গত ৮ মে চীনা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল নেপালে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ শেষে দেশে ফিরে আসে। তবে নেপালকে সাহায্য দেওয়া অব্যাহত রেখেছে চীন। চীনের সরকারি চিকিত্সাদল, চীনা রেডক্রস, চীনা বাহিনীর উদ্ধারকারী দল ও চিকিত্সাদল এবং চীনের বেসরকারি উদ্ধারকারী দল অব্যাহতভাবে নেপালে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে এবং দেশটির পুনর্গঠন কাজেও অবদান রেখে চলেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুনুন এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন।
গত ৭ মে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হবার পর বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে চীন সর্বপ্রথম নেপালের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এ পর্যন্ত চীন নেপালকে ৬ কোটি রেনমিপি মূল্যের ৫৪৬ টন ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে। এ ছাড়া, চীন সরকারের স্বেচ্ছাসেবক ও উদ্ধারকারী দলও সবার আগে নেপাল পৌঁছায়।
চীনের সরকারি চিকিত্সাদলের ৬০ জন সদস্যকে গত ২৭ এপ্রিল কাঠমান্ডুর ৪০ কিলোমিটার দূরে তুন্ডিখেলে মোতায়েন করা হয়। দলটির প্রধান দু বো বলেন, 'আমরা এখানে পৌঁছানোর পর পরই অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করি এবং একইসঙ্গে দুর্গতদের চিকিত্সা দেওয়ার কাজও শুরু করি। প্রথমদিন আমরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে ৮৩ জন আহত নেপালির চিকিত্সা করি। গত ২৮ এপ্রিল আমরা ১১৮ জন আহত লোককে চিকিত্সাসেবা দিই। গত ৭ মে রাত পর্যন্ত আমরা মোট ৬০৬ জনের চিকিত্সা করি। এর মধ্যে গুরুতর আহতের সংখ্যা ১১৭। এ ছাড়া, আমরা ২৫৪৩ জন লোককে স্বাভাবিক চিকিত্সাসেবা দিয়েছি এবং ২৭৬টি অস্ত্রোপচার করেছি।'
ভূমিকম্পের পর সাধারণত মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য আহতদের চিকিত্সাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি চীনা চিকিত্সাদল সম্ভাব্য মহামারী প্রতিরোধেও কাজ করেছে। এ সম্পর্কে দু বো বলেন, 'দুর্গত স্থানে পৌঁছানোর প্রথম দিনেই আমাদের ৫ জন গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তুন্ডিখেলে সম্ভাব্য মহামারী প্রতিরোধে কাজ শুরু করেন। গত ২৯ এপ্রিল ৬ সদস্যের একটি মহামারী প্রতিরোধ দল ১২০ কিলোমিটার দূরে এক চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানে যায়। সেখানে ২০ জনেরও বেশি আহত মানুষকে চিকিত্সাসেবা দেওয়া হয় এবং তিনি শতাধিক কর্মীকে মহামারী প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।'
এদিকে, চীনের ছংছিং শহরের ৫৫ জন চিকিত্সক নিয়ে চীন সরকারের দ্বিতীয় চিকিত্সাদলটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ১০ জন চিকিত্সক ৭ মে কাঠমান্ডু পৌঁছান। বাকি ৪৫ জন পৌঁছান ৮ মে এবং প্রথম দলটির স্থলাভিষিক্ত হয়।
ওদিকে, চীনা রেডক্রসও নেপালে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চীনা রেডক্রসের আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলের প্রধান ওয়াং ফিং বললেন, 'নেপালে ভূমিকম্পের পর চীনা রেডক্রস দু'টি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রথমত, ২ হাজার তাঁবু নেপালে পাঠানো; এবং দ্বিতীয়ত, দেশটিতে এসব তাবু খাটানো এবং দুর্গতদের চিকিত্সাসেবা দেওয়া।'
তিনি আরো বলেন, চীনা রেডক্রসের উদ্ধারকারী দলটিতে অস্থি বিশেষজ্ঞ, শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞ, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত আছেন। এ ছাড়া, দলটি সঙ্গে করে আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্র, ইসিজি, হেমাটোলজি বিশ্লেষক যন্ত্র ইত্যাদিও নিয়ে যায়। চিকিত্সকদলটি গত ৩০ এপ্রিল কাঠমান্ডুতে পৌঁছায় এবং পয়লা মে থেকে কাঠমান্ডু ও এর কাছাকাছি অঞ্চলে ভূমিকম্পদুর্গতদের চিকিত্সাসেবা দেওয়া শুরু করে। এ পর্যন্ত দলটি প্রায় ১৭০০ জন দুর্গতকে চিকিত্সাসেবা দিয়েছে। ওয়াং ফিং বলেন, 'আমাদের উদ্ধার ও ত্রাণ তত্পরতায় দু'দেশের মৈত্রী আরও জোরদার হয়েছে এবং চীন একটি দায়িত্বশীল বড় দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।'
চীনের বেসরকারি উদ্ধারকারী দলও নেপালে অবদান রেখেছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত 'ব্লু স্কাই' উদ্ধারকারী দল বিশ্বের নানা স্থানের ৬২ জন সদস্যকে নিয়ে কাঠমান্ডুতে যায়। সদস্যরা তাঁদের নিজেদের খরচে বস্ত্র ও প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম ক্রয় করেন। এ ছাড়া, পেইচিংয়ের গণকল্যাণ সংস্থা লিয়ানসিন সমিতির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছাই ফেং বললেন, 'আমি আমাদের সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত চাঁদার অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কাঠমান্ডু যাবো। পরে আমরা আরও ত্রাণসামগ্রী কাঠমান্ডু পাঠাবো।'
তিনি জানালেন, তাঁদের নীতি হল: দুর্গতদের কষ্ট না-দিয়ে সহায়তা করা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমরা দ্বিতীয় দফা ত্রাণকাজে অংশ নিই। এ দফায় মূলত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। একটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ কাজ করতে গিয়ে আমরা যতদূর সম্ভব দুর্গতদের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করি, তাদের কষ্ট বাড়াই না।'(মুক্তা)