১. সুদের হার ঠিক না-হওয়ায় পদ্মা সেতুকে সংযোগকারী নতুন রেললাইন নির্মাণ ও কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণসহ নয়টি প্রকল্পেচীনের সাড়ে সাতশ কোটি ডলারের ঋণ-প্রস্তাব এখনও ঝুলে আছে।
সম্প্রতি চীনা দূতাবাস দুই শতাংশ হারেসুদ চেয়ে ৭৪৮ কোটি ডলারের ঋণের প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-তেপাঠায়। বাংলাদেশ সরকার সুদ কমিয়ে দেড় শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এরআগে গত বছর চীন সরকারের অর্থায়ন চেয়ে ১০টি প্রকল্পের একটি তালিকা পাঠায় বাংলাদেশ। ওই তালিকা থেকে বাছাই করে প্রায় ৯৪০ কোটি ডলারের নয়টি প্রকল্পে ৭৪৮ কোটি ডলার অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন।
এ প্রসঙ্গে ইআরডিরএশিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আসিফ-উজ-জামান স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, সুদের হার দেড় শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রস্তাব সম্পর্কে চীন সরকার এখনও অবস্থান পরিস্কার করেনি।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে সাড়েতিন কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলনির্মাণে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের সেতু বিভাগ ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) মধ্যে ৭০ কোটি ৫০লাখ ডলারের এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ঋণের সুদহার কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্যিক চুক্তি হওয়ার পরও আর্থিক চুক্তি হতে কমপক্ষে ছয় মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়ের মধ্যে সুদহার নিয়ে দর কষাকষি চলতে থাকবে।
উল্লেখ্য, চীন সরকার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী হলেও ২০১৩ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সাথে দেশটির কোনো ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এর আগে চীনের সঙ্গে সর্বশেষ ঋণচুক্তি ছিল চলমান 'পদ্মাজশলদিয়া ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন' প্রকল্পে।
২. অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-র সার্বিক কান্ট্রি রেটিংয়ে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে।
এতদিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ ও স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশগুলো এবং সুইজারল্যান্ড ও জাপানের মত দেশগুলোর সমন্বয়েগড়া এই সংস্থার রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬। এবার একধাপ এগিয়ে তা ৫-এ উন্নীতহ'ল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতাও দুর্বল বহিঃচাহিদা থাকা সত্ত্বেও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সহনশীল অর্থনীতির সাথে উচ্চ ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের রেটিং বাড়ার মূল কারণ।
ওইসিডি-র রেটিংয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার এবং মঙ্গোলিয়ার চেয়ে এগিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে কেবল ভারতের চেয়ে।
৩. বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে নিজেদের সূচকে বাংলাদেশকে এক ধাপ এগিয়ে আনা হয়েছে বলে গত বুধবার বিশ্ব সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তানও নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যআয়ের দেশে উন্নীত করা হয়েছে। এই দেশগুলোর মানুষের মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ১০২৪ ডলার থেকে ৪১২৫ ডলার বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
বাংলাদেশ সরকারের হিসেবে দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় এখন ১৩১৪ ডলার।
৪.এদিকে, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আরও তিন-চার বছর লাগবে।
ঢাকা সফররত ভূটানের অর্থমন্ত্রী লিয়ন পো ন্যামগে দর্জি'র সাথে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথাবলেন।
বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা এক ধরনের প্রমোশন ও সন্তুষ্টির বিষয়।
'বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ এখন আর পাবে কি না' জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্তস্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বোর্ড সভায় এটি অনুমোদিত হতে হবে। আর এজন্য আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। ততদিন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাসমূহ পাবে।
৫.বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের ত্রৈমাসিক-ভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে—চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) সবুজ অর্থায়নে ব্যাংকগুলো ৮৬৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা আগের তিন মাসে ছিল ১৪,৮৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকগুলোর সবুজ অর্থায়নে বিনিয়োগ কমেছে ৬২০৪ কোটি টাকা বা ৪১.৬৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী—চলতি বছর পুরনো ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগের পাঁচ শতাংশ এ খাতে অর্থায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে ২০১৫সালে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২৫,০৩৭ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
৬.সদ্যসমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৫৩১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪২৩কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৬০ শতাংশ। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০১২-১৩ অর্থবছরে।ওই অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার।
৭. বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উদ্যোগে বোরবার থেকে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী বর্ষা মেলা ও কারুশিল্প প্রদর্শনী। মতিঝিলের বিসিক ভবনে আয়োজিত মেলায় হস্ত ওকুটির শিল্পজাত বিভিন্ন পণ্যের ৪৮ টি স্টল আছে। এ ছাড়াপ্রদর্শনীতে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের তৈরি হস্ত ও কুটির শিল্পজাত পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকছে।
৮. ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে অপ্রচলিত শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানি টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা 'সফটব্যাঙ্ক'।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে ভারতের সৌর বিদ্যুত্ প্রকল্পে ধাপে ধাপে ২,০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা জানান সংস্থার কর্মকর্তারা। এর পরই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে দেখা করে সফটব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এবং সিইও মাসায়োশি সন জানান, ভবিষ্যতে এই রাজ্যে অপ্রচলিত শক্তিখাতে বিনিয়োগ করতে চান তাঁরা।
উল্লেখ্য, দেশীয় সংস্থা ভারতী এন্টারপ্রাইজেস এবং তাইওয়ানের ফক্সকনের সঙ্গে জোট বেঁধে ভারতে আগামী ১০ বছরে অপ্রচলিত বিদ্যুতে বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে সফটব্যাঙ্ক। এ জন্য তিনটি সংস্থা এসবিজি ক্লিনটেক নামে যৌথ উদ্যোগ গড়েছে। যার সিংহভাগ মালিকানা থাকবে সফটব্যাঙ্কের হাতে। বাকি দুই সংস্থা পরিকাঠামো তৈরি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করবে। ন্যূনতম ২০ গিগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করাই যৌথ উদ্যোগের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে
সফটব্যাঙ্ক।
৯. এদিকে, ব্রাজিলের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে ভারতীয় ভোগ্যপণ্য সংস্থা 'ভিডিওকন'। গত কয়েক বছর ধরেই পেট্রোলিয়াম শিল্পে ব্যবসা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে সংস্থাটি। তারই অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ। ভিডিওকনের প্রধান বেণুগোপাল ধুতের দাবি, ব্রাজিলে যে-তেলভাণ্ডারের খোঁজ মিলেছে, তাভারতের বৃহত্তম তেল ক্ষেত্রের থেকেও বড়। এ বছরের শুরুতেই উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের সের্গিপে অববাহিকায় তেলের খোঁজ পেয়েছে ভিডিওকন ও ব্রাজিলের সরকারি সংস্থা পেট্রোলিও ব্রাজিলেইরো।
১০. পাকিস্তানের পাঞ্জাবে উত্পাদিত আমের ৭০ শতাংশই বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে স্থানীয় বাজারে আমের সরবরাহ কমে গেছে।
এদিকে, এত বিপুল পরিমাণ আম নষ্ট হওয়ায় এবার দেশটির আম রফতানির লক্ষ্যমাত্র অর্জিত না-হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে পাকিস্তান এক লাখ টন আম রফতানির লক্ষ্যমাত্র ঠিক করেছিল। এরই মধ্যে দেশটি দুই কোটি পঁচিশ লাখ ডলার মূল্যের ৪১ হাজার টন আম রফতানি করেছে। (আলিম)