0524jiankan
|
তো, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে আমরা বিশেষ এক ধরনের শরীরচর্চা নিয়ে আলোচনা করবো। চীনাদের কাছে এটি খুবই কার্যকরী একটি ধরন। একে আপনারা বলতে পারেন 'এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা'। বুঝিয়ে বলছি। সোজা হয়ে দাঁড়ান। তারপর ধীরে ধীরে একটি পা হাঁটু ভাজ করে উপরে তুলুন। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন এক মিনিট। তারপর পা পরিবর্তন করে আবার একই কাজ করুন। হ্যা, এটাই সেই বিশেষ ব্যায়াম, যার কথা আমরা বলছি। নিয়মিত এ ব্যায়াম করলে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট উপকার পাবেন। অন্তত, চীনা চিকিত্সকরা এমনটাই বলে থাকেন।
এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা শুনে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়লো। গ্রামের স্কুলে তখন দুষ্টু শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতেন। সেসব শাস্তির একটি ছিল 'এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা'। শিক্ষক হাতে ছোট্ট লাঠি বা বেত নিয়ে চেয়ারে বসে থাকতেন আর শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী পাশেই এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলেই পিঠে পড়তো বেতের বাড়ি। কিন্তু সত্যি বলছি, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন।
তবে ব্যায়াম হিসেবে এটা কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে করতে হয় না। একবারে মাত্র এক মিনিট এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন চিকিত্সকরা। অথচ দেখুন এর কতো উপকারিতা! আপনি যদি নিয়মিত এ ব্যায়াম করেন, বয়সকালে আপনার Alzheimer's রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা কমে যাবে অনেকটা। এ ছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা এবং ঘাড় ও মেরুদণ্ডের রোগ থেকেও এ ব্যায়াম আপনাকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই। এ বিশেষ ধরনের ব্যায়াম করার সময় চোখ বন্ধ থাকা আবশ্যক। চীনা চিকিত্সকরা বলেন, চোখ বন্ধ না-থাকলে এর সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।
চীনা চিকিত্সকরা মনে করেন, সবধরনের অসুখের কারণ হচ্ছে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কোনো-না-কোনো মাত্রার ভারসাম্যহীতা। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার এ ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর চোখ বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে একটি বিশেষ কারণে। আপনি যখন চোখ বন্ধ করেন, তখন আপনার ব্রেনের নার্ভগুলো তুলনামূলকভাবে অধিক সচল হয়। আর আমরা সবাই জানি, ব্রেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও একটু নির্দিষ্টভাবে বলি। চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাপদ্ধতি অনুসারে, আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেশকয়েকটি পয়েন্ট আছে, যেগুলোকে 'আকুপয়েন্ট' বলে। এই পয়েন্টগুলোতে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে মাসাজ করে যে চিকিত্সা করা হয়, তাকে বলে 'আকুপ্রেসার'। এই আকুপ্রেসারের মাধ্যমে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তো, এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার ব্যায়ামটি আমাদের পায়ের অন্তত ছয়টি আকুপয়েন্টে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে জানাচ্ছেন চিকিত্সকরা।
আরেকটি কথা, যারা হাত ও পায়ে শরীরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা অনুভব করেন, তারা এ ব্যায়াম করে দেখতে পারেন; উপকার পাবেন।
এই বিশেষ ব্যায়ামটি আমাদের ঘুমের গুণগত মান বাড়াতে পারে; বাড়াতে পারে স্মরণশক্তি। তা ছাড়া, এ ব্যায়াম আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতাও বাড়ায় বলে চিকিত্সকরা দাবি করেন।
অবশ্য যাদের বয়স বেশি এবং দু'পায়েই দাঁড়িয়ে থাকতে যাদের কষ্ট হয়, এ ব্যায়াম তাদের জন্য নয়।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)