গুটি কয়েক মানুষ আঙ্গুল গুণে গুণে মাত্র কয়েকবার গিয়েছে। যে দেশে একবার গিয়ে আর কখনও নিজের দেশে ফিরে আসতে পারবেন কিনা তার কোন নিশ্চয়তা ছিলো না। হরিপ্রভা আর তার স্বামী ১৩ ডিসেম্বর জাপানের পোর্ট মোজি বন্দরে পৌঁছান। বাঙ্গালি নারীর জাপান যাত্রায় বাংলা মুল্লুকের মত জাপানেও হৈ চৈ হলো। বাঙ্গালি জাপানি-বধূর জাপান আগমনের খবর সেদিন ছেপেছিলো দুটি জাপানি পত্রিকা।

চার মাস জাপানে কাটিয়ে হরিপ্রভা-উয়েমন দম্পতি ঢাকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসার দু'বছর পর ১৯১৫ সালে হরিপ্রভা তাকেদা 'মাতৃনিকেতন' আশ্রমের সহায়তার জন্য তার জাপান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। বইয়ের নাম- 'বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা'। ৬১ পৃষ্ঠার বইটির দাম চার আনা! ছাগল-ভেড়া আর শুঁটকি মাছের সঙ্গে জাহাজের দিনগুলি, এসরাজ বাজানো, শ্বশুরবাড়ির আতিথেয়তা, ভালবাসা, 'ইন্দোজেন'(ভারতীয় মহিলা)-কে নিয়ে জাপানিদের ঔৎসুক্য, সেখানকার জীবনযাত্রা –এ সব কিছুই তিনি ধরে রাখেন 'বঙ্গ মহিলার জাপান যাত্রা'বইতে৷

এশিয়া মহাদেশের নারীদের মধ্যে হরিপ্রভা তাকেদার হলেন প্রথম নারী যিনি জাপান বিষয়ক কোন বই লেখেন। তার পর্যবেক্ষণ শক্তি ভালো ছিলো। ব্যক্তিগত ডায়েরির মত করে লেখা হলেও তখনকার বাংলাদেশ এবং জাপানের আর্থসামাজিক অবস্থা বোঝার জন্য হরিপ্রভা তাকেদারের লেখা বইটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপান ভ্রমণে যান হরিপ্রভার চার বছর পর ১৯১৬ সালে। আর তার লেখা 'জাপানযাত্রী'বইটি প্রকাশিত হয় ১৯১৯ সালে। সে হিসেবেও হরিপ্রভার বইটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বইটি লেখার জন্য পরবর্তীতে 'প্রবাসী'সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়, কবি বুদ্ধদেব বসু ও লেখিকা প্রতিভা বসু হরিপ্রভা তাকেদার অনেক প্রশংসা করেছেন।

কিন্তু কালের পরিক্রমায় জাপান ভ্রমণ নিয়ে হরিপ্রভার লেখা বইটি এক সময় মানুষের কাছে অজ্ঞাত হয়ে যায়। লন্ডনের ইন্ডিয়া লাইব্রেরি থেকে ১৯৯৯ সালে বইটি আবিষ্কৃত হয়। পরে গবেষক মঞ্জুরুল হক একটি ভূমিকা লিখে বইটি পুণমুদ্রণ করেন। হরিপ্রভা তাকেদারের 'বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা'বইটিই এখন পর্যন্ত ঢাকার কোন নারীর লেখা প্রথম বই।

কলকাতা জাতীয় গ্রন্থাগার সূত্রে তার লেখা আরেকটি বইয়ের খোঁজ পাওয়া যায়। নাম 'সাধবী জ্ঞানদেবী'। ১৯১৭ সালের ১ জানুয়ারি বইটি প্রকাশিত হয়। ৮২ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য চার আনা। 'আশানন্দ ব্রহ্মনন্দ কেশবচন্দ্র সেন' নামে হরিপ্রভার আরেকটি বইয়ের নাম জানা গেলেও তা কবে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল জানা যায়নি। 'জাপানে সন্তান পালন ও নারী শিক্ষা' শিরোনামে ভারতবর্ষ পত্রিকার পৌষ-জ্যৈষ্ঠ (১৩৫৬-১৩৬৭ বঙ্গাব্দ) সংখ্যায় হরিপ্রভার একটি নিবন্ধও প্রকাশিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান সরকার ভারতবর্ষ থেকে সব জাপানিকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। স্বামী উয়েমেন তাকেদার সাথে হরিপ্রভাও তখন দ্বিতীয়বারের মত জাপান যান। সেটা ১৯৪১ সাল। যুদ্ধবিদ্ধস্ত জাপানে গিয়ে হরিপ্রভা পরলেন অথৈ সাগরে! স্বামীর পক্ষের আত্মীয়-স্বজন সব ছন্নছাড়া৷ ঘরবাড়ি ধূলিস্যাৎ। থাকার জায়গা নেই, রোজগার নেই৷ তার উপর স্বামী উয়েমেন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলেন।

হরিপ্রভার এই বিপদের দিনে এগিয়ে আসলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। সে সময় তিনি জাপানে অবস্থান করছিলেন। হরিপ্রভা রাসবিহারী বসুর সহযোগিতায় টোকিও রেডিও-তে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'-এর হয়ে বাংলায় সংবাদ পাঠের চাকুরী পান। 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'নেতাজি সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্ত্বে গঠিত স্বাধীনতাকামী ব্রিটিশবিরোধী বাহিনী। বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর মাধ্যমেই হরিপ্রভার পরিচয় হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সাথে৷ হরিপ্রভাকে মূলত নেতাজিই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করলেন। হরিপ্রভা যে চাকরী একদিন নিয়েছিলেন ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করে জীবন বাঁচানোর তাগিদে, সেই একই চাকুরীই পরে তিনি করেছেন প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, জীবনের তোয়াক্কা না করে। জাপানের অন্যান্য শহরের মত টোকিও শহরও তখন মিত্র বাহিনীর মূহুর্মুহু বোমা বর্ষণে কেঁপেকেঁপে উঠছে। যখন-তখন যেখানে-সেখানে বোমা পরছে। বোমা হামলার টার্গেট হওয়ার ভয়ে রাতে কেউ আগুন ধরাত না, বাতি জ্বালাতো না। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। থেকে থেকে বোমা পরছে। রাতের অন্ধকারে সেই বোমা বিদ্ধস্থ টোকিও শহরের রাস্তা দিয়ে দুঃসাহসী হরিপ্রভা হেঁটে হেঁটে টোকিও রেডিও স্টেশনে যেতেন। বোমার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য তার মাথায় ছিল শুধু একটা হেলমেট। এভাবেই এই দুঃসাহসী নারী নিজের জীবন বিপন্ন করে রেখে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত টোকিও রেডিও-তে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'-এর সৈনিকদের জন্য বাংলায় খবর পাঠ করে গেছেন।

যুদ্ধে পরাস্ত জাপান ছেড়ে স্বামীকে নিয়ে ১৯৪৭-এ ভারত ফেরেন হরিপ্রভা। উঠেন জলপাইগুড়িতে বোনের বাসায়। ১৯৭২ সালে কলকাতার শম্ভুনাথ হসপিটালে জীবনাবসান হয় হরিপ্রভা তাকোদার, যাকে বলা হয় 'আধুনিক বাঙ্গালি নারীর প্রথম অধ্যায়।'কেউ কেউ বলেন- 'ঢাকা শহরের প্রথম আধুনিক মহিলা।'

বিঃদ্রঃ নারী জাগরণের অগ্নি-মশাল জ্বেলে ঢাকা থেকে সুদূর জাপান পর্যন্ত আলোকিত করেছিলেন যে নারী, সে নারীর কোনো স্মৃতিচিহ্ন আজ ঢাকার কোথাও নেই। বাংলার নারী জাগরণে অনেকের নাম উচ্চারণ করা হলেও হরিপ্রভার কৃতিত্বের কথা এতদিন কেউ বলত না। আসলে তিনি এতদিন আড়ালেই পরে ছিলেন। গবেষক মঞ্জুরুল হকের কৃতিত্বে বাংলার মানুষ তার কথা আবার জানতে পেরেছে। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ভীষ্মদেব চৌধুরীর 'জনান্তিকে মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য প্রবন্ধ'বইয়ের 'হরিপ্রভা তাকেদা'প্রবন্ধে এই আধুনিক নারীর জীবন ও সাহিত্যকর্মের নানা খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে। হরিপ্রভার জাপান যাত্রার শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ২০১২ সালে পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল ৬৭ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। নাম 'জাপানি বধূ'!

দ্বিতীয় পর্ব : আলোকতি নারী :

প্রিয় শ্রোতা, আমরা আলোকতি নারী পর্বে এমন একজন নারীকে নিয়ে আলোচনা করবো যিনি একজন পরমানু পদার্থ বিজ্ঞানী।

তিনি হো চেহুই : চীনের একজন পরমানু পদার্থ বিজ্ঞানী। সানসি প্রদেশের লিনসি জেলার অধিবাসী তিনি। চিয়াংসু প্রদেশের সুচৌ শহরে তাঁর জন্ম হয়। ১৯৩৬ সালে তিনি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন।

১৯৪০ সালে তিনি জার্মানির বার্লিন উচ্চ শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি চীনা বিজ্ঞান একাডেমির উচ্চ শক্তি পদার্থবিদ্যা গবেষণালয়ের গবেষক ছিলেন।

জার্মানির হাইডেলবার্গ রাজকীয় ইনস্টিটিউট-কে. ডাব্লিউ. আইতে পরমানু পদার্থবিদ্যা গবেষণা করাকালে তিনি পজিটিভ-নেগেটিভ ইলেক্ট্রনের এক্সচেঞ্জ-শক্তির সংঘর্ষ আবিস্কারের জন্য গবেষণা করেন।

ফ্রান্সের প্যারিসের ফ্রান্স ইনস্টিটিউটের পরমানু রাসায়নিক পরীক্ষাগারে কাজ করার সময় তিনি সহযোগীদের সঙ্গে ইউরেনিয়ামের তিনভাগে বিশ্লিষ্টকরণ ও চারভাগে বিশ্লিষ্টকরণ আবিস্কার ও গবেষণা করেন।

নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিকে তিনি সহযোগীদের সঙ্গে আত্মনির্ভরশীল হয়ে সাফল্যের সঙ্গে পারমানবিক শাঁসের ইমালশন পরিমাপক যন্ত্রপাতি তৈরি করেন। পরীক্ষাগার, উচ্চ পাহাড়ে মহাজাগতিক রশ্মি পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, মহাকাশ বেলুন তৈরিতে নেতৃত্বদান ও মহাকাশ পদার্থবিদ্যা পরিচালনা প্রভৃতি ক্ষেত্রের গবেষণায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৮০ সালে তিনি চীনা বিজ্ঞান একাডেমীর একাডেমিশিয়ান নির্বাচিত হন।

তৃতীয় পর্ব : বিশ্ব নারী টুকরো খবর :

শ্রোতাবন্ধুরা, টুকরো খবর বিভাগে প্রথমেই আলোচনা করবো ……………।

১/ নারী মিলনমেলায় 'পপ অব কালার' (Pop of Color) বর্তমানে একটি পরিচিত নাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ গ্রুপের সব কার্যক্রম।

মূলত ফেসবুকে পপ অব কালারের রয়েছে গ্রুপ। শুধুমাত্র নারীদের নিয়ে গড়া এ গ্রুপ থেকে এবার আয়োজন করা হয়েছে এক ভিন্নধর্মী মিলনমেলার।

এতে দেশ-বিদেশের সব নারী একসঙ্গে হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মিলনমেলায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংবর্ধনা, খেলা, পুরষ্কার বিতরণীসহ নানা আয়োজন। এ আয়োজন হতে যাচ্ছে আর্মি গলফ ক্লাবের প্লাম ভিউতে।

মূলত নারী উন্নায়নের ভূমিকা, নারীদের সফলতার গল্প, নারী প্রতিভাগুলো একত্রিত করা, প্রতিভা বিকাশ আর অগ্রযাত্রার কথাসহ আরও বিভিন্ন দিকের প্রচার-প্রসারই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া থাকছে বিভিন্ন ব্রান্ডের আকর্ষণীয় ছাড়।

সব বয়সী নারী ফেসবুকের মাধ্যমে যোগ দিতে পারবেন 'পপ অব কালার' গ্রুপে। এজন্য 'Pop of Color' লিখে সার্চ করতে হবে।

গ্রুপের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের কাছাকাছি। মিলনমেলা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানানো হবে গ্রুপে।

২/ সামনে ক্যাটরিনা কাইফ। হাঁটু গেড়ে বসে রণবীর কাপুর জানতে চাইলেন, 'আমাকে বিয়ে করবে?' তার হাতে ছিলো হিরে বসানো প্ল্যাটিনামের আংটি। প্রিয়তমাকে তিনি সেটা পরিয়ে দিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ জুলাই ক্যাটরিনার ৩২তম জন্মদিনে। অনেক ফিসফাস আর লুকোচুরির পর এবার নিজেদের প্রেম প্রকাশ্যে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রণবীর-ক্যাট। অবশ্য বেশ কয়েক মাস ধরেই দু'জনে একই ফ্ল্যাটে থাকছেন। শহিদ কাপুর ও মীরা রাজপুতের পর বলিউডে আরেকটা বিয়ে নিয়ে মাতামাতি হতে যাচ্ছে। আগামী বছর গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছেন তারা।

.

চতুর্থ পর্ব : সাম্প্রতিক : ময়মনসিংহে জাকাত নিতে গিয়ে ২১ নারী ও ১শিশুসহ নিহত ২৭

ময়মনসিংহের একটি জর্দা কারখানায় জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে ২১ জন নারী ও একজন শিশুসহ পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জন প্রাণ হারান। ঘটনাস্থলেই ২০ জন মারা যান। এ সময় আরো ৫০জন আহত হয়েছেন।

৯ জুলাই শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের নূরানী জর্দা কারখানায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় কারখানার মালিক ও সাত কর্মচারিসহ মোট আটজনকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে, ঘটনা তদন্তে আলাদা আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।

অন্যদিকে, পুলিশ সদর দফতর থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক মো. শামীম প্রতি বছরই জাকাত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই শুক্রবার সেহরির পর পরই জাকাতের কাপড় বিতরণের উদ্দেশ্যে জর্দা কারখানার গেট খোলা হয়।

এ সময় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এক সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে গেটের ভেতর ঢুকতে চাইলে শতাধিক মানুষ পদপিষ্ট হন। এতে ঘটনাস্থলেই ২০ জন নিহত হন।

এরপর কারখানার মালিক-কর্মচারিদের আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। (মান্না)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040