0328muktarkotha
|
প্রিয় বন্ধুরা, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে রেলওয়ে বরাবরই ইতিবাচক ভূমিকার রেখে চলেছে। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ১৯২৮ সালের পর গত ৯০ বছরে দেশটিতে নতুন কোনো রেলপথ নির্মিত হয়নি। এমনি এক প্রেক্ষাপটে, ২০১৩ সালের আগস্টে চায়না মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমআইইসি) এবং চায়না রেলওয়ে ৫ নম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (China Railway No.5 Engineering Group Co. Ltd) যৌথভাবে দক্ষিণ শ্রীলংকায় রেলপথ নির্মাণ শুরু করে। শ্রীলংকায় এটি হচ্ছে এই দুই চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের প্রথম রেলপথ প্রকল্প। আজকের মুক্তার কথার শুরুতেই এ প্রকল্পের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।
রাজধানী কলম্বো থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বড় শহর মাতারা। এ শহরেই চীনা প্রতিষ্ঠান দু'টি রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে।
(রে ১)
দক্ষিণাঞ্চলের এই রেলপথ শ্রীলংকার পরিবহন অবকাঠামো পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো মাতারা থেকে পূর্বাঞ্চলীয় শহর কাটারাগামা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে। পথটির মোট দৈর্ঘ্য ১২৭ কিলোমিটার। তিন পর্যায়ে রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের কাজ ওই দুই চীনা কোম্পানি যৌথভাবে শেষ করেছে।
প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপক উ ফানইউ বলেন, প্রথম পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত আছে মাতারা থেকে বেলিয়াত্তা পর্যন্ত মোট ২৭ কিলোমিটার লম্বা রেলপথ। এ অংশ বাস্তবায়নে খরচ মোট ২৭.৮ (কোটি? মিলিয়ন? নাকি বিলিয়ন?) মার্কিন ডলার। প্রথম পর্যায়ের মধ্যে রেলপথ ছাড়াও আছে স্টেশন, সুড়ঙ্গ, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ। তিনি বলেন,
(রে ২)
'চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রথম শ্রীলংকায় রেলপথ নির্মাণ করছে। তা ছাড়া, গত ৯০ বছরে শ্রীলংকায় এই প্রথম রেলপথ নির্মিত হচ্ছে।'
ঊনিশ শতকের ৬০-এর দশক থেকে ব্রিটিশরা শ্রীলংকায় অনেক রেলপথ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু ১৯২৮ সালের পর দেশটিতে নতুন করে কোনো রেলপথ বসেনি। বর্তমানে সেদেশের অধিকাংশ রেলপথই নড়বড়ে হয় গেছে। এসব রেলপথে গড়ে মাত্র ৮০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারে। অন্যদিকে, চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো যে রেলপথ নির্মাণ করছে সেগুলোতে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে।
উ ফানইউ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে শ্রীলংকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ ব্যাবস্থার উন্নতি হবে। নয়া রেলপথ পর্যটনশিল্প উন্নয়নেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন,
(রে ৩)
'নতুন রেলপথ নির্মাণের পর এখন কলম্বো থেকে মাতারা, হাম্বানতোতা ও দক্ষিণাঞ্চলে নতুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর অতিক্রম করে কাতারাগামায় পৌঁছা যায়। এর মাধ্যমে দক্ষিণ শ্রীলংকায় বিমান, সমুদ্র ও স্থল পরিবহন নেটওয়ার্ক সম্পন্ন হলো। এর মাধ্যমে এদঞ্চলের অর্থনীতি ও সমাজজীবন উন্নত হবে।'
তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত 'একুশ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথ' প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে শ্রীলংকার সাথে চীনের সম্পর্ক এই রেলপথের মাধ্যমে আরো উন্নত হবে।
এ পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের তিন ভাগের এক ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চীনা-শিল্প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় সরকারের নিয়ম মেনে প্রকল্পের মান ও এতদঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষার ওপর শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
প্রকল্পের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গু ফেং বলেন,
(রে ৪)
'পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আমরা স্থানীয় পরিবেশ প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে একটি বিশেষ গ্রুপ গঠন করেছি। পাশাপাশি আমরা স্থানীয় আইন অনুযায়ী নাগরিকদেরকে ক্ষতিপূরণও দিয়েছি। তাই স্থানীয় নাগরিকরা ও পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো আমাদের প্রশংসা করে থাকে।'
রেলপথের এ প্রকল্প স্থানীয় নাগরিকদের জন্য কয়েক শ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন প্রকল্পে চীনা কর্মী ও স্থানীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকের অনুপাত হচ্ছে ১:৩.৫।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শিখেছেন লংকান নারী লাকিশা। তিনি একটি চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন,
(রে ৫)
'সাম্প্রতিক কয়েক বছরে অনেক চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠান শ্রীলংকার অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। রাজপথ, রেলপথ, বিমানবন্দর, স্থলবন্দর নির্মাণ করেছে তারা। চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকার পরিবহন ও অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা উল্লেখ করতে হয়।'
দক্ষিণ শ্রীলংকা রেলপথ প্রকল্পে কর্মরত লংকান প্রকৌশলী মাতারা বলেন,
(রে ৬)
'গত পাঁচ-সাত বছরে চীন আমাদেরকে দেশের অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তা ছাড়া, শ্রীলংকা যখন কঠিন আর্থিক সংকটে ছিল, তখন চীন আমাদের প্রচুর সাহায্য-সহযোগিতাও দিয়েছে। আমরা চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ।'
গান
বন্ধুরা, শুনছিলেন চীনা কোম্পানি কর্তৃক শ্রীলংকায় রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর একটি প্রতিবেদন। এবার আপনাদের চিঠিপত্র নিয়ে বসবার পালা।
(চিঠি পরে লিখবো)
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/আলিম)