Web bengali.cri.cn   
তোমার বুকে আবার আসবো শউকুয়াং
  2015-05-05 14:49:49  cri

চীনের শানতুং প্রদেশের ছায়াঘেরা,শান্ত, সুনিবিড় ও স্নিগ্ধ একটি শহর শউকুয়াং। পুরো শহরটিই যেন একটি পার্ক। শরের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা রাস্তার দু'পাশ সবুজ, হলুদ, বেগুনিসহ নানান রঙের ফুল ও গাছে আচ্ছন্ন। শান্ত এই শহরটিতে নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো জ্যাম, নেই কোনো দূষণ। দেখে মনে হয় বিধাতা যেন নিজ হাতে একটু বেশিই যত্ন নিয়ে গড়েছেন এই শহরটিকে।

২১ এপ্রিল বিকেলে আমি এবং আকাশ ভাই হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ি। উদ্দেশ্য যতটা সম্ভব পুরো শহরটিকে ঘুরে দেখা । এই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করি। কিছুদূর পরপর বিশাল ফুলের টব। তাতে রঙবেরঙের নানান ফুল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাত আকাশ ভাই বললেন, দেখো দেখো সুন্দর লাইট দেখো।

এ কথা শুনে আমি উপরে তাকাই, দেখি অতি সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় লাইটের কারুকার্য। সত্যিই রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো দেখার মতো। পিলারের সাথে লাইটগুলোকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে দেখলে মনে হয় এটি একটি ফল গাছ, আর লাইটগুলো যেন ফল।

আমি আকাশ ভাইকে বললাম, ভাই আমি একটি ছোট ভ্যাজলিন কিনতে চাই। আকাশ ভাই বললেন, চলো।

রাস্তার পাশেই বিশাল আকারের একটি সুপার মার্কেট। আমরা সুপার মার্কেটে প্রবেশ করি। আমি পেইচিংয়ে অনেক বড় বড় সুপার মার্কেট দেখেছি, কিন্তু শউকুয়াংয়ের এই সুপারমার্কেট সেসবের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম বলছি এ কারণে যে, এর ভিতরটা অতি চমত্কারভাবে গোছানো। আর ভিতরের আয়তনও অনেক বিশাল। আমরা কসমেটিকসের দোকানে যেতেই দোকান থেকে আমাকে বললেন, নি হাউ। আমিও যথারীতি উত্তর দিয়ে তার সাথে ভাঙ্গা ভাঙ্গাভাবে চীনা ভাষায় কথা বলা শুরু করলাম । আকাশ ভাই পাশে দাঁড়িয়ে আমার কথা বলা দেখছেন এবং হাসছেন। আমি ভ্যাজলিন কিনলাম। দোকানদার আমার সাথে মিষ্টিভাষায় কথা বললেন। আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে আকাশ ভাইকে বললাম, ভাই এখানে আমরা কাল আবার আসবো। আকাশ ভাইও আমার কথায় রাজি হয়ে গেলেন।

সুপার মার্কেট থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলাম শহর দেখার জন্য। তখন সূর্যের আলো আর নেই । কিন্তু যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি মনে হলো আলো আঁধারীর এক চমত্কার রাস্তায় আমাদের পদচারণা। আমরা হেঁটে চলছি আর অপরূপ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখছি শহরের সৌন্দর্য। কোনো ময়লা নেই, এমনকি চোখে পড়বার মতো কোনো ধুলাবালিও নেই। একেবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন । রাস্তার পাশের গাছের ফাকে ফাকে মনে হচ্ছে আলো ও অন্ধকার লুকোচুরি খেলছে । আর মুদু বাতাসে দুলে উঠছে গাছের পাতাগুলো । আকাশ ভাই হঠাত ম্যাপ বের করে বললেন, সামনে একটি পার্ক আছে আমরা সেখানে যাবো। আমি বললাম, ভাই পুরো শহরটিইতো একটি পার্ক। আকাশ ভাই বললেন, হ্যাঁ, ঠিক বলেছো, তবে সামনের পার্ক আরো সুন্দর এবং সেখানে একটি নদী আছে ।

নদীর কথা শুনেই আমার মনটা ভীষণ নাড়া দিয়ে উঠলো। অনেক দিন নদী দেখিনা। আমার বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর তীরে। তাই নদী যেন আমার রক্তের সাথে মিশে আছে। তবে নদীর প্রতি ভালোবাসা থাকলেও মনের ভিতরে অজান্তেই নদীভীতি কাজ করে । কারণ এই যমুনা নদীই কেড়ে নিয়েছে আমার বাবা-দাদা তথা পূর্বপুরুষের স্মৃতি চিহ্ন। তাই নদীর কথা মনে পড়লেই অসংখ্য স্মৃতি খেলা করে আমার মগজে ।

যাইহোক হাঁটতে হাঁটতে আমরা পার্কের গেটের কাছে পৌঁছলাম । এ এক অপরূপ দৃশ্য, এ এক স্বপ্ন। আকাশ ভাইকে বললাম, ভাই কোথায় নিয়ে আসলেন আমাকে। তিনি বললেন, এটা আমাদের জন্য একটি স্বর্গ।

পার্কের প্রবেশ পথের মুদু আলো দেখে পূর্ণিমা রাতের কথা মনে পড়ল । আমার জন্ম বাংলাদেশের একটি গ্রামে। তাই খুব ভালোভাবেই পূর্ণিমা রাতের আলো দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।

হ্যাঁ, গেট থেকে কয়েক পা সামনে গিয়ে দেখি, ছেলেমেয়েরা ব্যাডমিন্টন খেলছে, আর পাশেই মধ্যবয়সী নারী-পুরুষেরা সঙ্গীতের তালে তালে শরীর চর্চা করছেন। অদূরেই নদীর পাড়। নদীর পাড় ঘেঁষে সারিসারি ছোট ছোট বাতি টিপটিপ করে জ্বলছে, যেন আলোর প্রদর্শনী। আমরা নদীর পাড়ে দাঁড়ালাম। মৃদু বাতাস আমাদের শরীরকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে, মনে হলো নদী স্বাগত জানাচ্ছে আমাদেরকে । আমরা ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। নদীর পাড় ঘেঁষে কাঠ দিয়ে তৈরি করা সেতুর উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিচে একটি শব্দ শুনলাম। তাকিয়ে দেখি একজন মাছ ধরছেন। কাছেই যেতেই তিনি আমাদেরকে নি হাউ বললেন। আমরাও নি হাউ জানালাম। তাকে বললাম আমি বাংলাদেশি। আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারে চাকরি করি। আমার চীনা উচ্চারণ শুনে তিনি রীতিমতো হাসা শুরু করলেন।

আমরা কাঠের তৈরি সেতুর উপর কিছুক্ষণ বসলাম। নদীর উপর নির্মিত সেতু থেকে নদীর পানির উপর আলো পড়ার দৃশ্য দেখে গ্রামে নতুন টিনের তৈরি ঘরের কথা মনে পড়লো আমার। টিনের তৈরি ঘরের উপর সূর্যের আলো পড়লে যেমন চিকচিক করে উঠে ঠিক সেতুর আলোর কারণে এই নদীর পানিও চিকচিক করে উঠছে।

সেতুর গায়ে লাগানো লাইট বিভিন্ন রঙের। কখনও হলুদ, কখনও নীল, কখনও সবুজ, কখনও বেগুনি। আলোর রঙ পরিবর্তনের সাথে সাথে যেন নদীর পানির রঙও বদলে যাচ্ছে আর নেচে নেচে উঠছে ।

আকাশ ভাই জানালেন, এই নদীর নাম 'মি নদী'। আমি হেসে বলে উঠলাম, মি নদী, তোমার রূপ ও সৌন্দর্য আমার মনকে পাগল করে তুলছে। তোমার বাতাস, তোমার স্নিগ্ধতা আমাকে মুগ্ধ করছে।

এসময় মনের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম, নদী বয়ে যায় তরঙ্গ জানেনা সমুদ্র কোথায়, শুধু জানি তোমাতেই আমার এই তো পরিচয়।

আমরা সেখান থেকে উঠে পাড় ঘেঁষে তৈরি করা রাস্তা ধরে পার্কের ভিতর হাঁটা শুরু করলাম। বিশাল ও শান্ত একটি পার্ক। পুরো পার্ক জুড়ে মৃদু আলো। কোথাও কোনো কোলাহল নেই । কিছুক্ষণ পরপর শুধু দু'একজনকে চোখে পড়ছে যারা শরীর চর্চা  করছেন।

এক জায়গায় দেখি গুটি কয়েক লোক ও দুই তিনজন শিশু ব্যায়াম করছেন। আমি সেখানে যাওয়াতেই শিশুরা বলে উঠল, নি হাউ। আমিও নি হাউ বললাম। তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলা শুরু করলাম। যথারীতি তাদেরকে আমার পরিচয় জানালাম। পরিচয় জানার পর তারা খুব খুশি হলেন। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা আবারও রাস্তা বরাবর হাঁটা শুরু করলাম। এবার লক্ষ্য রাস্তার শেষ মাথা পর্যন্ত যা কিছু আছে সবকিছুই দেখা। একটু দূরে যেতে না যেতেই আকাশ ভাই বললেন, সামনে মনে হয় একটি ছোট লেক আছে। আকাশ ভাইয়ের কথা শেষ না হতেই ব্যাঙের ডাক শুনতে পেলাম--ঘ্যাঙুর ঘ্যাঙ। বাহ! চমত্কার। কতদিন পর ব্যাঙের ডাক শুনছি, মনে মনে বললাম। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমরা লেকের সামনে চলে এসেছি।

পার্কের ভেতরে ছোট্ট একটি লেক। একপাড় থেকে আরেক পাড়ে যাবার জন্য কাঠের সেতু তৈরি করা। আসলে এই লেক থেকেই ব্যাঙ ডাকার শব্দ ভেসে আসছিল। কাছে গিয়ে দেখি ব্যাঙগুলো যেন মিছিল করছে । তিনজন লোক টর্চলাইট নিয়ে মাছ ধরছেন। আমরা অন্ধকারের মধ্যেই মোবাইলের আলো দিয়ে লেক পার হলাম। তবে ওপাড়ে অন্ধকার। তাই বেশিদূর না গিয়ে আমরা ফিরে এলাম।

রাস্তার শেষ মাথা থেকে আমরা আবার ফেরা শুরু করলাম। এসময় আকাশ ভাই তার মোবাইলে নেপালি একটি গান বাজানো শুরু করলেন। গানটি শুনে আমার বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের গানের কথা মনে পড়লো ।হ্যাঁ, নেপালি সেই গানটিও আমাদের বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের মতো। নেপালি গান শেষে আমি আমার মোবাইলে 'আমারও পরাণও যাহা চায়' রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো শুরু করলাম। আকাশ ভাই এ গানটি গাইতে জানেন, তাই তিনিও মোবাইলের সাথে সাথে গানটি গাওয়া শুরু করলেন। লক্ষ্য করলাম আকাশ ভাই এ গানটি অনেক পছন্দ করেন।

গান শেষে আমরা নদীর পাড়ে কাঠের সেতুর উপরে বসলাম।এই জায়গাটি একটু অন্যরকমভাবে তৈরি। নদীর বেশ খানিকটা ভিতরে এই কাঠের সেতুটি তৈরি করা হয়েছে যেন লোকজন প্রাণভরে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

এই সেতুর উপর এসে আমি আর আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। আনন্দের আবেগে কাঠের উপর শুয়ে পড়লাম। তা দেখে আকাশ ভাই ছবি তোলা শুরু করলেন। একটু পরে আমি উঠে বসলাম। ততক্ষণে বেশ ভালোই শীত অনুভব করা শুরু করলাম আমি।

আকাশ ভাই হঠাত মোবাইল বের করে মিউজিকের সাথে নিজের গাওয়া গান রেকর্ডিং করতে শুরু করেছেন। বুঝে ওঠার আগেই আকাশ ভাইয়ের গান রেকর্ডিং করা শেষ। আমি আকাশ ভাইকে গানের রেকর্ডিংটা শোনাতে বললাম। তিনি শোনালেন। সত্যিই চমত্কার। আমি অভিভূত, মুগ্ধ। আকাশ ভাই যে এত সুন্দর গান গাইতে জানে আমি তা জানতাম না। আমি আবিষ্কার করলাম আকাশ ভাই সত্যিই একজন গায়ক। তারপর তিনি আমাকে তার রেকর্ডিং করা কয়েকটি গান শোনালেন।

সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নদীটা পার করার খুব ইচ্ছা হলো আমার। আকাশ ভাইকে বললাম, ভাই নদীর ওপাড়ে যেতে চাই। আমরা সাটেক পালাই। তাই আমাদের নদীর ওপাড়ে যেতেই হবে। (আকাশ ভাই মাঝে মাঝে আমাকে সাটেক পালাই ডাকেন) ।

আসলে সাটেক পালাই হলো চীনের তাইওয়ানের একটি উপজাতি। তারা খুব যোদ্ধা জাতি। কোনো কিছুতেই হার মানতে রাজি নন। শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যাওয়া সাটেক পালাইদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। একবার জাপান তাওয়ানের এই সাটেক পালাইদের ভূমি দখন করে নিয়েছিল। পরে সাটেক পালাই জাপানের কাছ থেকে এই ভূমি উদ্ধার করে।

যাইহোক আমরা খুঁজতে খুঁজতে মূল সেতুর পাশেই আরেকটা সেতু পেলাম, যে সেতু দিয়ে হেঁটে হেঁটে নদীটা পার হওয়া যায়। রাত তখন প্রায় দশটা। আমরা যখন নদীর ভিতর সেতুর মাঝখানে দাঁড়ালাম তখন যে কি অদ্ভুত অনুভূতি আমার মধ্যে কাজ করছিলো তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনা । বুঝলাম ভালো লাগা, ভালোবাসাকে কোনো মানদণ্ড দিয়ে পরিমাপ করা যায়। এটা অনুভূতির বিষয়। সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নদীর কলকল ধ্বনি উপভোগ করলাম। নদীর ওপাড়ে পৌঁছে ভাবলাম এবার এখানে যা যা আছে সব দেখবো। কিন্তু রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় আমরা আর ওপাড়ে বেশিক্ষণ অবস্থান করলাম না। ফেরার পথে নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে দু'হাত প্রসারিত করে বুক ভরে শ্বাস নিলাম। মি নদীর অকৃত্রিম ভালোবাসা, অকৃত্রিম সৌন্দর্যের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এপাড়ে ফিরে এলাম। মনে মনে বললাম, প্রিয় মি নদী, তোমার বুকভরা ভালোবাসার পরশ আমি হয়তো কখনই ভুলবোনা। ফিরে আসতে চাই তোমার বুকে বার বার, অনেকবার, বহুবার।

শানতুং প্রদেশে আসার আগে আমার চীনা সহকর্মী ওয়াং হাইমান ঊর্মি (জন্মস্থান শানতুং প্রদেশ) বলেছিলেন, শউকুয়াং অনেক সুন্দর, অনেক শান্ত একটি শহর। সেখানে গেলে আপনি তাদের ব্যবহার, তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হবেন এবং তাদের ভালোবাসা শুরু করবেন। হ্যাঁ, তিনি যথার্থই বলেছেন। শউকুয়াং সত্যিই অনেক সুন্দর শহর এবং এখানকার লোকজনের ব্যবহারও চমত্কার। তাদের আচার-আচরণ, ব্যবহার, আন্তরিকতা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে ।

প্রথম দিনই এখানকার একটি রীতি দেখে আমি অভিভূত হয়ে পড়ি। আমাদের রাতের খাবারের জন্য আয়োজন করা টেবিলটা একটু অন্যরকমভাবে সাজানো। টেবিলের চারপাশ ঘিরে বেশ কয়েকটি চেয়ার রাখা। এর মধ্যে কিছু চেয়ার একটু বিশেষ। জানতে পারি, এই চেয়ারগুলো অতিথিদের জন্য। অতিথিদেরকে এসব চেয়ারে বসতে হয়। যেসব অতিথি শউকুয়াংয়ে আসেন তাদেরকে বরণ করার এটি একটি প্রথা। এই প্রথা হাজার বছর ধরে পালন করে আসছেন তারা। আমরাও ছিলাম তাদের অতিথি, তাই তারাও আমাদেরকে স্থানীয় রীতি অনুযায়ীই বরণ করে নিলেন । খাবার টেবিলে এসে অনেকেই আমাদের সাথে পরিচয় হলেন, হাত মেলালেন, আমাদেরকে তাদের জন্মস্থান শউকুয়াংয়ে স্বাগত জানালেন।

বেশ কয়েকদিন এখানে থাকার কারণে অনেকের সাথেই পরিচয় হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে বন্ধুত্ব। তাদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, একসাথে খাবার খেয়েছি, গল্প করেছি । এক মুহূর্তের জন্যও আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি দেখিনি তাদের মধ্যে। যখন রাস্তায় হেঁটে বেড়িয়েছি, সুপার মার্কেট বা পার্কে গিয়েছি তখন ছেলেমেয়েরা আমাকে দেখে আমার কাছে এসেছেন, জানতে চেয়েছেন আমি কোন দেশ থেকে এসেছি, কি করি ইত্যাদি ইত্যাদি । তারা হাসিমাখা মুখ নিয়ে আমার সাথে ছবি তুলেছেন। আমার তখন মনে হয়েছে আমি বাংলাদেশেই আছি। বাংলাদেশে আমি আমার বন্ধুদের সাথে যেভাবে মিশি, গল্প করি এখানেও সেরকম ভালোবাসা পেয়েছি।

আমাদের যিনি দেখাশুনা করছিলেন তিনি আমাকে বলেন, আমি যদি মাঝে মাঝে শউকুয়াংয়ে আসি তাহলে তিনি অনেক খুশি হবেন। সত্যি তার এ কথায় আমি রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে উঠি। তাকে বলি, সুযোগ পেলে অবশ্যই এখানে আসবো, আপনাদের সাথে দেখা করবো । এক কথায়, এখানকার লোকদের আথিতেয়তা সত্যিই চমত্কার। হ্যাঁ, শউকুয়াংয়ের সবুজ, শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশের মতোই এদের মনও অনেক শান্ত, স্নিগ্ধ ও উদার।

আগেই বলেছি শউকুয়াংয়ের সবজি, ফল, খাবার অনেক বিখ্যাত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখানকার সবজি, ফল রপ্তানি করা হয়।

সবজি, ফলমূল ছাড়াও রয়েছে নানান রকমের খাবার। সকাল, দুপুর, রাতের খাবারে হরেক রকমের সবজি, মাছ, মাংস, ফলের আয়োজন। সবজি, ফলমূল একেবারেই সবুজ, সতেজ ও টাটকা। ড্রাগন ফল, তরমুজ, কলা, কমলা, টমেটো, শসা, কি নেই খাবারে; সবই আছে, সবই অসাধারণ। বিশেষ করে চিংড়ি মাছের কথা না বললেই নয়। এখানকার চিংড়ি মাছ সত্যিই অসাধারণ। এসব চিংড়ি মাছ আমাদের এতটাই আকৃষ্ট করে যে, প্রতি বেলায় খাবারের সময় আমি আর আকাশ ভাই দুই প্লেট করে চিংড়ি মাছ খাই। আকাশ ভাই মজা করে বলতেন, চিংড়ি মাছ খেতে খেতে আমরা দু'জনও চিংড়ি মাছ হয়ে গেছি। হ্যাঁ, আকাশ ভাই ঠিকই বলেছেন। এখানকার সব খাবারই আমরা ভীষণভাবে উপভোগ করেছি।

খাবার টেবিলে বসে বসে আমি আর আকাশ ভাই বলতাম, এসব খাবার আমরা মিস করবো। মিস করবো শউকুয়াংয়ের মানুষদেরও।

হ্যাঁ, শউকুয়াংকে সত্যিই আমি ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবেসে ফেলেছি আমার মন থেকে, আমার আত্মা থেকে ।

সবশেষে বলতে চাই, প্রাণের শহর শউকুয়াং তুমি দীর্ঘজীবী হও। তোমার নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী আমার মনে চিরদিন বিরাজ করবে। তোমার অকৃত্রিম সবুজের বুকে আমি আবারও আসতে চাই।

(এনামুল হক টুটুল/ শিয়েনান আকাশ)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040