0607jiankang
|
নিশ্চয়ই! আর কথা নয়। শ্রোতারা দীর্ঘ জীবন লাভের উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে আশা করি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাদের আর অপেক্ষায় রাখা ঠিক হবে না।
চিকিত্সাবিজ্ঞানের উন্নতি ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারে স্রেফ সাতটি স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ মেনে চললে। হ্যাঁ, আলিম ভাইয়া, এখন আমরা এই সাতটি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো।
পরামর্শ এক: বেশি বেশি হাসুন
মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে 'হাসি'। চীনের এক প্রবাদে আছে: যারা বেশি বেশি হাসেন, তাদের বয়স অন্তত দশ বছর কমে যায়। আসলে হাসি আমাদের শরীর ও মনকে প্রসন্ন করে; আমাদের মানসিক উত্তেজনা প্রশমিত করে; শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে; এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, প্রতিদিন প্রচুর হাসতে হবে। হাসির কোনো কারণ নেই? তবুও হাসুন।
পরামর্শ দুই: নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের চীনে আরও একটি কথা প্রচলিত আছে, আর তা হলো, 'দীর্ঘজীবন চাইলে বেশি বেশি পায়চারি করুন'। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশেও নিশ্চয় এ ধরণের কথা প্রচলিত আছে।আসলে এখানে পায়চারি বা হাঁটা বলতে শরীরচর্চাকে বোঝানো হয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শরীর সুন্দর ও সুঠাম রাখে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চা হিসেবে পায়চারি করা, আস্তে দৌড়ানো, থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ, শরীরগঠনমূলক ব্যায়াম ও ইউগা ইত্যাদি ভালো।
নিয়মিত শরীরচর্চা আসলে শুধু যে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়ক তা-ই নয়, সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত জীবনের জন্যও এটি জরুরি। ঊর্মি, মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়েন, আপনি জানেন। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, নামাজের সময় একজন মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করে। অনেকে নামাজকে চমত্কার শরীরচর্চা বলে থাকেন। অবশ্য মুসলমানরা নামাজ পড়েন আল্লাহর নির্দেশে, আত্মিক উন্নতির জন্য; শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু বাস্তবে কিন্তু শরীরচর্চার উপকারিতাটুকুও একজন মুসলিম নামাজের মাধ্যমে পেয়ে যান।
পরামর্শ তিন: ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
ধূমপান আমাদের শরীরের কোনো উপকার করে না; শুধু অপকারই করে। বাংলাদেশের একজন নামকরা চিকিত্সককে একবার টিভিতে বলতে শুনেছিলাম যে, ধূমপানের ফলে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত হেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপানের সময় শরীরের স্বাভাবিক রক্তচলাচল বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাই ধূমপায়ী মানুষ সহজেই হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া, যারা ধূমপান করেন, তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের কথাও আজকাল বেশ বলা হচ্ছে। সরাসরি ধূমপান না-করেও, আশেপাশের মানুষের মুখ থেকে নির্গত ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করাকে বলে পরোক্ষ ধূমপান। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিও কম নয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন: 'যেসব পিতামাতা নিজ শিশুসন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন, তাদের উচিত ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করা।"
পরামর্শ চার: প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করুন
পানির অপর নাম জীবন। আপনি কি প্রতিদিন যথেষ্ট খানি পান করে থাকেন? বিশেষজ্ঞের মতামত হলো, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। আট গ্লাস পানির পরিমাণ দাঁড়াবে মোটামুটি ২ লিটার। পর্যাপ্ত পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। পর্যাপ্ত পানি হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ প্রতিরোধে স্পষ্ট ভূমিকাও পালন করতে সক্ষম।
পরামর্শ পাঁচ: প্রতিদিন এক কাপ দই খান।
দইয়ের মধ্যে সমৃদ্ধ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ই ও সি ছাড়াও শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে। দই শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে। দই মানুষের বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে পারে। আর দই খাওয়ার সবচে ভালো সময় হচ্ছে রাতের খাবারের আধ ঘন্টা থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে। অতএব নিয়ম করে প্রতিদিন দই খান।
পরামর্শ ছয়: প্রতিদিন এক কাপ সবুজ চা বা গ্রিন টি খান।
সবুজ চা বা গ্রিন টি-র মধ্যে সমৃদ্ধ ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে? এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারসহ অনেক রোগের প্রতিরোধে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে যাদের পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে বা যাদের পেটে ব্যথা হয় তাদের সবুজ চা না খাওয়া উচিত বলে চিকিত্সকেরা বলে থাকেন।
পরামর্শ সাত: প্রতিদিন অন্তত একটি কমলা খান।
সব ফলের মধ্যে কমলা মধ্যে ভিটামিনের পরিমাণ সবচে বেশি থাকে। এ ফল আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থ নির্মূলে কমলার ভূমিকা স্বীকৃত। কমলা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই পরামর্শগুলো নিয়মিত মেনে চললে, আশা করা যায় যে আপনি দীর্ঘ জীবন লাভ করবেন। শুধু দীর্ঘজীবন নয়, সুখী, সুন্দর ও দীর্ঘজীবন। আশা করি আপনারা পরামর্শগুলো অনুসরণ করে উপকৃত হবেন।
(ঊর্মি/আলিম)