0629jingji.mp3
|
চীনের সমাজবিজ্ঞান অ্যাকাডেমি এবং সমাজবিজ্ঞান দলিল প্রকাশনালয় গত ২৪ জুন পেইচিংয়ে প্রকাশ করে 'চীনের নতুন তথ্যমাধ্যম উন্নয়ন রিপোর্ট, ২০১৫' শীর্ষক নীলপত্র। এতে বলা হয়, চীনের নতুন তথ্যমাধ্যম খাত দ্রুত উন্নত হচ্ছে এবং মাইক্রো ব্লগ এখন মূল প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রায় ৬০ শতাংশ মিথ্যা সংবাদ সর্বপ্রথমে মাইক্রো ব্লগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার উইচ্যাটে সবচে' বেশি গুজব ছড়ায়। এইসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এবার শুনুন একটি প্রতিবেদন।
চীনের সমাজবিজ্ঞান অ্যাকাডেমি গত ছয় বছর ধরেই দেশের নতুন তথ্যমাধ্যমের গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করছে। সদ্যপ্রকাশিত 'নতুন তথ্যমাধ্যম উন্নয়ন রিপোর্ট' সেই গবেষণারই ফল। রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের নতুন তথ্যমাধ্যমের উন্নয়নকেন্দ্র ইতোমধ্যেই এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৪ কোটি ৯০ লাখ; মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২৮ কোটি ৬০ লাখ এবং মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ কোটি ৭০ লাখ। বলা বাহুল্য, এ দিক দিয়ে চীন বিশ্বের যে-কোনো দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।
চীনের সমাজবিজ্ঞান অ্যাকাডেমির উপ-প্রধান লি পেই লিংয়ের মতে, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সরকারের প্রচেষ্টা যোগ হওয়ায় নতুন তথ্যমাধ্যম দ্রুতগতিতে চীনা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, "চীনে নতুন তথ্যমাধ্যম উন্নয়নের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়। চীনের জনসাধারণ, বিশেষ করে আধুনিক যুবক-যুবতীরা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সেবা পেতে নতুন তথ্যমাধ্যমকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন। অনলাইনে তারা কেনাকাটা করছেন, বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট করছেন, ট্যাক্সি ভাড়া করছেন, শিক্ষা দেওয়া ও নেওয়ার কাজ করছেন, চিকিত্সাসেবা নিচ্ছেন।"
নীলপত্রে বলা হয়েছে, চীন বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেটের বড় দেশ। এই দেশে মাইক্রো প্রচারমাধ্যমগুলোই প্রধান প্রচারমাধ্যমগুলোর জায়গা দখল করে নিয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেটের উপর আইনি নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে হয়েছে এবং ইন্টানেট শিল্পে চীন বিশ্ববাজারে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া, এই শিল্পে নতুন নতুন প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।
মাইক্রো প্রচারের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নীলপত্রের প্রধান সম্পাদক, চীনের সমাজবিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সংবাদ ও প্রচার গবেষণালয়ের পরিচালক থাং শু জুন বলেন, "মাইক্রো প্রচার মানে মাইক্রো ব্লগ ও উইচ্যাটের মত সামাজিক যোযাযোগ মাধ্যমগুলোর দ্বারা তথ্যপ্রচার। আগামী বছরই হয়তো কোনো এক নতুন প্রচারপদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে।" তিনি আরও বলেন, "২০১৪ সালে চীনে মাইক্রো ব্লগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৩ সালের চেয়ে ১১.৪ শতাংশ হ্রাস পেলেও, সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে মোবাইলে ব্লগ ব্যবহারকারী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। এদিকে, উইচ্যাট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ কোটি ছাড়িয়েছে। প্রত্যেক ব্যবহারকারী প্রতিদিন গড়ে ৫.৮৬টি লেখা বা মন্তব্য পড়েন।"
ইন্টারনেট চীনাদের জীবনযাপন পদ্ধতি বদলে দিয়েছে। কিন্তু মিথ্যা তথ্য প্রচার, বিশেষ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে-পড়া-গুজব সামাজিক নিরাপত্তার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নীলপত্রের 'নতুন তথ্যমাধ্যম যুগের মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও এ প্রবণতার মোকাবিলা' শীর্ষক অংশে ২০১৪ সালে প্রচারিত ও আলোচিত ৯২টি মিথ্যা সংবাদ পর্যালোচনা করা হয়। এ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এইসব মিথ্যা খবরের ৫৯ শতাংশই মাইক্রো ব্লগের মাধ্যমে ছড়িয়েছে।
উইচ্যাটে ছড়িয়ে-পড়া-গুজবও চীনের নতুন তথ্যমাধ্যমসংশ্লিষ্ট একটি সমস্যা। নীলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, উইচ্যাট ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে দক্ষ। তাদের প্রচারিত তথ্যগুলো কেবল পরিচিতজনদের মধ্যেই ছড়ায়। তাদের অনেকেই উইচ্যাটের মাধ্যমে রাজনৈতিক গুজব, মিথ্যা সংবাদ এবং নিজেদের ধন-সম্পদসম্পর্কিত তথ্য প্রচার করতে পছন্দ করেন। এ ছড়া, সপ্তাহের মঙ্গলবারেই উইচ্যাটে সবচে' বেশি গুজব ছড়ায়। আর উইচ্যাটে যেসব তথ্য প্রচার করা হয় তার ৭ শতাংশই মিথ্যা।
থাং শু জুন বলেন, "আমরা বিশেষ করে উইচ্যাটে ছড়িয়ে পড়া গুজব নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, খাদ্য নিরাপত্তা, গণ নিরাপত্তা, রোগ-বালাই, স্বাস্থ্য, প্রতারণা, ধন-সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে তথ্য বিনিময় এবং নিজ নিজ সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগমাধ্যম হিসেবেই সাধারণত উইচ্যাট ব্যবহার করা হয়। উইচ্যাটে তথ্য প্রচারের সুবিধা হচ্ছে, একসঙ্গে বহু লোকের কাছে এ তথ্য পৌঁছে যায় এবং এইসব তথ্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। অথচ প্রচারিত অনেক তথ্যেরই কোনো ভিত্তি নেই।"
নীলপত্রে আরও বলা হয়েছে, গেল বছর ইন্টারনেট নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন চীনের রাষ্ট্রীয় কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। এরই মধ্যে চীনের নতুন তথ্যমাধ্যম দ্রুত উন্নয়নের পথে প্রবেশ করে। এ প্রসঙ্গে থাং শু জুনের বিশ্লেষণ হচ্ছে: চীনের নতুন তথ্যমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, বাজারের আকার বড় হচ্ছে, প্রযুক্তিগত পরিবেশ উন্নততর হচ্ছে। আর চীন নতুন তথ্যমাধ্যমের বড় দেশ থেকে নতুন তথ্যমাধ্যমের শক্তিশালী দেশে পরিণত হবার পথে হাঁটছে। (ইয়ু/আলিম)
| ||||