shouguang2.mp4
|
সুন্দর, ঝকঝকে পাকা রাস্তার পাশে সারি সারি ভাবে সাজানো সবজির ক্ষেতগুলো দেখলেই মনটা জুড়িয়ে যায়। এক একটি ক্ষেতে এক ধরনের সবজি চাষ করা হচ্ছে । কোথাও টমেটো, কোথাও শসা, কোথাও কুমড়া, কোথাও বেগুন, কোথাও ফুলকপি, কোথাও মরিচ। হাজার রকমের ফল ও সবজির এক বিশাল প্রান্তর যেন এই শউকুয়াং।
ক্ষেতের পাশের পাকা রাস্তায় ছোট ছোট টেবিলে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি রাখা আছে । আমাদের মতো এমন দর্শনার্থীদের জন্যই মূলত এসব রাখা । কেবল দেখার জন্য নয়, খাবারের জন্যও। অন্যান্য দর্শনার্থীদের মতো আমরাও সেসব টেবিল থেকে সবজি নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম । সত্যিই অসাধারণ! ক্ষেত থেকে টাটকা ফল খাওয়া তা তো ইদানীং ভাগ্যের ব্যাপার। তাই এ সুযোগটি মিস করতে চাইলাম না। প্রথমে নিজেই হাত বাড়িয়ে একটা শসা খাওয়া শুরু করলাম। আমাদের সাথে থাকা এক কর্মকর্তা তখন অনেকগুলো ছোট ছোট টমেটো আমার হাতে দিয়ে চীনা ভাষায় বললেন, এগুলো আপনার জন্য। আমি মৃদুহেসে তাকে ধন্যবাদ জানালাম। ধন্যবাদ জানানোর পরই তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন টমেটো ক্ষেতে। যখন টমেটো ক্ষেতে প্রবেশ করি তখন উত্তর কোরিয়ার একটি প্রতিনিধি দলের সাথে আমাদের দেখা হয়। তারাও এ এলাকাটি পরিদর্শনে এসেছেন। আমরা তখন একসাথে বিভিন্ন ফল ও সবজির ক্ষেত ঘুরে দেখতে শুরু করলাম।
শউকুয়াং ভেজিটেবল কোম্পানির এক কর্মকর্তা আমাদের জানান, মূলত বারো মাসই এইসব সবজি চাষ করা হয়।সবজি ক্ষেতের ছাউনি ও মাটির দেয়াল নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবজি ক্ষেতের সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। যেমন, পুরো ক্ষেতটিকে ছাউনি দিয়ে ঘিরে ফেলা এবং মাটির দেয়াল তৈরি করা। এই ছাউনির মাধ্যমে সূর্যের আলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মাটির দেয়াল দিনের বেলায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে ও রাতের বেলায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাইরে বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কথা বলতে বলতে পুরো সবজি ক্ষেত ঘুরে জানতে পারি, এই চাষাবাদ পদ্ধতিতে তারা কোনো সার ব্যবহার করেন না। এমনকি কীটপতঙ্গের হাত থেকে সবজি ক্ষেতকে রক্ষার জন্য তারা কোনো কীটনাশকও ব্যবহার করেন না । কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে তারা এক ধরনের আলোক পদ্ধতি গ্রহণ করেন।
সবজি ক্ষেতে পানি সরবরাহের জন্য ক্ষেতের ভিতরেই রয়েছে ছোট মেশিন। ক্ষেতের চারপাশে ছোট ছোট ড্রেনের ব্যবস্থা আছে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি এই ড্রেনের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা বা বিভিন্ন কোম্পানি এই সবজি চাষ করে থাকে।কোনো কোনো কোম্পানি এই সবজি ও ফল সরাসরি রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। আবার কোনো কোনো কোম্পানি রাজধানী পেইচিংসহ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে তা সরবরাহ করে।
মূলত চীনের বিভিন্ন এলাকায় যে সবজি ও ফল পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই আসে শানতুং প্রদেশ থেকে। সবজি উত্পাদনের মাধ্যমে নিজেদের জীবনে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন এই অঞ্চলের মানুষ । কৃষির মাধ্যমে সারা চীনে তারা ঘটিয়েছেন বিপ্লব আর দেশের অর্থনীতিকে করেছেন শক্তিশালী।
(এনামুল হক টুটুল/ শিয়েনান আকাশ)