0726jiankang.
|
আসলে বেশিরভাগ পাখি ও সরীসৃপের ডিম বলতে বোঝায় নিষিক্ত ডিম্বাণুর মাধ্যমে সৃষ্ট জাইগোটকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার জন্য ডিমের ভিতর যথাযথ তাপমাত্রাও বজায় রাখার ব্যবস্থা থাকে। ভ্রূণের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও নিরাপত্তাও ডিমের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই থাকে। ভ্রূণ পরিণতি লাভ করার পর ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে। কিছু ভ্রুণের ডিমের খোলস ভাঙ্গার জন্যে অস্থায়ী ডিম-দাঁতও থাকতে দেখা যায়।
'অভিপারাস' প্রাণীরা ডিম পেড়ে থাকে। এসব প্রাণীর শরীরের অভ্যন্তরে ভ্রুণের খুবই সামান্য বা কোনো বিকাশই ঘটে না। ডিম বাইরে আসার পরই ধীরে ধীরে ভ্রুণ বিকশিত হয়ে বাচ্চায় পরিণত হয়। ডিম পর্যবেক্ষণ ও সংগ্রহ করার বিদ্যাকে 'উওলজি' বলা হয়।
সরীসৃপ, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী--যারা জলে ডিম পাড়ে না, তাদের ডিম একটি রক্ষাকারী আবরণে আবৃত থাকে, যাকে 'ডিমের খোসা' বলা হয়। এই আবরণ নমনীয় বা অনমনীয় – দুই-ই হতে পারে।
একেক প্রাণীর ডিমের আকৃতি ও ওজন একেকরকম হতে পারে। উটপাখির ডিমের ওজন ১.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমান বিশ্বের এর চেয়ে বড় ডিম দেখা যায় না। অবশ্য একসময় এপিওমিস এবং কিছু কিছু ডাইনোসরের ডিম এর চাইতেও বড় হ'ত। বী হামিংবার্ডের ডিম পাখিদের মধ্যে ক্ষুদ্রতম, ওজন মাত্র আধা গ্রাম। কিছু সরীসৃপ ও বেশিরভাগ মাছের ডিম এর চাইতেও ছোট হয়। কীটপতঙ্গ ও অমেরুদন্ডীদের ডিম তার চাইতেও ক্ষুদ্র।
ডিম চোখের জন্য ভাল। আমরা জানি চোখের জন্য গাজর একটি ভাল খাদ্য। কিন্তু চোখের জন্য ডিম গাজরের চেয়ে কোনো অংশেই কম উপকারী নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ডিম খান, তাদের চোখে সহজে ছানি পড়ে না।
ডিম মানুষের চুলের জন্য উপকারী। নিয়মিত ডিম খেলে আপনার চুল দ্রুত বড় হবে। কারণ, ডিমের কুসুমের মধ্যে
Choline নামক একটা পদার্থ থাকে, যা আমাদের চুল বড় হতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের প্রতিদিন ৪২৫ মিলিগ্রাম Choline খাওয়া উচিত এবং পুরুষদের খাওয়া উচিত ৫০০ মিলিগ্রাম। আর হ্যা, একেকটি ডিমে গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম করে Choline থাকে।
ডিম স্তন-ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণা অনুসারে, সপ্তাহে যারা অন্তত ৬টি ডিম খেয়ে থাকেন, তাদের স্তন-ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৪৪ শতাংশ কম। কারণ, ডিমের মধ্যে যে 'ভিটামিন ডি' থাকে, তা স্তন-ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
মেয়েদের মাসিক নিয়মিত রাখতে ডিম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাদামী চিনি বা ব্রাউন সুগার দিয়ে ডিম আমাদের নারীবন্ধুদের জন্য একটি ভাল খাবার। এ খাবার তাদের মাসিক নিয়মিত রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। খাবারটি শরীর গরম রাখে এবং শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডিম খেলে মেয়েদের মাসিকের সময় কষ্টের অনুভূতি কমে যাবে। যদি আপনার মানসিক অবস্থা ভাল না থাকে, তাহলে দুপুরে খাওয়ার আগে ৮০ শতাংশ পানির সাথে ২০ শতাংশ ব্রাউন সুগার মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। ভালো লাগবে।
ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে ডিম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ব্রাউন সুগারমিশ্রিত ডিমের স্যুপ এ ক্ষেত্রে কার্যকরী। শরত্কাল ও শীতকালে আমাদের ত্বক শুকিয়ে যায়। তখন ত্বকে একটা অস্বস্তি অনুভূত হয়। এসময় আপনি ডিমের স্যুপ খেলে উপকার পাবেন। আরেকটি কথা। মৌমাছি কামড়ালে তার তীব্র ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ডিমের প্রলেপ লাগিয়ে দেখুন। উপকার পাবেন।
ব্রাউন সুগার দিয়ে ডিমের স্যুপ প্রসূতির জন্য ভাল। হ্যাঁ, সন্তান প্রসব করার পর প্রসূতির শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার শরীরে রক্তস্বল্পতাও দেখা দিতে পারে। এসময় তাকে ব্রাউন সুগার ও ডিমের স্যুপ দেওয়া যেতে পারে। মা হওয়ার পর ৭ থেকে ১০ দিন নিয়মিত এ স্যুপ খেলে প্রসূতি দ্রুত তার হারানো শক্তি ফিরে পাবেন। এই স্যুপ বুকের দুধ উত্পাদনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
ব্রাউন সুগার দিয়ে ডিমের স্যুপ বানাতে যেসব উপকরণ লাগবে তা একটু লিখে নিন। এ স্যুপ বানাতে লাগবে: ডিম ৩টি এবং ব্রাউন সুগার ১০০ গ্রাম।
প্রথমে দুই গ্লাস পানি পাত্রে গরম করুন। পানি খানিকটা গরম হলে ডিম ফেটে পানিতে ঢালুন। কিছুক্ষণ নাড়ুন। তারপর ব্রাউন সুগার দিয়ে দিন। নাড়ুন ঠিক এক মিনিট। স্যুপ তৈরি হয়ে গেল। মনে রাখবেন, অল্প আঁচে এ স্যুপ রান্না করতে হবে।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)