0530muktarkotha
|
(রে ১)
স্বাভাবিক মানুষ সড়ক অতিক্রম করার সময় ট্রাফিক লাইট দেখতে পারেন। কিন্তু অন্ধদের সে সুযোগ নেই; তারা আশাপাশের শব্দের ওপর নির্ভর করেন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাওয়া আমাদের মতো স্বাভাবিক মানুষদের জন্য কত সহজ! কিন্তু অন্ধদের জন্য কঠিন। তাঁরা অন্যের নির্দেশনা অনুসরণ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারেন।
(রে ২)
'থং ফেংলান: সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাও।
লিউ চিংফিং: আচ্ছা, সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাচ্ছি।
থংফেংলান: পাঁচটি ধাপ।
লিউ চিংফিং: আচ্ছা, পাঁচটি ধাপ।
থং: এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ। শেষ, শেষ।
লিউ: আচ্ছা, আচ্ছা।'
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমি আপনাদেরকে এক স্বামী ও স্ত্রীর গল্প বলবো। স্বামী হলেন একজন অন্ধ শিল্পী লিউ চিংফিং। তার স্ত্রীর নাম থং ফেংলান।
৫৮ বছর বয়সী লিউ চিংফিং অন্ধ। কিন্তু তার স্ত্রী থং ফেংলান একজন স্বাভাবিক মানুষ। লি চিংফেং অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তাদের পরিচয়। পরিচয়ের পর প্রেম এবং আরও পরে বিয়ে। তাঁদের পরিবার অবশ্য বিয়ের বিপক্ষে ছিল। এ সম্পর্কে থং ফেংলান বলেন,
(রে ৩)
'আমার মা বিয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ, ওর চোখে সমস্যা ছিল। আমি বললাম, অসুবিধা নেই। যদি সে একেবারে অন্ধ হয়ে যায়, আমি আজীবন তার দেখাশুনা করবো; কখনো অনুতাপ করবো না।'
থং ফেংলানের কথা শুনে পরিবারের সবাই মুগ্ধ হন। তাঁর ফুপি সে কথা স্মরণ করে বলেন,
(রে ৪)
'ফেংলানের মা তার কথা শুনে মুগ্ধ হন। চিংফিং ও ফেংলানের ভালবাসা কত সুন্দর ও স্বচ্ছ! এখন তাঁদের জীবন অনেক সুন্দর। আমরা তাদের জন্য খুশী।'
১৯৮২ সালে লিউ চিংফিং ও থং ফেংলান বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান জাকজমকপূর্ণ ছিল না; বিয়েতে তারা কোনো মূল্যবান উপহারসামগ্রীও বিনিময় করেননি। তার পর কেটে গেছে ৩০টি বছর। তারা আনন্দেই আছেন।
১৯৯৩ সালে লিউ চিংফিংয়ের চোখের অসুখটা গুরুতর আকার ধারণ করে। তিনি চাকুরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। একসময় তিনি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। অন্ধ হওয়ার ব্যাপারটি তাকে ভীষণ আঘাত করে। প্রায় তিন বছর তিনি নিজেকে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রাখেন। তিনি বলেন,
(রে ৫)
'আমি মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়ি। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রায় তিন বছর আমি বলতে গেলে বাড়ির বাইরে বের-ই হইনি। কর্মক্ষেত্রে আমার পারফরমেন্স ভালো ছিল। কিন্তু অন্ধত্ব আমার সবকিছু কেড়ে নিল। আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। অসম্ভব দ্রুত আমার মাথার সব চুল সাদা হয়ে গেল।'
কিন্তু স্ত্রীর ভালবাসা তাকে পুনরায় বাইরের দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনে। শুরু হয় তার নতুন জীবন। তার এ নতুন জীবনের অন্যতম সঙ্গী তার মাউথ-অর্গান।
(রে ৬)
লিউ চিংফিং ছোটবেলা থেকেই মাউথ-অর্গান বাজাতেন। আর এখন প্রতিদিন নিয়ম করে দুই ঘন্টা মাউথ-অর্গান বাজান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
(রে ৭)
'স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে আমার উচিত পাঁচ গুণ বেশি চেষ্টা করা, এমনকি দশ গুণ। আমি প্রতিটি সুর কয়েকশ বার অনুশীলন করি। এখন আমি মাউথ-অর্গানে চমত্কার সুর তুলতে পারি।'
স্ত্রীর সমর্থনে লিউ চিংফিং একটি মাউথ-অর্গান দল প্রতিষ্ঠা করেছেন। দলটি পেইচিংয়ের বিভিন্ন পার্কে পারফর্ম করে। গত দশ বছরে দলটি বেশ নাম করেছে। এ সম্পর্কে লিউ চিংফি বলেন,
(রে ৮)
'আমাদের দলের কোনো কোনো সদস্য পেইচিংয়ের উপকন্ঠ থেকে এসেছেন। টেম্পল অব হ্যাভেন-এর ছিনিয়ান ভবনে একবার দলের প্রায় ৮০০ সদস্য একযোগে পারফর্ম করেছিলেন।'
২০১০ সাল থেকে লিউ চিংফিং প্রতি বুধবার বিকেলে প্রতিবন্ধী শিশুদের মাউথ-অর্গান শেখাচ্ছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
(রে ৯)
'আমি এসব শিশুকে চার বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমার গভীর আবেগের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি প্রতিটি শিশুকে সম্মান করি। আমি নিজের সংগীতের জ্ঞান তাদের শেখাতে চাই। আশা করি, তাদের শরীর ও মন এতে আরও চাঙ্গা হবে।'
(রে ১১)
লিউ চিংফিংয়ের জন্য থং ফেংলান হল তার চোখ। থং ফেংলান সারা বিশ্বকে লিউ চিংফিংয়ের সামনে তুলে ধরেন পরম যত্নে। এ প্রসঙ্গে ফেংলান বলেন,
(রে ১২)
'আমি প্রতিদিন চিংফিংকে কম্পিউটার থেকে খবর পড়ে শুনাই। আমি প্রথমে শিরোনাম পড়ি। তার পর তিনি যে খবর বিস্তারিত শুনতে চান, সেটি পড়ে শুনাই।'
প্রতিদিন লিউ চিংফিংয়ের পোষাক পাল্টে দেন ফেংলান। একটি অনুষ্ঠানের জন্য তারা পোষাক বাছাই করছেন...
(রে ১৩)
'থং ফেংলান: কোনটা পড়বে? কালো বা সাদা?
লিউ চিংফিং: কালো!
থং ফেংলান: কালো?
লি চিংফিং: কালো পড়লে সুন্দর লাগে।
থং ফেংলান: আচ্ছা, কালোই পড়ো।'
বাড়ির কাছাকাছি ঘুরে বেড়ানোর সময় ফেংলান চিংফিংয়ের সামনে এভাবে বিশ্বকে তুলে ধরেন.....
(রে ১৪)
'থং ফেংলান: ছুঁয়ে দেখ, ফুলটা কত বড়!
লিউ চিংফিং: হ্যাঁ, খুবই বড়, কত্তো বড় হয়ে ফুটেছে!
থং ফেংলান: তুমি আবার ছুঁয়ে দেখ। কী সুন্দর গোলাকার ফুল।
লিউ চিংফিং: বাহ, খুবই সুন্দর।
থং ফেংলান: লাল রঙের।
চিং ফিং: হ্যাঁ, লাল রঙের!'
তাঁদের প্রতিবেশী মাদাম কুয়ান তাঁদের সত্য ভালবাসা সম্পর্কে বললেন,
(রে ১৫)
'তাঁরা সত্যিকারের আদর্শ দম্পতি। তাঁদের ভালবাসা অনেক দৃঢ়। আমাদের উচিত তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। তাঁরা সবসময় একসঙ্গে বাইরে যান। আমার স্বামী পেইচিংয়ের বাইরে কাজ করেন। তাঁদেরকে একসঙ্গে ঘুরতে দেখে আমার হিংসা হয়। আশা করি, আমি ও আমার স্বামী এ দম্পতির মতো আজীবন পরস্পরকে ভালোবেসে যাবো।'
লিউ চিংফিং তার স্ত্রীকে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানাতে চান। তিনি বলেন,
(রে ১৬)
'আমার স্ত্রী সবসময় আমার কাছে থাকে, কখনো আমাকে ত্যাগ করার কথা বলে না। আমি তাকে শুধু বলতে চাই, ধন্যবাদ। আমার মতো প্রতিবন্ধীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পরিবার। পরিবারের যত্নেই আমাদের সুখ নিহিত।'
(রে ১৭,সংগীত)
গান
বন্ধুরা, শুনছিলেন লিউ চিংফি ও থং ফেংলানের ভালবাসার গল্প।
এবার শুনবো আপনাদের কথা। আমাদের বাংলাদেশি মনিটর দিদারুল ইকবাল সম্প্রতি শ্রোতাদের একটি মোবাইল কনফারেন্স আয়োজন করেছিল। এখন কনফারেন্সে অংশ নেওয়া শ্রোতাদের কণ্ঠে সরাসরি তাদের মতামত শুনবো আমরা।
....
আচ্ছা, প্রিয় বন্ধুরা, আমরা ভবিষ্যতেও নিয়মিত এ ধরণের মোবাইল কনফরেন্স আয়োজন করবো, যাতে আরো বেশি শ্রোতার মতামত সংগ্রহ করা যায়। যদি আপনারা আমাদের মোবাইল কনফরেন্সে অংশ নিতে চান তাহলে আমাদের মনিটর দিদারুল ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/আলিম)