0510jiankang.
|
প্রথম ভালো অভ্যাস হচ্ছে—নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর নাস্তা খাওয়া। অনেকে সকালে নাস্তা খেতে চান না। এটা নানান কারণে হতে পারে। অফিসের সময় হয়ে গেছে, হাতে সময় নেই, অতএব নাস্তা না-করেই দিলেন দৌড়। তারপর অফিসে পৌঁছে কাজের চাপে আর নাস্তাই করা হলো না। আবার অনেকে মনে করেন, সকালে নাস্তাটা বাদ দিলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো অবস্থাতেই সকালের নাস্তা স্কিপ করা উচিত নয়। নাস্তা খেতে হবে এবং সেটা অবশ্যই হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর। তারা বলছেন, নাস্তা হচ্ছে শরীর ও মগজের উত্কৃষ্ট জ্বালানি। রাতের ঘুমের পর আপনার শরীরে এ জ্বালানি অভাব দেখা দেয়। নাস্তা সে অভাব দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর নাস্তা খেয়ে তারপর দিনের কাজে নামেন, তাদের মাথা তুলনামূলকভাবে ভালো কাজ করে এবং তাদের কাজের গুণগত মানও তুলনামূলকভাবে অধিক ভালো হয়। তা ছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পুষ্টিকর নাস্তা খান, তাদের স্মৃতিশক্তি তুলনামূলকভাবে অধিক ভালো হয় এবং তাদের মুটিয়ে যাবার আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অতএব প্রিয় শ্রোতা, নিয়মিত নাস্তা না-করার অভ্যাস থাকলে, আজই এ অভ্যাস ত্যাগ করুন; প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার দিয়ে নাস্তা করা অভ্যাস গড়ুন।
দ্বিতীয় ভালো অভ্যাস হচ্ছে—নিয়মিত অন্তত ৫ রকমের শাক-সবজি ও ফল খাওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত শাক-সবজি ও ফল খেতে অভ্যস্ত, তাদের ক্যান্সার ও হৃদয়রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন নিয়মিত অন্তত ৫ প্রকারের শাক-সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলন। তারা আরও বলছেন, ফলমূল হাতের কাছে রাখুন, সহজে চোখে পড়ে এমন স্থানে রাখুন। হালকা কিছু খেতে মন চাইছে? ফল খান। প্রয়োজনে ফলকে বিস্কিটের মতো টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। মনে করুন, আপনি বিস্কিটের মতো হালকা খাবার খাচ্ছেন। আমরা অনেক সময় স্রেফ চোখের ক্ষুধা মেটাতে এটা-সেটা খাই। এ অভ্যাস ভালো নয়। তবে যদি খেতেই হয়, তবে ফল খাবেন। এতে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম।
তৃতীয় ভালো অভ্যাস হচ্ছে নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করেন তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা কম। এ ছাড়া, এ ধরনের লোক সহজে মুটিয়ে যান না; সহজে বিষন্নতায়ও ভোগেন না। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার শরীর ও মনকে রাখবে ফুরফুরে, আপনাকে করবে আত্মবিশ্বাসী। আর কিছু না-হোক, প্রতিদিনে দ্রুতগতিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হাঁটা শেষে খানিক্ষণ ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন।
চতুর্থ ভালো অভ্যাস হচ্ছে—টুথপিকের পরিবর্তে ফ্লস ব্যবহার করা। আপনার জানের দাঁত আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কথায় বলে: দাঁতের সঙ্গে আতের সম্পর্ক। তো, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে হবে, দাঁতের যত্ন নিতে হবে। তাই খাওয়ার পরে টুথপিকের পরিবর্তে ফ্লস ব্যবহার করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, টুথপিক স্বাস্থ্যকর নয়, ফ্লস স্বাস্থ্যকর। টুথপিক দাঁতের ক্ষয় করে, ফ্লস সেটা করে না। অতএব আজ থেকে প্রয়োজনে ফ্লস ব্যবহার করুন, টুথপিক ফেলে দিন ময়লার বাক্সে।
পঞ্চম ভালো অভ্যাস হচ্ছে—'প্রকৃতি'কে ঘরে রাখা। হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, আপনার ঘরে যতোটা সম্ভব প্রকৃতিকে নিয়ে আসুন। অ্যাকুরিয়ামে মাছ লালন করুন, টবে গাছ লাগান। ঘরের দরজা-জানালা মাঝে মাঝে খুলে দিন; বাইরের বৃষ্টির ছাট আপনার গায়ে লাগুক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির সাথে আমাদের মেলামেশা আমাদের মনকে চাঙ্গা রাখে, মানসিক চাপ কমায়। আপনার বদ্ধ অফিসেও মাছ লালন করতে ও টবে গাছ লাগাতে পারেন। সাধারণত, অফিস কেন্দ্রীয়ভারে এয়ারকন্ডশন্ড থাকে। তাই অনেক সময় চাইলেও জানালা খুলে দেওয়া যায় না। তাই, আপনার অফিসকক্ষটিতে প্রকৃতিকে ডেকে আনুন।
৬ষ্ঠ ভালো অভ্যাস হচ্ছে ধূমপান না-করা। আপনি ধূমপান করেন না? তাহলে, কোনো কষ্ট ছাড়াই একটি ভালো অভ্যাস আপনি রপ্ত করেছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আর যারা ধূমপান করেন, তারা ধূমপান ছেড়ে দিন। ধূমপান ত্যাগে আপনার ইচ্ছাই যথেষ্ট।
আমরা আগের অনুষ্ঠানগুলোতে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছি। ধূমপানের কোনো ইতিবাচক দিক নেই। শরীরের এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যা ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ধূমপানের ফলে যে ধোঁয়া আপনার ফুসফুসে যায়, তাতে ৪ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আছে। এর মধ্যে ৪০টি সরাসরি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। ধূমপায়ীরা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন বেশি, অধূমপায়ীদের তুলনায় ১৬ গুণ বেশি। আপনি নিজের সুস্থতার জন্যই ধূমপান ত্যাগ করবেন তা নয়, আপনার প্রিয়জন বা আশেপাশের মানুষের সুস্থতার কথা চিন্তা করলেও আপনার ধূমপান ত্যাগ করা উচিত। কারণ, শত সাবধানতা সত্ত্বেও আপনার সিগারেটের ধোঁয়া তাদের ক্ষতি করছে।
সপ্তম ভালো অভ্যাস হচ্ছে---খাওয়ার সময় টেলিভিশন বন্ধ রাখা। গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার সময় টেলিভিশন দেখতে অভ্যস্ত শিশুদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণাত বেশি থাকে। কারণ, টিভি দেখতে দেখতে খেলে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। বড়দের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই, খাওয়ার সময় টিভি দেখবেন না। খাওয়ার সময় খাওয়া, টিভি দেখার সময় টিভি দেখা। অনেকে টিভি দেখতে বসলেই একগাদা পটেটো চিপস্ নিয়ে বসেন। এটা মোটেই ভালো অভ্যাস নয়।
প্রতিদিন নিয়ম করে নিজেকে বিনোদিত করুন। অর্থাত শুধু কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন না। কাজ শেষে এমন কিছু করুন যাতে আপনার মন প্রফুল্ল হয়। আপনি কার্টুন দেখতে পারেন, জোকস্-এর বই পড়তে পারেন। এ ছাড়া, আপনি আপনার সখের কাজটি করেও নিজেকে বিনোদিত করতে পারেন। আপনি অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ করেন? মাছগুলোকে নিয়মিত সময় দিন, ওদের সঙ্গে কথা বলুন। গাছের টক আছে অফিসে বা বাসায়? সেগুলোতে পানি দিন, সেগুলোর যত্ন নিন। ছবি আঁকতে পছন্দ করেন? বসে যান রংতুলি নিয়ে। এই তো! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ থাকার জন্য এগুলো জরুরি। শুধু কাজ আর কাজ করে সুস্থ থাকা যায় না।
নবম ভালো অভ্যাস হচ্ছে---শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক হৃদরোগ এড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অতএব শত ব্যস্ততার মাঝেও নিয়ম করে প্রতিদিন স্বজনদের সঙ্গে খানিকটা সময় হলেও আড্ডা দিন, সময় কাটান। অন্তত ফোনে তাদের খোঁজ খবর নিন। সবচে ভালো হয় সরাসরি তাদের সঙ্গে দেখা করলে।
দশম বা শেষ ভালো অভ্যাস হচ্ছে—নিয়মিত পরিমিত ঘুম। ঘুম হচ্ছে সবচে ভালো বিশ্রাম। সুস্থ থাকতে নিয়মিত ঘুম চাই, আর সে ঘুম হতে হবে সাউন্ড ও পরিমিত। অতএব ঘুমের প্রতি খেয়াল রাখুন। যে কোনো পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত সময় ঘুমিয়ে নিন বা এ অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের সময় মোবাইল বন্ধ রাখতে পারেন।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)