Web bengali.cri.cn   
অন্ধ সংগীতশিল্পী ছাও সিন
  2015-06-17 15:06:13  cri


প্রিয় শ্রোতা, অনুষ্ঠানের শুরুতেই আপনারা যে-গানটি শুনছেন তার শিরোনাম 'পূর্ব-বিস্ময়'। গানের কথা মোটামুটি এমন: "আমাদের স্বপ্ন আছে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে শক্তি লাগবে। বাতাসের গতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না; কিন্ত আমরা পালের দিক পরিবর্তন করতে পারি।"

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত পেইচিং প্যারালিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছাও সিন ও তার বন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম বার্ড নেস্টে এ গানটি গেয়েছিলেন। ছাও সিন এ গান রচনা করেন এবং তিনি একজন অন্ধ।

৪০ বছর বয়সি ছাও সি পেইচিংয়ে একটি সৈনিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন জন্মান্ধ। অন্ধ হলেও, সংগীতে ছাও সিনের সহজাত প্রতিভা আছে। তিন বছর বয়স থেকেই তার সংগীতে হাতে খড়ি। ৯ বছর বয়স থেকেই শিক্ষকের বাদ্যযন্ত্রের সাথে তাল মিলিয়ে গান গাইতে শিখে ফেলেন। ছাও সিন বলেন, সংগীত তার সহজাত প্রতিভা। তিনি বলেন

"ঈশ্বর তোমার একটি জ্বানালা বন্ধ করেন তো অন্য একটি জ্বানালা খুলে দেন। দেখার ক্ষমতা নেই বলে শব্দের প্রতি আমি স্পর্শকাতর। সংগীত আমার কাছে উপভোগের বিষয়। এ উপভোগ আত্মা থেকে আসে এবং এটি সম্পূর্ণ মানসিক। সংগীত আমার জীবনের একটি অংশ এবং আমার রক্তে প্রবাহিত।"

একজন অন্ধ গায়ক হিসেবে ছাও সিনকে সংগীতে পথে চলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ১৯৯২ সালে অন্ধ স্কুল থেকে স্নাতক হন ছাও সিন। তিনি চেয়েছিলেন গায়ক হতে। প্রথমে তিনি বিখ্যাত গায়কদের অনুকরণ করে গান গাইতে শুরু করেন। পরে তিনি পেশাদার সংগীত কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী গায়কের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলেন অনেক কোম্পানি। বার বার চেষ্টা করেও এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেন তিনি। পরে যোগ দেন পেইচিং প্রতিবন্ধী শিল্পী দলে। এ দলের সঙ্গে তিনি দেশের নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করেন এবং তার মনের দিগন্ত প্রসারিত হয়। তিনি একসময় গানে সুর দিতে শুরু করেন এবং একজন সংগীত প্রযোজক হতে চাইলেন। তিনি বলেন,

"যখন আমি নিজে গান লিখতে শুরু করি তখন আমার স্বপ্ন ছিল সংগীত প্রযোজক হওয়া। আমি জানতাম, সংগীত প্রযোজক হতে চাইলে আমাকে গান গাইতে, গান লিখতে এবং সার্বিকভাবে গানের উপর পূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"

১৯৯৯ সালে আকস্মিক একটি সুযোগে ছাও সি 'midi' নামক একটি কম্পিউটার সংগীত synthesizerর সঙ্গে পরিচিত হন এবং এ synthesizerর সাহায্যে সংগীত রচনা করা তার জন্য আরও সুবিধাজনক হয়। পরিবারের আর্থিক সাহায্য নিয়ে ছাং সিন ১৮ হাজার ইউয়ান দিয়ে একটি 'midi' কেনেন। ছাও সিন বলেন,

"'midi' ব্যবহার করে একটি ব্যান্ডের কাজ করতে পারি। তবে এ যন্ত্রের দাম আমার জন্য অনেক বেশি। আমার পরিবার আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে। আমি দেখতে পারি না। তাই আমার স্ত্রী এক-একটি শব্দ আমাকে পড়ে শোনান, এবং আমি গাই। আমি বার বার 'midi'-র সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি।"

সংগীত যন্ত্রের সুদক্ষ ব্যবহার সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ব্যাপার নয়। আর ছাও সিন তো একজন অন্ধ মানুষ। কিন্তু তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় ছাও সিন দক্ষ হয়ে উঠলেন। তিনি তার নিজস্ব একটি ঢঙ সৃষ্টি করলেন। ২০০৮ সালে তার লেখা সংগীত 'পূর্ব-বিস্ময়' নির্বাচনের কয়েক ধাপ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত পেইচিং প্যারালিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত হয়। ছাও সিন বলেন, এত বড় একটি মঞ্চে গান গাওয়া তার কাছে স্বপ্নের মত। তিনি বলেন,

"অলিম্পিক গেমস চীনা মানুষের শতাব্দীর স্বপ্ন এবং এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রচেষ্টায় অংশ নিতে পারার আমার নিজস্ব স্বপ্নও এতে পূরণ হয়েছে।" প্যারালিম্পিক গেমসের অভিজ্ঞতা ছাও সিনকে অনেক সাহস দেয়। তিনি একটি ব্যক্তিগত সংগীত স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্য গায়কের জন্য অ্যালবাম তৈরি করেন। তিনি চলচ্চিত্রের সংগীত রচনা করাও শুরু করেন। তার ছোট স্টুডিওতে ছাও সিন দিনরাত কাজ করতেন। কখনও কখনও ব্যস্ততার কারণে বাড়ি ফেরা হ'ত না তার। স্টুডিওতে একটি ছোট লাল সোফায় ছাও সিন অনেক রাত কাটিয়েছেন।

২০১৪ সালে ছাও সিন রচিত গান 'পেইচিং সময়' ৭০০০টি গানের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সাংস্কৃতিক সর্বোচ্চ পুরস্কার অর্জন করে। ছাও সিন বলেন, সংগীতে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সুখী। তিনি বলেন,

"আমার 'পেইচিং সময়' গানে বর্ণনা করা হয়েছে স্বপ্ন অন্বেষণের প্রক্রিয়া। স্বপ্ন অন্বেষণের পথে সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাতে হয়। এটা আমার মনের ভাব, আমার দৃষ্টিভঙ্গি।"

ছাও সিন সবসময় বলেন, তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও, একজন ভাল সংগীত প্রযোজক হতে তাকে আরও অনেক দূল এগুতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আগের সব সাফল্য ভবিষ্যতে তাকে আরও ভাল করতে উত্সাহ যোগাবে। তিনি বলেন,

"আগে কিছু করতে অনেক কষ্ট লাগত। কিন্তু এখন আর কষ্ট লাগে না। আমি বিশ্বাস করি, চেষ্টা করলে সব সম্ভব।"

তার সাফল্যে পেছনে পরবারের সমর্থন ছাও সিন কখনও ভুলে যান না। ছাও সিনের স্ত্রী লুও সিন ই বলেন, ছাও সিনের উদার মন ও পরিশ্রম দেখে প্রায়ই তিনি অভিভূত হন। তিনি বলেন,

"ছাও সিন খুব ভাল একজন মানুষ। তিনি সহৃদয়বান ও পরিশ্রমী। তার সহকর্মীরা যখন আডডা দেন, তখন তিনি কাজ করেন। অন্য মানুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রমই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।"

কাজ শেষ করে ছোট মেয়ের সঙ্গে খেলা, গল্প করা বা পিয়ানো বাজানো ছাও সিনের প্রিয় সখ। তিনি মেয়ের বন্ধু হতে চান। অন্ধত্ব সম্পর্কে মেয়ের কোনো ধারণা নেই। সে শুধু জানে বাবা দেখতে পান না, তাই বাইরে গেলে বাবাকে সাহায্য করতে হবে।

প্রিয় শ্রোতা, এখন আমরা একসঙ্গে উপভোগ করব ছাও সিনের লেখা 'পাইচিং সময় ' গানটি। আশা করি আমরা সবাই নিজেদের স্বপ্ন অন্বেষণের পথে ছাও সিনের মত সফলভাবে দৌড়াতে পারব।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040