Web bengali.cri.cn   
ইসরাইলে অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৭০তম বার্ষিকীর স্মরণ অনুষ্ঠান
  2015-05-29 15:14:22  cri

৭ মে সন্ধ্যায় (Yad La-Shiryon) ইয়াদ লা-শিরয়ন এবং (Yad Vashem Holocaust Museum) ইয়াদ ভাশেম হলোকাস্ট জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৭০তম বার্ষিকীর স্মরণ অনুষ্ঠান ইয়াদ লা-শিরয়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন শুনুন জেরুসালেম থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিক স্যুই চিয়া ও জাং চিনের পাঠানো রিপোর্ট।

সেদিন সন্ধ্যায় ইয়াদ লা-শিরয়নে মানুষেরা কবিতা আবৃত্তি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বর্ণনা সম্বলিত গান গাওয়া, মশাল জ্বালানো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী দেশগুলোর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৭০তম বার্ষিকীকে স্মরণ করেছে। ইয়াদ লা-শিরয়নের ৬ হাজার আসনের একটিও খালি নেই। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনা, হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী ও ইসরাইলী ছাত্রছাত্রী।

স্মরণ অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইয়াদ লা-শিরয়নের একটি প্রবেশ মুখে অনর্গল রাশিয়া ভাষায় লিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রবীণ সেনাদের অভ্যর্থনা জানান। পাশাপাশি তাদের হাতে টাটকা ফুল তুলে দেন। লিয়ার বাবা-মা রাশিয়া থেকে এসেছেন। তাঁর বাবা হলেন ইহুদী। তিনি বলেছেন, প্রতি বছরের এই সময় রুশ ভাষার চ্যানেলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্মরণ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। কিন্তু ইসরায়েলে অনেক মানুষ প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জার্মান নাত্‌সি বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ের ইতিহাস জানে না। তিনি বলেন,

ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস উপলব্ধি করতে শেখানো উচিত। ইসরাইলে অনেক রাশিয়ান আছে। প্রতি বছরের ৭ ও ৮ মে তারা এসব পদক সমৃদ্ধ ব্যাজ পরেন। ইসরাইলী শিশুদের এটা বেশ ভালো লাগে। কারণ তারা জানে না যে, এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় স্মরণ করার জন্য।

অনুষ্ঠানের রিহার্সালের মিলনায়তনে সামরিক উর্দি পরা ও বুকে ব্যাজ ঝুলানো একজন বৃদ্ধ আছেন। তাঁর নাম (Efraim-Fiodor Papernyi) ইফ্রাইম-ফিওডোর পাপের্নি। তিনি হলেন ইসরায়েলের বৃহত্তম নাৎসি প্রতিরোধ সংস্থার চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি লাল ফৌজে যোগ দিয়ে অনেকগুলো লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন,

প্রায় ৫ লাখ ইহুদী লাল ফৌজে যোগ দিয়ে নাৎসিদের প্রতিরোধ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ মারা গেছেন। গোটা যুদ্ধে প্রায় ১৫ লাখ ইহুদী সেনা যুদ্ধের ফ্রন্টে সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছে।

ইফ্রাইম-ফিওডোর পাপের্নি আশদদ শহরে একটি ইহুদী সেনা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর সহায়ক কনস্ট্যান্টিন কার্নো বলেন,

জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হলো, মানুষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংক্রান্ত আরো বেশি গল্প জানানো এবং এ ধরনের যুদ্ধ সম্পর্কে সচেতন করা।

স্মরণ অনুষ্ঠানে ইয়াদ ভাশেম হলোকাস্ট জাদুঘরের চেয়ারম্যান (Avner Shalev) আভনের শালেভ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইহুদী সেনা জাদুঘর সমিতি প্রতিষ্ঠা করার চেয়ারম্যান জেনারেল হাইম এরেজ (Haim Erez) এক সঙ্গে মশাল জ্বালান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ৭০ বছর আগে। মানুষ এই ইতিহাস থেকে কি শিখেছে ? ইসরাইলের তরুণ প্রজন্মের এক প্রতিনিধি বলেন,

এটা ছিল একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। আমি সত্যিই তা বুঝতে পারি না। মানবজাতি কেন এ ধরনের যুদ্ধ ডেকে এনেছিল। তখন মানুষ হত্যার কারণ ছিল গায়ের রং ! পরস্পরের প্রতি এসব ঘৃণা ও বৈষম্য বন্ধ করা উচিত।

১০ শ্রেণীতে লেখাপড়া করা আইমান বলেন, আজ তিনি প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। গত বছরের ইতিহাস ক্লাসে সে এই ইতিহাস পড়েছে। কল্পনা করা যায় না, ইহুদীদের প্রতি নাৎসিদের আচরণ কতো অমানবিক ছিল। তিনি বলেন,

আমি আশা করি, যুদ্ধ আর হবে না। আমাদের এ প্রজন্মের উচিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে জাতিবিদ্বেষী না হওয়ার শিক্ষা নেয়া। আমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। যখন মানুষ সংকটে পড়বে, তখন আমাদের উচিত তাদের সাহায্য দেওয়া।

ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট (Reuven Rivlin) রিউভেন রিভলিন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোসে ইয়ালুন এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ও ভাষণ দেন। নেতানিয়াহু বলেন,

আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। জার্মান নাৎসির বিরুদ্ধে বিজয়ের ৭০তম বার্ষিকী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হত্যাকাণ্ড থেকে আমরা শিক্ষা অর্জন করেছি। আমরা তা কাজে লাগাচ্ছি। আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। কারণ তখন আমাদের কোনো দেশ ছিল না। বর্তমানে আমাদের অস্ত্রধারী সেনা আছে। যারা আমাদের রক্ষা করে। তাই নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রথম শিক্ষা হলো আমাদের নিজেদের শক্তি দিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040