0703yin
|
ফোরামে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক রাজনীতিবিদরা পৃথক পৃথকভাবে বলেছেন, চীনা নেতার উত্থাপিত 'এক অঞ্চল এক পথ' উদ্যোগ কার্যকরভাবে এতদাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে জোরদার করবে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবটি হলো একটি মহান কৌশলগত ধারণা। এ ধারণাকে কার্যকর করলে দেশ-দেশ সম্পর্ক সুসংহত হবে। বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তানের মতো দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতিময় বসবাসকারী প্রতিবেশীর জন্য এটি কল্যাণকর ধারণা। আজিজ বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' হলো বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক ও মৈত্রীকে আরো সুসংহত করার একটি কৌশলগত ধারণা। চীন পাকিস্তানে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করবে। এতে রয়েছে পথ, সেতু ও বিদ্যুত্ উত্পাদনসহ বিভিন্ন প্রকল্প। 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্প কার্যকর করার মাধ্যমে পাকিস্তান প্রথমত উন্নত হবে। দ্বিতীয়ত, জনসাধারণ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। তৃতীয়ত, প্রকল্প শেষ হবার পর গোটা দেশ এ থেকে উপকৃত হবে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ
চীনে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হোসেন খোখার মনে করেন, 'এক অঞ্চল এক পথ' ধারণা বাস্তবায়ন স্থানীয় অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ হলো একটি মহান প্রস্তাব। শুধু চীনের জন্যই নয়, বরং পাকিস্তান ও গোটা এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যা দূর করতে চায়। চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিতে সহায়ক হবে। চীনের ভাইস-প্রেসিডেন্টের উত্থাপিত মানবজাতির 'শান্তি ও নিরাপত্তা ভাগ্য কমিউনিটি' প্রতিষ্ঠা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী ইফতেখার আহমেদ বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর মাধ্যমে আরো ঘনিষ্ঠ আন্তঃযোগাযোগ বাস্তবায়ন করবে। এ সময় সম্প্রীতিময় উন্নয়ন ধারণায় অবিচল থাকা চীন এশীয় অঞ্চলের অভিন্ন উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে। তিনি বলেন, চীনের সম্প্রীতিময় উন্নত ভবিষ্যৎ এশিয়ার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এশীয় অঞ্চলের সদস্য হিসেবে তুলনামূলকভাবে উন্নত দেশ, যেমন চীন ও ভারতের অভিন্ন উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ বলেছেন, সন্ত্রাসী ও চরমপন্থা হলো মানবজাতির শত্রু এবং একে নির্মূল করা উচিত। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমাজের আরো বেশি সহযোগিতা করা দরকার। তিনি বলেন, চীন ও পাকিস্তান সবসময় সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা করছে। এর মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়সহ কিছু ব্যবস্থা। আমরা সবসময় সন্ত্রাসী নির্মূল করার চেষ্টা করেছি। আমরা সবসময় সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিতদের বলেছি, এতে কারো জন্য কোনো কল্যাণ নেই। পাকিস্তানের প্রতিটি সরকার এবং বাহিনী সন্ত্রাস দমনের জন্য অনেক চেষ্টা ও ত্যাগ স্বীকার করেছে।
অংশগ্রহণকারী থিংক ট্যাংক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদানে সামরিক নিরাপত্তা ছাড়া অনেক প্রথা-বহির্ভূত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশের সমন্বিতভাবে এসব নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলা করা দরকার।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে বিশ্বশান্তি ফোরাম শুরু হয়। এর উদ্যোক্তা ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এটি চীনের প্রথম বেসরকারি সংস্থার আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ফোরাম। ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োধোইনো, ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডমিনিক দে ভিল্লেপিন এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজসহ বিদেশি রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য মহলের থিংক ট্যাংক বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতসহ মোট ৫ শতাধিক দেশি-বিদেশি অতিথি এবারের ফোরামে অংশ নিয়েছেন।
প্রেমা/তৌহিদ