Web bengali.cri.cn   
রাস্তায় বিভিন্ন দেশের শীর্ষনেতার নিরাপত্তা ব্যবস্থা
  2015-04-27 18:17:22  cri

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পাকিস্তান সফর করেন। সফর উপলক্ষে তিনি যখন ইসলামাবাদ পৌঁছান তখন তাঁকে খুব আড়ম্বরপূর্ণভাবে স্বাগত জানানো হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যখন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর বিশেষ বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে, তখন চীন ও পাকিস্তানের যৌথভাবে নির্মিত 'থান্ডার' নামক আটটি যুদ্ধ বিমানের পাহারায় প্রেসিডেন্ট সি'র বিশেষ বিমান ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তা বলা যায়, খুবই উচ্চ মর্যাদার এক স্বাগত।

আসলে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা যখন বাইরে যান তখন তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিস্তারিত বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা প্রটোকল ছাড়াও অন্য দেশ সফররত শীর্ষ নেতাকে স্বাগত জানানোর জন্য মাঝে মাঝে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়।

মানব সভ্যতা শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রম করে চলেছে, সাথে সাথে ঘটছে নানান ধরনের ঘটনা। আর বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যে কত বিচিত্র হতে পারে তা জানলে বিস্মিত হবেন নিঃসন্দেহে।

যেমন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের গমন পথে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, 'মনস্টার' নামে কালো বাস, বেঞ্জ গাড়ি, ব্যক্তিগত বিমানসহ অনেক বিলাসবহুল গাড়ি। আবার কিছু কিছু দেশের নেতারা সাধারণ মানুষের মত বাইরে যেতে পছন্দ করেন।

বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলতে চাইলে তা বলে শেষ করা যাবে না। এদের মধ্যে যেমন নিচ্ছিদ্র আর বিলাসী নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, আবার সাধারণ, অতি-সাধারণ মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আছে। আসুন তাহলে, আমরা শুরুতেই নিচ্ছিদ্র আর বিলাসী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শুরু করি, কেমন?

২০১২ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চাঁদা সংগ্রহের জন্য লস এ্যাঞ্জেলেসে যান। তখন লস এ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ ওবামার চলার পথে অল্প কিছু সময় সাধারণের জন্য ট্রাফিক কনট্রোল জারি করে। যদিও স্থানীয় টেলিভিশন, পত্রিকা ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগাম ঘোষণা দেওয়া হয়, তবুও এমন সিদ্ধান্তে সত্যি জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এতে অনেক নাগরিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

লস এ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা মিলেন্না ওয়েবসাইটে লেখেন, প্রেসিডেন্ট ঠিক আমার বাসার সামনে থেকে চলে যান, সত্যি ২০টিরও বেশি পুলিশের গাড়ি তাঁর চারপাশে ছিল। এমন কঠিন ট্রাফিক কন্ট্রোলের কারণে আমি আমার যোগব্যায়ামের ক্লাসে যেতে পারিনি। ভিল নামে আরেকজন বাসিন্দা লেখেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট ওবামা, আপনি জানেন কি, এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি সাফল্যের সঙ্গে ভোটারদের হারাবেন। ঠিক আপনার কারণে লস এ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

এমন ট্রাফিক কন্ট্রোল যদিও প্রেসিডেন্টের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করেছে, তবে জনসাধারণের জন্য তা দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। এসময় আরো কিছু কিছু লোক ওবামাকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেন। যেমন তারা বলেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট, প্রতিবার আপনি যখন লস এ্যাঞ্জেলেসে আসেন তখন সড়ক যোগাযোগ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে, এটা সত্যি ভালো নয়। হেলিকপ্টার, হ্যাঁ, আপনি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আসতে পারেন, অথবা গোপন সুড়ঙ্গ-সড়কের কথাও বিবেচনা করতে পারেন।

একবার নয় এমন ঘটনা অনেক বার ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আপনারা কি জানেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট একবার যখন বাইরে যান তখন সাধারণত কতগুলি গাড়ি একসাথে যায়? এ সংখ্যা হল ২৭টি। আপনি হয়তো আরও জিজ্ঞেস করতে চান, একজন ব্যক্তি বাইরে যাবে, তার জন্য ২৭টি গাড়ি কেন? তাহলে এ ২৭টি গাড়ি কার কার জন্য? হ্যাঁ, প্রেসিডেন্টের জন্য অবশ্যই একটি বিশেষ গাড়ি থাকবে আর এ গাড়ি নিশ্চয়ই কেবল বিলাসবহুল নয়, নিরাপত্তার দিক থেকেও অনেক উঁচুমানের। এ ছাড়া রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী, দেহরক্ষী, স্থানীয় কর্মকর্তা, উপদেষ্টা গ্রুপসহ আরও বেশকিছু উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার গাড়ি। নিরাপত্তা সু-নিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশের মোটরসাইকেল দল প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহরের সামনে থাকে। আর ট্রাফিক কন্ট্রোল তো আছে, কারণ প্রেসিডেন্ট বলে কথা।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন যে, তারাও আসলে নিরুপায়। কারণ নিরাপত্তার এই সকল ব্যবস্থা ছাড়া প্রেসিডেন্টের পক্ষে বাইরের কোনো অনুষ্ঠানে সময় মত পৌঁছানো সম্ভব নয়। যদি ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে প্রেসিডেন্টের পক্ষে সময় মত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।

আসলে এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। যদিও দেশের ভিতরে 'বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত গাড়ি' নামে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত গাড়ি-নীতি বাতিলের জন্য তিনি রাশিয়ায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন, তবে তিনি নিজেই যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবসময় বিশেষ অধিকার ভোগ করে থাকেন। এ নিয়ে অভিযোগেরও শেষ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এক টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

বিশ্বে তো অনেক দেশ আছে, তাইনা? তবে সব দেশের নেতারাই কি এমন দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন? এর উত্তর হল না। ওবামা এবং পুতিনের তুলনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের নিরাপত্তা প্রটোকল কিন্তু খুব সাধারণ এবং সহজ। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান-প্রেগানকোন দুর্গ ভ্রমণে যান। তিনি কিভাবে সেখানে যান তা শুনলে আপনারা নিশ্চয়ই কিছুটা অবাক হবেন। তিনি সাধারণ ট্রেনে করে সেখানে যান। তিনি বলেন, এখনো ফ্রান্সের আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার হয় নি, তাই বিলাসবহুল ভ্রমণে অর্থ অপচয়ের পরিবর্তে সাশ্রয় করাটাকে উত্তম মনে করেন। আসলে এ ক্ষেত্রে চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সি চিন পিংও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখন তিনি বাইরে যেতে কোনো ট্রাফিক কন্ট্রোল জারি করেন না এবং জনসাধারণের মত ট্রাফিক লাইটের সামনে অপেক্ষা করেন। জনসাধারণও কাছ থেকে তাঁকে দেখতে পান। এটা খুব ভালো একটি পরিবর্তন, তাই না?

আসলে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থা একটু ভিন্ন। বাংলাদেশের শীর্ষনেতার চলাচলে বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে গাড়িবহর। এসব গাড়িবহরের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাড়ি। তুমি তো জানো যে, বাংলাদেশের লোকসংখ্যা অনেক বেশি। রাস্তাঘাটও খুব বেশি প্রশস্ত নয়। তাই রাস্তায় প্রায়ই ট্রাফিক জ্যাম থাকে। শীর্ষনেতা যখন বাইরে বের হন তখন রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। তা না হলে শীর্ষনেতার পক্ষে কোনো মিটিং বা জরুরি সভায় ঠিক সময়ে পৌঁছানো অনেক কঠিন।

এ বিষয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরোনও খুব ভালো একটি উদাহরণ হতে পারেন। যদিও তাঁর পরিবার অনেক ধনী, তবে জনগণের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি খুব ভালো এবং তা বিলাসী নয়। তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় যানবাহন হল বাইসাইকেল। বিবিসি বিশেষ করে একবার ক্যামেরোনের বাইসাইকেল চালিয়ে পার্লামেন্টে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে।

হয়তো কেউ কেউ জিজ্ঞেস করবে যে, তিনি কি সত্যিই বাইসাইকেল পছন্দ করেন, না কি শুধু নিজের সুন্দর একটি রাজনৈতিক ভাবমূর্তি তৈরি করার জন্য এটা করেন?

ক: হ্যাঁ, খুব ভালো বলেছো। তবে আমার মনে হয় তিনি সত্যি সত্যিই বাইসাইকেল চালাতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং পছন্দও করেন। কেননা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি সব সময় বাইসাইকেল চালাতেন এবং সে সময়ে দু দু'বার তাঁর বাইসাইকেল হারিয়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় তিনি অনেক আগে থেকেই বাইসাইকেল চালাতেন। ২০০৮ সালে যখন তিনি রক্ষণশীল পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তিনি পুলিশের কাছে জানান যে, অফিস শেষে তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে সুপারমার্কেটে কিছু জিনিস কিনতে যান এবং কেনাকাটার পর তিনি দেখেন যে, তাঁর বাইসাইকেলটি হারিয়ে গেছে। আবার ঠিক একবছর পর বাসার সামনে থেকে চোর তাঁর বাইসাইকেলটি চুরি করে। টুটুল, তুমি কি জানো, এতে ক্যামেরোনের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো? হ্যাঁ, তাঁর মুখপাত্রের কথা অনুযায়ী, এ কারণে তিনি অনেক অনেক রাগ করেছিলেন। কারণ বাইসাইকেল তাঁর প্রিয় বাহনের একটি।

ক্যামেরোনের নিরাপত্তা প্রটোকল সম্পর্কে আমিও তথ্য মাধ্যম থেকে কিছু জানতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সবসময় খুব সহজ সাদামাটা নিরাপত্তা বলয়ে বাইরে যেতে পছন্দ করেন, এমনটাই দেখা যায়। ২০১০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, এসময় তিনি সাধারণের মতোই বিজনেস ক্লাসের টিকিটে বিমানযোগে ওয়াশিংটন ভ্রমণ করেন। এরপর নিউইয়র্ক সফরকালে তিনি কোনো বিশেষ গাড়ি গ্রহণ করেন নি, বরং তিনি জনসাধারণের সাথে একই ট্রেনে করে সেখানে যান। তাঁর এই সফর মার্কিন তথ্য মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়, বিশেষ করে তাঁর নিরাপত্তা প্রটোকলের ভূয়সী প্রশংসা করে। আমরা সবাই জানি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফর অবশ্যই বিশেষ বিমান 'এয়ার ফোর্স ওয়ান'-এ করেই ভ্রমণ করতে হবে। আর স্থলে রয়েছে বড় আর বিলাসবহুল গাড়ির বহর। তাই তুলনামূলকভাবে এ দু'নেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরোনই তথ্য মাধ্যম এবং জনগণের কাছে বেশি পছন্দের হয়ে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক, তাইনা?

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040