সি আন শহরের হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদের কুরআন শিক্ষার আসর
0715
|
ইসলামি সংস্কৃতিকে লালন করতে সি আন ধর্মীয় ব্যুরো ও হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদ একসঙ্গে কাজ করে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়। কুরআন শিক্ষার আসর সেসব কার্যক্রমের একটি। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় এ আসর বসে। স্থানীয় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু-কিশোররা এখানে কুরআন শিক্ষা করে। এ প্রশিক্ষণ তার পেয়ে থাকে বিনামূল্যে। সি আন ধর্মীয় ব্যুরোর কর্মকর্তা ইউ সু ফু বলেন, "প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু-কিশোরা হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদে কুরআন শিক্ষার আসরে অংশ নেয়। এখানে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। বয়স অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ক্লাসের সময় ১ ঘন্টা। স্বল্প-মেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুরা আরবি ভাষার ২৮টি বর্ণ, ধর্মের মৌলিক তথ্য শিখতে পারে। মেয়েরা ৯ বছর বয়সে এবং ছেলেরা ১২ বছর বয়সে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।"
হুয়া চুয়ে সিয়াং এতদঞ্চলে একটি বিখ্যাত বড় মসজিদ। থাং রাজবংশ আমলে তথা ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এ মসজিদ। সুং, ইউয়ান, মিং ও ছিং—এই চার রাজবংশ আমলে মসজিদটি কয়েকবার মেরামত ও সম্প্রসারণ করা হয়। এ মসজিদের সাথে জড়িয়ে আছে স্থানীয় মুসলমানদের হাজার বছরের সংস্কৃতি। সি আন শহরের মুসলিম অঞ্চলে এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই সাধারণ মানুষের জীবন পরিচালিত হয়। সি আন তথা গোটা উত্তর-পশ্চিম চীনের মুসলমানদের জীবনে হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদের লক্ষণীয় প্রভাব রয়েছে।
কুরআন শিক্ষা আসরের সব শিক্ষক হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদেই কুরআন শিক্ষা করেছেন। এখান থেকেই তারা ধর্মীয় অন্যান্য জ্ঞানও লাভ করেছেন। কুরআন শিক্ষার আসর একদিকে যেমন স্থানীয় মুসলিম শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র, তেমনি এখানে মাওলানারা তাদের অর্জিত জ্ঞান বিতরণের সুযোগও পাচ্ছেন। ২৮ বছর বয়সী লান পেং কুরআন শিক্ষা আসরের একজন শিক্ষক। তিনি বললেন, শিশুদের শিক্ষা দেওয়া সবচেয়ে আনন্দময় একটি ব্যাপার। তিনি বলেন, "প্রতি বছর আমরা কুরআন শিক্ষার আসর আয়োজন করি। ২০ বছর বয়স থেকেই আমি এখানে শিক্ষকতার কাজ শুরু করি। আমি শিশুদের অনেক পছন্দ করি এবং যখন দেখি তারা ভালভাবে কুরআন পড়তে পারছে, তখন তাদের আরও ভাল করে শেখানোর আগ্রহ পাই।"
আরবি ভাষার বর্ণ, শব্দ, উচ্চারণ, তিলাওয়াত, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ইত্যাদি সবকিছুই এ মসজিদে শিক্ষা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা আশা করেন, প্রগতিশীল শিক্ষা-পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে ইসলামের সংস্কৃতি টিকে থাকবে। শুরু থেকেই এই কুরআন শিক্ষার আসর স্থানীয়দের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। লোকজন তাদের শিশু-সন্তানদের কুরআনের ক্লাশে পাঠাতে সংকোচ বোধ করেননি। কারণ, তারা চান, তাদের সন্তান ইসলামি সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হোক।
৯ বছর বয়সী হাই লান ইয়ুন দ্বিতীয় বারের মত হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদে কুরআন শিক্ষার আসরে অংশ নিচ্ছে। সে বলল, "৫ জুলাই থেকে আমি ক্লাস করছি। গত বছরেও আমি এখানে কুরআন শিখেছি। দাদা আমাকে পাঠিয়েছেন এবং বাড়িতে উনিও আমাকে শিখিয়ে থাকেন।"
হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদের কুরআন শিক্ষার আসর দিন দিন বড় হচ্ছে। ১৩ বছর বয়সী পাই সি ইয়া ইং অন্য একটি মসজিদের কুরআন শিক্ষার আসর থেকে হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদে এসেছে। সে বলল, "এখানে যা শিখছি তা অন্য জায়গায় শেখার সুযোগ ছিল না। আমি এখানে কুরআন শিখতে পছন্দ করি এবং বাড়িতেও চর্চা করি।"
চলতি বছর যখন হুয়া চুয়ে সিয়াং মসজিদের গ্রীষ্মকালীন কুরআন শিক্ষার আসর বসে তখন শুরু হয় রমজান মাস। এ উপলক্ষ্যে শিক্ষকরা একটি ক্বেরাত প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চান। তারা মনে করেন, এতে একদিকে শিশুরা কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দক্ষতার পরিচয় দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং অন্যদিকে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যেও একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। (শিশির/আলিম)
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক