Web bengali.cri.cn   
আকাশের সাথে-ড্রাগন নৌকা উত্সব
  2015-06-20 16:48:41  cri

ট: প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, da jiahao! আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন 'আকাশের সাথে'। আর এ আয়োজনে আপনাদের সঙ্গে রয়েছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনেন আকাশ।

ট: ভাই, আজ তোমাকে এবং আমাদের শ্রোতাবন্ধুদেরকে আমি আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার অংশ বিশেষ আবৃত্তি করে শোনাবো, কেমন?

কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'বিদ্রোহী কবিতা'র অংশবিশেষ

বল বীর-

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!

বল বীর-

বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'

চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'

ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া

খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া,

উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!

মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

বল বীর-

আমি চির-উন্নত শির! আমি চিরদুর্দম, দূর্বিনীত, নৃশংস,

মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!

আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,

আমি দূর্বার,

আমি ভেঙে করি সব চুরমার!

আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,

আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!

আমি মানি না কো কোন আইন,

আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর

আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!

বল বীর-

চির-উন্নত মম শির! আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি,

আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি'।

আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,

আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,

আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি' ছমকি'

পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি'

ফিং দিয়া দেই তিন দোল্‌;

আমি চপোলা-চপোল হিন্দোল।

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা',

করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,

আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!

আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরীত্রির;

আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির অধীর।

ক: ভাইয়া, নজরুলের এ কবিতা শুনে আমার সারা শরীর গরম হয়ে উঠেছে । আমি তাকে খুব ভালোবাসি। প্রত্যেক মানুষেরই নিজের দেশকে মনপ্রাণ, জীবন দিয়ে ভালোবাসা উচিত। নিজের চোখকে রক্ষা করার মতো নিজের দেশকে ভালোবাসা উচিত, দেশের জন্য জীবন উত্সর্গ করা উচিত। দেশ আমাদের মা, আমাদের সব কিছুই।

ভাইয়া, আমি বাংলাদেশে প্রথম যখন চীনের দূতাবাসে যাই তখন সেখানে গেটের সামনে আমাদের চীনের জাতীয় পতাকা দেখতে পাই। এই পতাকা দেখে আবেগে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে।

ট: হ্যাঁ ভাই, দেশ আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। দেশ আমাদের মা, দেশ আমাদের কাছে অক্সিজেনের মতো যা নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি । আমার প্রিয় জন্মভূমি, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে আমি মিস করি প্রতি মুহূর্তে। আমার অস্তিত্বে বাংলাদেশ বহমান সবসময়। প্রিয় বাংলাদেশ, তোমাকে ছেড়ে সুদূর প্রবাসে থাকলেও তোমার মাটিতেই মনের বিচরণ সবসময়। তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

ক: আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।।

ট: ও মা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে।

মরি হায়, হায়রে-

ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।

কী সোভা, কী ছায়াগো , কী স্নেহ, কী মায়াগো-

কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে,নদীর কূলে কূলে।

মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,

মরি হায়, হায়রে-

মা তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি।।

ক: ভাই, আমার মনে হচ্ছে আমি এখন আবার উত্তরায় ফিরে এসেছি। আমাদের সোনার বাংলাকে আমি খুবই মিস করি।

ট: আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর আমারও মনে হচ্ছে আমি বাংলাদেশে আছি। মনে হচ্ছে বাংলাদেশে সবাই মিলে পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইছি।

ক: ভাই, আমরা নজরুল, রবীন্দ্রনাথসহ সকল দেশপ্রেমিক কবিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং তাদেরকে সবসময় গভীরভাবে স্মরণ করতে চাই। কারণ তারা আমাদের কান্নার সুযোগ দিয়েছেন, তারা আমাদের ভালোবাসার সুযোগ দিয়েছেন, তারা আমাদের সবকিছু স্মরণ করার সুযোগ দিয়েছেন, তারা আমাদের শক্তিশালী হবার সুযোগ দিয়েছেন।

ট: হ্যাঁ, তাদের কবিতা, গান, নাটক তথা সমগ্র রচনা আমাদের সবসময় সাহস দেয়, অনুপ্রাণিত করে, উত্সাহিত করে। আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। আমাদের জীবনযুদ্ধে জয় করার কথা বলে। আমাদের অন্ধকার রাতে আলো জ্বালাতে বলে। আমাদের তীর হারা গভীর সমুদ্র পাড়ি দিতে বলে ।

ক: ভাইয়া, আজ চীনের একটি বিশেষ দিন,তুমি জানো কি?

ট: কিসের দিন ভাই?

ক: আজ চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী উত্সবের দিন, নাম ড্রাগন নৌকা উত্সব। এ দিবসটি বিশেষ করে নজরুল বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো চীনের একজন দেশপ্রেমিক কবি সম্পর্কিত ।

ট: আচ্ছা, আমরা তাহলে তার সম্পর্কে জানতে চাই।

ক: অবশ্যই, তবে প্রথমে আমরা একটি গান শুনবো, কেমন?

ট: নিশ্চয়ই। বন্ধুরা, এখন তাহলে আমরা সবাই মিলে একটি দেশাত্মবোধক গান শুনবো।

(বাংলা দেশাত্মবোধক গান)

ক: ভাইবোনেরা, চীন একটা সময় সাতটি দেশ ছিলো। এদের মধ্যে একটি দেশ হলো ছু। ছু দেশে একজন কবি ছিলেন, নাম ছু ইয়ান। তিনি একদিকে যেমন বুদ্ধিমান, অন্যদিকে খুব গুরুত্বপূর্ণও। তার মন, চরিত্র ডায়মন্ডের মতো পরিষ্কার। তিনি এক সময় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

ছু দেশ ছাড়াও চীনে তখন আরো ছয়টি দেশ ছিলো। এদের মধ্যে একটি দেশ খুবই শক্তিশালী, নাম ছিন। ছিন নামের এই দেশ ছু দেশকে দখল করতে চায়। কিন্তু ছু ইয়ান ছু দেশের অনেক জনপ্রিয় এবং তিনি দেশটির জন্য অনেক সুন্দর নীতিমালা চালু করেছেন। তাই ছু দেশকে দখল করতে চাইলে আগে ছু ইয়ানকে সরাতে হবে ।

ট: কিভাবে তাকে সরিয়ে দেবে?

আ: কিছু খারাপ ও লোভী কর্মকর্তা সম্রাটের কাছে ছু ইয়ান সম্পর্কে অনেক বাজে বাজে কথা বলেন।

ট: খুবই খারাপ। আসলে সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মানুষের ক্ষতি করে আসছে । মানুষ সবসময়ই দুর্বলের উপর অত্যাচার করে আসছে। যাইহোক ভাই, তারপর কি হলো?

আ: অবশেষে সম্রাট ছু ইয়ানকে দেশের এক রিমোট অঞ্চলে বিতাড়িত করেন। এ ঘটনায় ছু ইয়ান মনে খুব আঘাত পান। একদিন তিনি বিষণ্ণ মনে নদীর পাশে বসে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। এসময় একজন জেলে তার বিষণ্ণ চেহারা দেখে বলেন, স্যার, আপনি যদি খারাপ লোকদের সাথে মিলেমিশে চলতে পারেন তাহলে জীবনে এত কষ্ট থাকবেনা ।

তিনি বলেন, আমি নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারি, কিন্তু এ পৃথিবীর নষ্টদের সাথে আমি কখনো আপোষ করবোনা।

অবশেষ বেশ কয়েক বছর পর ছিন দেশ ছু দেশকে আক্রমণ করে এবং দখল করে নেয়। এতে ছু ইয়ান ভীষণ কষ্ট পান এবং 'মি লুও' নামক এক নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

ট: ভাই, যারা মহত, কঠিন চরিত্র বা ব্যক্তিত্বের অধিকারী তারা জীবনে মৃত্যুবরণ করবেন কিন্তু অপমান বা পরাজয় মেনে নেবেন না। আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে ছু ইয়ান এই সত্যটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, যারা বীর, যারা নিজেকে সম্মান করতে জানেন তারা কখনও অন্যায়, অপরাধী বা দুষ্কৃতিকারীদের সাথে আপোষ করেন না।

ক: ছু ইয়ানের আত্মহত্যার খবর পেয়ে দেশের জনগণ সবাই নদীর পারে উপস্থিত হন এবং ড্রাগন নৌকা দিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেন। জনগণ নদীর মধ্যে ভাত নিক্ষেপ করা শুরু করেন যেন মাছ ছু ইয়ানকে না খায়।

ছু ইয়ানের আত্মহত্যার ঘটনার পর তার স্মৃতির উদ্দেশে চীনারা প্রতিবছর এ দিনটিতে ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ দিনটিতে চীনারা ভাত সিদ্ধ করে একটি বিশেষ খাবার তৈরি করে, নাম চোং চি। আর এ সবকিছুই তৈরি করে ছু্ ইয়ানকে স্মরণ করার জন্য । এভাবে এ দিবসটি ড্রাগন নৌকা উত্সব নাম পায়।

ট: এটি একই সঙ্গে বেদনার, শোকের, আবার গৌরবের।

ক: ভাই, কিছু কিছু মানুষ আছে যারা বেঁচে আছে কিন্তু আসলে তারা মৃত।আবার কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মারা গেলেও এখনও তারা মানুষের মাঝে জীবিত।

বন্ধুরা, আমাদের আজকের এ বিশেষ অনুষ্ঠান ওইসব মহান মানুষদের জন্য যারা মানবতার জন্য কাজ করেছেন, যারা সত্যের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং যাদের মন পরিষ্কার।

আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই, কারণ তাদের কারণেই আমাদের এ বিশ্ব একদিন আরো ভালো হবে, আরো সুন্দর হবে ।

ট: হ্যাঁ, আমরা তাদেরকে আমাদের হৃদয়ের গভীর থেকে স্মরণ করি। স্মরণ করি তাদের কর্মকে । ওইসব মহান ব্যক্তিদের দেখানো পথে আমরা হাঁটবো এই প্রত্যাশা আমাদের।

ট: বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্তই। আপনারা যদি নিজেদের কোনো কথা আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান বা কোনো কথা বলতে চান, তাহলে আমাদের কাছে টেলিফোন করতে পারেন বা ইমেইল করতে পারেন। আমাদের টেলিফোন নম্বর হচ্ছে: ০০৮৬১০৬৮৮৯২৪২০ এবং আমাদের ইমেইল হচ্ছে enamulhoquetutul@yahoo.com.

ক: বন্ধুরা, এবার তাহলে বিদায়। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং সুন্দর থাকুন। আপনারা সবসময়ই আমাদের মনে, আমাদের হৃদয়ে, আমাদের আত্মায়।

ট: হ্যাঁ বন্ধুরা, জীবনে মরণে আমরা কখনো পৃথক হবো না। চাই চিয়েন। (আকাশ/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040