Web bengali.cri.cn   
চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা বিভাগ
  2015-06-10 15:26:02  cri

 


বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের একমাত্র বাংলা ভাষা প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান চীনা যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ও বালা বিভাগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরবো এবং এর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা বিভাগের কয়েকজন নতুন স্নাতকের গল্প শুনবো।

চীনা যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো নাম পেইচিং ব্রডকাস্টিং ইন্সটিটিউট। এটি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম এবং চীনের একমাত্র বাংলা ভাষা প্রশিক্ষণের বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদনে পেইচিং ব্রডকাস্টিং ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে এ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় চীনা যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় বা সিইউসি। পেইচিং শহরের পূর্বাঞ্চলের তিংফুচুয়াং এলাকার শান্ত, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। 'নৈতিকতা, উত্সর্গ, জ্ঞান, প্রতিযোগিতা' ইত্যাদি স্লোগানকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিজ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে সামনে এগিয়ে চলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

সিইউসি'র মিডিয়া সংশ্লিষ্ট প্রধান বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সিলেবাস বজায় রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সিইউসি'র সংবাদ প্রচার, শিল্পকলা, তথ্য ও টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন প্রধান বিষয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে।

প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত সিইউসি চীনের তথ্য প্রচার ও মিডিয়া ক্ষেত্রের উচ্চপর্যায়ের অনেক ব্যক্তি ও কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এসব ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রসহ সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

সিইউসি চীনের বেতার, টেলিভিশন ও মিডিয়ার ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তথ্য প্রচার ও প্রকাশের চীনের এক শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কেই আখ্যায়িত করা হয়।

বর্তমানে সিইউসি'র নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এদের মধ্যে স্নাতকের সংখ্যা ৯হাজারেরও বেশি এবং স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি গবেষকের সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি।

বিদেশি ভাষার উপর ডিগ্রি লাভের চীনের এক জনপ্রিয় ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হলো চীনা যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়।

পেইচিং ব্রডকাস্টিং ইন্সটিটিউটে (বর্তমানে যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়) ১৯৬৩ সালে বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো১২ জন। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করা হয়, তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫ জন।

১৯৯৫ সালে বাংলা বিভাগে চার বছরের স্নাতক কোর্স শুরু করা হয়, তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৫ জন।২০০০ থেকে ২০০৪ সালের স্নাতক কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ২৩ জন। ২০০৬ থেকে ২০১১ সালের স্নাতক কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১৫ জন আর ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের স্নাতক কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ জন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিইউসি'র বিদেশি ভাষা একাডেমি বিভিন্ন বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ সম্প্রচার ও ইংরেজিসহ পেশাদার মিডিয়া কোর্সের উপরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

বাংলা ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ভাষার কোর্স চালু করা হয়।

ভাষা শোনা, পড়া ও লেখা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কোর্স ছাড়াও বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রচারসহ বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করা হয়।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর বৈদেশিক যোগাযোগ, আর্থ-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, মিডিয়া ও প্রকাশনাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় চাকরি করে থাকেন।

চীন সরকারের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল ও 'বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার' অর্থনৈতিক করিডর ধারণার কারণে চীনে বাংলা ভাষা জানা লোকের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। তাছাড়া চীন ও বাংলাদেশের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে দু'দেশের আদান-প্রদান ও সাংস্কৃতিক বিনিময় দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই দুই ভাষা জানা ব্যক্তিরা দুদেশের আদান-প্রদানে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা বিভাগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় শুনলেন। এখন শুনবেন ২০১১-২০১৫ সালের বাংলা বিভাগের স্নাতক শিক্ষার্থীদের 'গবেষণাপত্র' উপস্থাপন সম্পর্কিত অনুষ্ঠান ।

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, ২০১১-২০১৫ সালের বাংলা বিভাগের স্নাতক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ জন। তারা এ বছরের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করবেন। তারা বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। এবার শুনবেন তাদের গল্প।

বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা বিপাশার গবেষণার বিষয় ও তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা শুনলেন। এখন শুনবেন আসাদের গল্প ।

শান্তি বাংলা ক্লাসের মনিটর ছিলেন। তার গবেষণার বিষয় বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস সম্পর্কিত। হ্যাঁ, এবার আপনারা শান্তির কথা শুনবেন।

ছেং মিন তুহিনার গবেষণার বিষয় ভারতের বিবাহের সাথে সম্পর্কিত। তিনি চলতি বছরের জুলাই মাসে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগে চাকরী শুরু করবেন । এখন শুনুন ছেং মিন তুহিনার কথা।

চীনা নাগরিকদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলা ভাষা ছড়িয়ে দেবার জন্য যারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ম্যাডাম লিউ আই হাও। মি. লিউ তে ছেং হলেন ম্যাডাম লিউ আই হাও-এর ভাই। তিনি সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রথম উপস্থাপক ছিলেন এবং অনেক বছর আগে পেইচিং ব্রডকাস্টিং ইন্সটিটিউটের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি এখন চীনের হংকংয়ে বাস করেন। সম্প্রতি তিনি হংকং থেকে পেইচিংয়ে বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্য আসেন। তিনি সিইউসি'র এবারের বাংলা বিভাগের স্নাতকদের 'গবেষণাপত্র' উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং গবেষণার নানান বিষয় খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ বিষয়ে তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন,

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা,আপনারা এখন যে গানটি শুনছেন তা চীনা যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গান। গানের নাম 'ক্যাম্পাসে এক ঝাঁক ঝাউ গাছ'। গানের কথা বাংলায় অনুবাদ করলে প্রায় এমন দাঁড়ায়, ক্যাম্পাসের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা রাস্তার দু'পাশে সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে আছে ধূসর সবুজ ঝাউ গাছ/ভোরের সূর্যের আলো সেই ধূসর সবুজ গাছগুলোকে স্পর্শ করে যায়/সন্ধ্যাবেলায় সূর্যাস্তের সময় সে দাঁড়িয়ে থাকে/সারি সারি ঝাউ গাছ মাটির পুষ্টি সংগ্রহ করে/ বাতাসের স্পর্শে গাছের পাতার শব্দ শোনা যায়/ যেন তুমি আমাকে বলে যাও যৌবনের কোনো মুহূর্তই নষ্ট করো না...

এ সুন্দর গানের কথা যেন সিইউসি'র বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ের কথা। তাঁরা নিজেদের আন্তরিকতা ও উত্সাহ নিয়ে চীন ও বাংলাদেশের আদান-প্রদানে নিরলস প্রচেষ্টা চালান এবং অবদান রাখেন। তাদের প্রয়াসে চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রী কুচি ঝাউ গাছ থেকে সুউচ্চ বিশাল গাছে পরিণত হবে বলে কামনা করি।

বন্ধুরা, আর এ গানের মধ্য দিয়েই শেষ করছি আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠান। আগামী সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা চীনা যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের গল্প শুনবেন।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদের কাছে চিঠি লিখুন। চিঠিতে তুলে ধরুন এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার ভালোলাগা, তুলে ধরুন আপনার মতামত ও পরামর্শ। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিওয়ের মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো www.bengali.cri.cn।

এবার তাহলে বিদায়। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। থাকুন সুস্থ ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহে একই দিনে একই সময়ে আবারও কথা হবে। চাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040