২ এপ্রিল বাংলদেশে গিয়েছিলেন চীনের শিল্পীরা। 'চীনা সমসাময়িক শিল্প প্রদর্শনী' রাজধানী ঢাকার জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের গণ কূটনৈতিক সমিতির মহাসচিব সুং রং হুয়া একটি উপহার এনেছেন। আর সেটি হলো চীনা হস্তলিপিকার-লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা: knowledge is the crystallization and, culture is the luster of precious gem।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বলেন, কয়েক বছর আগে তিনি পেইচিংয়ে এসেছিলেন। তখন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পেইচিংয়ে সম্মেলন অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের পর তিনি পেইচিং শহরের বিভিন্ন জায়গায় চীনা ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো খুব পছন্দ করেন। একবার তিনি দেখেন, একজন চীনা চিত্রশিল্পী একটি প্রাণীর ছবি আঁকছে, যা খুবই জীবন্ত। মন্ত্রী সে ছবি কিনে নেন। এখনও তাঁর বাড়িতে সেই সুন্দর ছবিটি টাঙানো রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, চীন ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দু'দেশের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিনিময় রয়েছে। চীনা সংস্কৃতি তাঁর কাছে খুবই আকর্ষণীয়। তার ভাষণে তিনি বেশ কিছু সহজ চীনা বাক্য বলেছেন। যেমন নি হাও, সিয়ে সিয়ে ইত্যাদি।
বন্ধুরা আপনারা হয়তো সবাই জানেন যে, বাংলাদেশের ২৩০টিও বেশি নদী রয়েছে। যা বিশ্বের সবচেয়ে নদীবহুল একটি দেশ। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল, শাখা নদী ইত্যাদি। এসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল ফুটতে দেখা যায়। এবার প্রদর্শনীতে নদী সম্পর্কে দু'দেশের শিল্পীদের যৌথ ছবি প্রদর্শিত হয়। চীনা ভাষায় একটি প্রবাদ রয়েছে '同舟共济', মানে নদীতে একসঙ্গে দাঁড় টানা, যাতে ওই পাড়ে দ্রুত পৌছানো যায়। তাই নদীর ছবিগুলো থেকে ছবি থেকে দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশের প্রদর্শনী ছাড়া চীনা সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূতের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক গ্রুপ ভারতের নয়াদিল্লী, মুম্বাইয়ে পৌঁছেছে। বিভিন্ন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত হয়েছে। চীন ও দক্ষিণ এশীয় দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় এগিয়েছে এবং চীনা সংস্কৃতির প্রভাবও উন্নত হয়েছে।
মহাসচিব সুং রং হুয়া বলেন, তিনি জানতেন না যে ভারত ও বাংলাদেশের লোকেরা চীনের সংস্কৃতি নিয়ে এত আগ্রহী। এ দু'দেশের সরকারও চীনা সংস্কৃতির ওপর গুরুত্ব দেয়। আর ভারতের সাংস্কৃতিক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং অন্য সাংস্কৃতিক মহলের বিশেষজ্ঞ মোট ২শ' জনেরও বেশি মানুষ এবার এতে অংশ নিয়েছে। তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তিনি বলেন যে, ভারত ও চীনের মধ্যে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও এবারের আয়োজিত সাংস্কৃতিক তত্পরতাগুলো ভারতে অল্প দর্শক আকর্ষণ করেছে। কিন্তু ভারতের নাগরিকরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ, তারা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পর্যটন ব্যুরো ও এবার চীনা সফরকারী দলের জন্য একটি বিশেষ নাচের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। মহারাষ্ট্র রাজ্যের পরিকল্পনায় চীনা সাংস্কৃতিক দলের সফর ভারতের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলরা আশা করেন, দু'দেশের বিদেশে ছাত্রছাত্রীদের বিনিময় আরো ঘনিষ্ঠ হবে।
এবার দক্ষিণ এশিয়া সফর সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনা শিল্পীরা তাদের ৮০টিও বেশি শিল্পকর্ম দক্ষিণ এশীয় বন্ধুদের জন্য এনেছে। তারা আশা করছে, এতে করে আরো বেশি দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধু চীনা সংস্কৃতিতে আগ্রহী হবে।