Web bengali.cri.cn   
চীনের সিন চিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হরগোস শহর
  2015-07-08 09:47:48  cri


সিন চিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হরগোস (Horgos) শহরটি চীনের সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে মাত্র একটি নদী অতিক্রম করলেই কাজাখস্তান। হরগোস চীন ও কাজাখস্তানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বন্দর এবং রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের জন্য সিন চিয়াং তথা চীনের জানালা হিসেবে বিবেচিত হয়।

হরগোস অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চল প্রশাসন কমিটির উপ-প্রধান কুও চিয়ান বিন সম্প্রতি সিআরআই-কে সাক্ষাত্কার দেন। তিনি বলেন, 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' কৌশল হরগোস-এর অর্থনীতির জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। মধ্যএশীয় আন্তর্জাতিক রেলপথ চালু হলে হরগোস বাইরের বিশ্বের জন্য আরও উন্মুক্ত হবে। কুও চিয়ান বিন বলেন, "'এক অঞ্চল এক পথ', বিশেষ করে রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল কৌশলের সাথে কাজাখস্তানের 'আলোকিত পথ' ধারণার মিল আছে। জুলাই মাসে চালু হবে উরুমুচি থেকে আলমা আতা যাওয়ার আন্তর্জাতিক ট্রেন। হরগোস এ রেলের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টপেজ। নতুন রুটের ফলে উরুমুচি থেকে আলমা আতার দূরত্ব কমে যাবে এবং সময় লাগবে ১২ ঘন্টা কম। হরগোস পশ্চিম চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।"

হরগোসের অন্য একটি সুবিধাও আছে। বর্তমানে শহরটি সরাসরি গাড়ি আমদানি ও রফতানি করতে পারে। আগে বিদেশের গাড়ি সিন চিয়াংয়ে প্রবেশ করত থিয়ান চিন, সাংহাই বা তা লিয়ানসহ অন্য চীনা বন্দরের মাধম্যে। জুন মাসে হরগোসে গাড়ি পরীক্ষা করার সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়। ফলে ভবিষ্যতে হরগোসের মাধ্যমে বিদেশি গাড়ি চীনা বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।

গোটা চীনে বিদেশি গাড়ি সরাসরি আমদানি হয় যে ১৪টি বন্দর দিয়ে, হরগোস সেগুলোর অন্যতম। হরগোস অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চল প্রশাসন কমিটির উপ-প্রধান কুও চিয়ান বিন বলেন, "আগে আন্তর্জাতিক রেলপথে যেসব ট্রেন ইউরোপে যেত, সেগুলো যাওয়ার সময় পূর্ণ এবং আসার সময় খালি থাকত। এখন আমার খালি কন্টেইনারে করে ইউরোপ থেকে কিছু গাড়ি আমদানি করতে পারি। রেলের মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপ থেকে ১০-১৫ দিনে হরগোস পৌঁছানো যায়। নৌপথে এটুকু পথ পাড়ি দিতে ২৫ দিন বেশি লাগে; পরিবহন খরচও বেশি।"

যদিও হরগোসে নিজস্ব কিছু সুবিধা আছে, কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির কারণে হরগোসের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কুও চিয়ান বিন বলেন, "বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো পরিবর্তনের সমস্যা আমাদেরও আঘাত করেছে। সত্যি বলতে কি, বিশ্ব পরিস্থিতি হরগোসের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে আমরা দু'টি ১৩০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ বা অঞ্চলকে সেবা দিচ্ছি। চীনের লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি এবং পশ্চিম ইউরোপ ও মধ্য-এশিয়ার ৫টি দেশের মোট লোকসংখ্যাও প্রায় ১৩০ কোটি। তবে, ছোট একটি বন্দর থেকে জাতীয় কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে হরগোস এবং এর অর্থনীতির উপর আমরা আস্থা রাখি। "

প্রিয় শ্রোতা এখন একসঙ্গে উপভোগ করব একটি সংগীত। গানের নাম 'তৃণভূমির রাত'। গানের পর আবারও হরগোস নিয়ে আলোচনা হবে।

আগেই বলেছি, হরগোস সিন চিয়াং ও মধ্য-এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর। হরগোসের পর্যটনশিল্পও উন্নত। এখন আমরা এ বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরব।

কিছুক্ষণ আগে আমরা শুনছিলাম 'তৃণভূমির রাত' গানটি। 'তৃণভূমির রাত' ১৯৫৯ সালে মুক্তি পাওয়া 'সবুজ তৃণভূমি ' নামক একটি চীনা চলচ্চিত্রের প্রধান গান। এটা চীনা লোকসংগীতের একটি সেরা নিদর্শন। গানটি রচিত হয়েছে হরগোসের তৃণভূমিতে।

অনেকে হরগোসকে একটি বিখ্যাত বন্দরনগরী হিসেবে চেনেন। তারা জানেন না যে, এ শহরে পর্যটনসম্পদ প্রচুর। চলতি বছর, পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে হরগোস ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এইসব অনুষ্ঠানের মধ্যে আছে: চীন-কাজাখস্তান বরফ পর্যটন দিবস ও প্রথম আন্তর্জাতিক পীচ ফুল সংস্কৃতি পর্যটন উত্সব। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা চীন-কাজাখ সীমান্তে ঘুরে বেড়ানোর এবং কেনাকাটার মজা উপভোগ করতে পারেন।

জুলাই মাস চীন-কাজাখস্তান সীমান্ত-পর্যটনের জন্য একাধিক সুখবর আছে। এ মাসে চালু হবে উরুমুচি-হরগোস-আলমা আতা আন্তর্জাতিক পর্যটন ট্রেন। অন্যদিকে, পর্যটনরা বন্দরে নেমে অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। অনেক পর্যটন কোম্পানি এ সুযোগ গ্রহণ করেছে। সিন চিয়াং হুয়া ইয়ু পর্যটন কোম্পানির সহকারী সাধারণ ব্যবস্থাপক ছাং চি ছিন বলেন, "যখন আমরা প্রথম অন-অ্যারাইভাল ভিসা-ব্যবস্থা চালুর কথা শুনি, তখনই উরুমুচি আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আসলে ২০১২ সালেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা-ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগল। এ নীতি এতদঞ্চলে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বাড়াবে।" ছাং চি ছিন মনে করেন, কাজাখ পর্যটকদের জন্য হরগোসে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে; এখানে আছে প্রাকৃতিক সম্পদ, সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ইত্যাদি। তিনি বলেন, "হরগোস সীমান্ত অঞ্চল, তৃণভূমি, হ্রদসহ নানা দর্শনীয় স্থান কাজাখস্তানের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে উইগুর, কাজাখসহ নানা সংখ্যালঘু জাতির বাস। তাদের সংস্কৃতিও কাজাখস্তানের পর্যটকদের আকর্ষণ করে।"

হরগোস সীমান্তে কাজাখস্তানের নাগরিকদের প্রায়ই কেনাকাটা করতে দেখা যায়। কাপড়, মাফলার ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস তাদের প্রিয়। অন্যদিকে, চীনা জনগণ যখন-ইচ্ছা-তখন কাজাখস্তানে যেতে পারেন না। কারণ, ভিসা সমস্যা। তবে হরগোস সীমান্তে চীন-কাজাখস্তান সহযোগিতাকেন্দ্র রয়েছে এবং এখানকার দোকানগুলো চীনা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। হরগোস অর্থনীতি উন্নয়ন অঞ্চল পর্যটন বিভাগের উপ-প্রধান মা হুয়ান হুয়ান বলেন, "আমাদের চীন-কাজাখস্তান সহযোগিতাকেন্দ্র বিশ্বে অনন্য। মাত্র এই একটি কেন্দ্র দু'দেশের সীমান্তে অবস্থিত। আমাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করলে একজন কাজাখস্তান নাগরিক আসলে চীনে প্রবেশ করেন। এটা আসলে সীমান্ত-পর্যটনের একটি নতুন পদ্ধতি। এ কেন্দ্রকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে দু'দেশ যৌথভাবে অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে।"

বর্তমানে কাজাখস্তানের পর্যটক পাসপোর্ট নিয়ে এবং চীনা পর্যটক আইডি কার্ড নিয়ে এ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। এখানে চকোলেট, পারফিউম, পাঁউরুটি, মধু ও কালো চা'সহ কাজাখস্তানের বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থাকে মে পর্যন্ত ১১ লাখ মানুষ সহযোগিতাকেন্দ্রে আসা-যাওয়া করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩৮ শতাংশ বেশি।

সহযোগিতাকেন্দ্রে অবস্থিত শুল্কমুক্ত দোকানও অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করে। বর্তমানে চীনে হাই নান দ্বীপের সান ইয়ান শহরেও রয়েছে একটি শুল্কমুক্ত দোকান। সান ইয়ান শুল্কমুক্ত দোকান থেকে প্রতিজন বছরে দু'বার ৮০০০ ইউয়ান করে ১৬০০০ ইউয়ান মূল্যের শুল্কমুক্ত পণ্য কিনতে পারেন। তবে হরগোসের শুল্কমুক্ত দোকান থেকে প্রতিদিন ৮০০০ ইউয়ান মূল্যের শুল্কমুক্ত পণ্য কেনা যায়। এ নীতি চীনাদের কাছে আকর্ষণীয়।

মা পিং উরুমুচি থেকে এখানে এসেছেন। তিনি তার বন্ধুর জন্য শুল্কমুক্ত দোকান থেকে উপহার কিনেছেন। তিনি বললেন, "আমি এ নিয়ে দু'বার এখানে এলাম। আমার বন্ধুও মাঝে মাঝে এখানে আসেন। এখানে এলে নিয়ম করেই শুল্কমুক্ত পণ্য কিনে থাকি। আগে আমি দুবাই, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শুল্কমুক্ত দোকান থেকে পণ্য কিনেছি। তুলনামূলকভাবে এখানে দাম কম।"

চীনাদের কাজাখস্তানে ৭ দিন ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করার সুযোগ দিতে কাজ করছে হরগোসের স্থানীয় সরকার। হরগোস অর্থনীতি উন্নয়ন অঞ্চল প্রশাসন কমিটির উপ-প্রধান কুও চিয়ান বিন ভবিষ্যতে হরগোস পর্যটকশিল্পের উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, "২০১৬ বা ২০১৭ সালে হরগোস পর্যটনশিল্পে বেশ অগ্রগতি অর্জন করবে। গ্রাম, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান, মুক্তবাণিজ্য বন্দর, শুল্কমুক্ত দোকান ইত্যাদির সমন্বয়ে হরগোস ভবিষ্যতে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে।"

 (শিশির/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040