প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগতম। সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের 'চলতি প্রসঙ্গ' অনুষ্ঠান।
বন্ধুরা, এ অনুষ্ঠানে আপনাদের জন্য তুলে আনা হয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।
আর এ আয়োজনে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি প্রকাশ এবং আমি আইরীন নিয়াজী মান্না।
প্রকাশ : তাহলে মান্না আপা আজ আমরা কি কি খবর নিয়ে আলোচনা করবো।
মান্না : ধন্যবাদ প্রকাশ। বাছাই করা একটি সংবাদ দিয়েই আজ আলোচনা শুরু করা যাক।
প্রথম খবর : চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ, সিংহ, জলহস্তী, ভাল্লুক ও নেকড়েসহ বেশ কিছু প্রাণী পালিয়ে গেছে
ইউরেশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের দেশ জর্জিয়ার রাজধানী তিফলিসে একটি চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ, সিংহ, জলহস্তী, ভাল্লুক ও নেকড়েসহ বেশ কিছু প্রাণী পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় শহরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
প্রবল বন্যায় চিড়িয়াখানাটির খাঁচাগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রাণীগুলো পালিয়ে যায় বলে রোববার (১৪ জুন) কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
বাঘ-সিংহের মতো ভয়ংকর প্রাণী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিফলিস শহরের অধিবাসীদের জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কিছু প্রাণীকে এরই মধ্যে পাকড়াও করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরের প্রধান সড়কের একটি মোড় থেকে একটি জলহস্তীকে চেতনানাশক বন্দুক দিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে চিড়িয়াখানাটি থেকে কত সংখ্যক প্রাণী পালিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
বন্যার পর তিফলিস শহরে অন্তত ৮ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জর্জিয়ার দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চিড়িয়াখানার কর্মী রয়েছেন তিনজন। বন্যার কবলে পড়ে, নাকি পালিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোর হামলায় তাদের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে এখনও কিছু জানা যায়নি। এছাড়া শহরটিতে নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ জর্জিয়ার রাজধানী শহরটিতে প্রায় ১১ লাখ মানুষের বাস। উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সার্বক্ষণিক তিফলিসের আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে।
দ্বিতীয় খবর : বিশ্ব বাবা দিবস
জুন ২১ হলো বিশ্ব বাবা দিবস। মা দিবসের মত সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দেশে বাবা দিবসও পালন করা হয়। বাবার প্রতি ভালবাসা জানাতে আজ বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হবে। সন্তানেরা বাবা দিবসে নানা পরিকল্পনা করে থাকেন বাবাদের জন্য। একটি গিফট অথবা এ দিবসে বাবা-মাকে নিয়ে খেতে যাওয়া, কিংবা দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়াসহ নানা পরিকল্পনা করেন সন্তানরা।
বাবা দিবস সম্পর্কে একটি অতি জনপ্রিয় শ্লোগান হচ্ছে,'হেলদি ড্যাডস, হেলদি কিডস'। তাই বাবাকে থাকতে হবে সব সময় সুস্থ্য-সবল।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ছেলে-মেয়েরা সবচেয়ে বেশি কেয়ারিং হয় বাবার প্রতি। বাবার সুখে-দুখে সন্তানই অধিক সংবেদনশীল থাকেন। আর বাবার প্রতি সন্তানের এই দায়িত্ববোধের শিক্ষাটি আসে মায়ের কাছ থেকে। বাবার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সন্তানদের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা,সহযোগিতা থাকে সবচেয়ে বেশি। বাবা-মা সন্তানের জীবনের চরম আশীর্বাদ। আর তাই তো শুধু বছরে একটি দিন নয়,বছরের প্রতিটি দিনই হোক বাবা দিবস। তাহলেই বাবারা ভাল থাকবেন।
তৃতীয় খবর : ভূমিকম্পের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে নেপালের প্রায় ১০ লাখ অধিবাসী (১৪ জুন ২০১৫ রবিবার)
স্মরণকালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন হিমালয়কন্যা নেপালের প্রায় ১০ লাখ অধিবাসী। দেশটির জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনের 'দুর্যোগ পরবর্তী মূল্যায়ন' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান গোবিন্দ রাজ পোখারেল বলেন, ভূমিকম্পের আগে নেপালে দরিদ্রতার হার ছিল ২৩.৮ শতাংশ। দুর্যোগের পর মোট জনসংখ্যার আড়াই থেকে সাড়ে তিন শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন।
গত ২৫ এপ্রিল নেপালে রিখটার স্কেলে ৭.৯ মাত্রার শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর সতের দিনের মাথায় গত ১২ মে আবারও একটি নতুন ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশটি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৪। এই দুই ভূমিকম্প ছাড়াও এ পর্যন্ত নেপালে সাড়ে তিনশ'র বেশি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। শক্তিশালী দুই ভূমিকম্পে নড়ে ওঠে দেশটির ৭৫টি জেলার ৩৬টি। এর মধ্যে ১৪ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।
ভূমিকম্পের কারণে নেপালে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার লোকের প্রাণহানীর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২১ হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে ঘরছাড়া হয়েছেন ১০ লাখ নেপালি।
জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন শক্তিশালী দুই ভূমিকম্প ও পরাঘাতগুলোর কারণে দেশটিতে সম্পদহানীর আর্থিক পরিমাণ হিসাব করেছে পাঁচশ' ১৩ কোটি মার্কিন ডলার। সেই সঙ্গে বিভিন্নখাতে বৈদেশিক আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একশ' ৮৮ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই মুহূর্তে পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের জন্য নেপাল সরকারের প্রয়োজন ছয়শ' ৬৬ কোটি মার্কিন ডলার।
আগামী ২৫ জুন প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে নেপাল কর্তৃপক্ষ। গত তিন দশক ধরেই 'মানব উন্নয়ন সূচকে' দেশটির উন্নতি ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু মারাত্মক এই দুর্যোগের কবলে পড়ে নেপালের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পের কারণে দেশের কৃষি, পানি ও পয়নিঃস্কাশন ব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। দুর্যোগের কবলে পড়া জনগোষ্ঠীর বাসস্থান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জীবন নির্বাহ মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, নেপালের ২৬.৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী ভূমিকম্পে আঘাতপ্রাপ্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দা। এই সংখ্যা ২০১৩ সালে দেশের দরিদ্রতার হারের চেয়ে বেশি। সে বছর নেপালে দরিদ্রতার হার ছিল ২৪.৮ শতাংশ, অর্থাত মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ।
সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় এনে ভূমিকম্পের ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নেপালের ৭ লাখ থেকে ৯ লাখ ৮২ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন বলে প্রতিবেদনে জানায় পরিকল্পনা কমিশন।
চতুর্থ খবর : পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হলো আন্তর্জাতিক যোগ ব্যায়াম দিবস
জুন ২১ হলো বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ ব্যায়াম দিবস। এদিন সকালে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের উ সি ক্রীড়া কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ৫০০ জনেরও বেশি যোগ ব্যায়াম অনুরাগী উপস্থিত ছিলেন এবং তারা বিশেষ ধরনের এ শরীরচর্চায় অংশ নেন।
চীনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আশোক কে. কণ্ঠ ও চীনে নিযুক্ত জাতিসংঘ কর্মকর্তা ক্যাথরিন সোজি এবং পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক লি ইয়ান সুন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন।
আজ তাহলে এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন বন্ধুরা; কল্যাণে থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন। (প্রকাশ/মান্না)
0625redian.m4a
|