Web bengali.cri.cn   
অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাসজনিত সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়
  2015-04-26 19:22:14  cri


আধুনিক সমাজে মানুষের জীবনের গতি দিন দিন বাড়ছে; বাড়ছে মানুষের ব্যস্ততা। অনেককেই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কাজ করতে হয়। আবার অনেকে আছেন যারা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই দেরিতে ঘুমান। কিন্তু আমাদের জীবন যতই বদলাক, অভ্যাস যতই বদলাক, সেই পুরনো আপ্তবাক্যটির সত্যতা কিন্তু বদলায়নি। আপ্তবাক্যটি হচ্ছে: আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ; মেকস্‌ আ পারসন হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ। সোজা বাংলায় বললে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে খুব ভোরে জেগে ওঠার অভ্যাস একজন মানুষকে স্বাস্থ্যবান, স্বচ্ছল ও জ্ঞানী করে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আধুনিক সমাজে আমাদের অনেকেরই রাত জাগার বদভ্যাস গড়ে উঠেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই এ অভ্যাসের কারণে আমাদের অনেককেই প্রতিনিয়ত নানান সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। কেউ কেউ তো শেষ পর্যন্ত ইনসোম্‌নিয়া বা নিন্দ্রাহীনতায় ভুগছেন।

যারা রাতে দেরি করে ঘুমাতে যান এবং ধীরে ধীরে এটা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তারা অবধারিতভাবেই কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। এ সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে অভ্যাস পাল্টানো এবং সময়মতো ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। কিন্তু কী করে এটা সম্ভব? যাদের দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে, তাদের জন্য এ অভ্যাস ত্যাগ করা সহজ নয়। আবার এটা অসম্ভবও নয়। চিকিত্সকরা বলছেন, ৭টি পরামর্শ মেনে চললে, এক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যাবে।

প্রথম পরামর্শ হচ্ছে: দেরিতে না-ঘুমানোর সংকল্প করুন এবং তা মনে রাখার চেষ্টা করুন।

এটা হচ্ছে সমস্যা থেকে মুক্তির প্রথম উদ্যোগ। আপনাকে আগে এ সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাসটি ভালো নয়, ক্ষতিকারক। তার পর আপনাকে আত্মশাসন করতে হবে। হ্যা, নিজেকে নিজে শাসন করার কথাই বলছি। নিজেকে বলুন: তুমি প্রতিদিন দেরিতে ঘুমাতে যাও। এটা মোটেই ঠিক নয়। এতে তোমার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। অতএব এ অভ্যাস তোমাকে ত্যাগ করতে হবে। প্রতিদিন নিজের মনকে এভাবে শাসন করুন। এবং নিজেই আবার সে শাসন মেনে চলার চেষ্টা করুন। একসময় দেখবেন আপনার মনে এ অভ্যাস ত্যাগের দৃঢ় ইচ্ছা গড়ে উঠবে।

দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে: অফিসের কাজ বাসায় আনবেন না। আগেই বলেছি, আমাদের জীবনে ব্যস্ততা বেড়েছে। আজকাল অফিস-আদালতেও কাজের চাপ বেড়েছে। আমাদেরকে তাই অনেক সময় অফিসের কাজ বাসায় করতে হয়। আর রাত জাগার বদভ্যাসটা অনেকের এ কারণেই গড়ে ওঠে।

অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করলে তা সম্ভব। প্রয়োজনে অফিসে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরুন। মাথার মধ্যে অফিসের কাজের চিন্তা গিজগিজ করলে রাতে ভালো ঘুম না-হবারই কথা। অফিসের কাজ অফিসে শেষ করে বাসায় ফেরা মানে, নিশ্চিন্ত থাকা, চাপহীন থাকা। নিজেকে বলুন: বাসায় অফিসের কাজ নিয়ে যাবো না, সময়মতো ঘুমাতে যাবো। কোনো অবস্থাতেই এ অন্যথা হবে না।

তৃতীয় পরামর্শ হচ্ছে: ধীরস্থির ও সংযমী মনোভাব বজায় রাখুন।

রাত জাগার বদভ্যাস আরেকটি বদভ্যাসের জন্ম দেয়। আর সেটি হচ্ছে: সময়ের কাজ সময়ে শেষ না-করে, শেষ সময়ের জন্য রেখে দেওয়ার বদভ্যাস। এ ধরনের মানুষের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে: তারা বেশ খুতখুতে টাইপের হয়ে যান। যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই অধিক সিরিয়াসনেস দেখানো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয় এবং সব কাজ নিখুঁতভাবে করার একটা প্রচেষ্টাও তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কোনো কাজ নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা দোষের নয়, বরং ভালো। কিন্তু এক্ষেত্রেও অতিরিক্ত রকমের সাবধানতা অবলম্বন করতে গেলে হিতে বিপরিত হতে পারে। তাই, মধ্যপন্থা অবলম্বন করুন। ধীরস্থির থাকুন, সংযমী হোন। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করুন। তাতে যদি কাজের মান খানিকটা খারাপও হয়, হতে দিন। চেষ্টা থাকলে, ধীরে ধীরে এভাবেই কাজের মান বাড়বে। কিন্তু মানের কথা চিন্তা করে কাজ ফেলে রাখলে, দুশ্চিন্তা বাড়লেও কাজের মান বাড়বে না।

খুতখুতে ভাব ত্যাগ করুন। মনে রাখবেন 'যথাসাধ্য ভালোর' চেয়ে ভালো কিছু নেই। রবীন্দ্রনাত ঠাকুর বলেছেন:

"যথাসাধ্য ভালো বলে ওগো আরও ভালো

কোন স্বর্গপুরী তুমি করো থাকো আলো;

যথাসাদ্য ভালো কেঁদে কয় আমি থাকি হায়

অকর্মণ্য মুর্খের অক্ষম ঈর্শায়।"

চতুর্থ পরামর্শ হচ্ছে: ঘুমের আগে রিলাক্স করা শিখুন। হ্যা, শরীর ও মনকে রিলাক্স হতে দেওয়া জরুরি। ঘুমের আগে নিজের শরীর ও মনকে রিলাক্স মুডে নিয়ে আসতে জানাটা জরুরি। একটু একটু করে টেকনিকটা শিখে নিন। ঘুমের আগে শরীর ও মন রিলাক্স মুডে আসলে ভালো ঘুম হবে। শরীর ও মনকে রিলাক্স মুডে নিতে আপনি নিয়মিত ৪টি কাজ করতে পারেন:

১: ঘুমার আগে উষ্ণ পানিতে পা ধোয়া। ২: কোমল মিউজিক শোনা । ৩: দুধ পান করা। ৪: বই পড়া।

পঞ্চম পরামর্শ হচ্ছে: যথাসময়ে ঘুমাতে যাওয়ার পর নিজের মনকে অটো সাজেশান দিন। হ্যা, আপনার যেহেতু দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে, সেহেতু আপনি ঠিক সময়ে বিছানায় গেলেই, আপনার মন আপনাকে বলবে: এখন ঘুম আসবে না। আপনাকে তখন উল্টো মনকে বোঝাতে হবে। তাকে বলতে হবে: তুমি ভুল করছো। এটা তোমার ভুল ধারণা। আমাকে এখই ঘুমাতে হবে। আমার জন্য এটাই কল্যাণকর।

৬ষ্ঠ পরামর্শ হচ্ছে: দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাসের কারণে আপনি ঘুমাতে যাওয়ার সময় যেসব সমস্যায় পড়ছেন, সেগুলোকে গুরুত্ব দেবেন না।

আপনি এসব সমস্যাকে যত কম গুরুত্ব দেবেন তত মঙ্গল। সমস্যাগুলো তো আছেই, একে নতুন করে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। বরং এগুলোকে গুরুত্ব না-দিয়ে আপনি আপনার কাজ করে যান। সময় মতো ঘুমাতে যান, ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীর-মনকে যতোটা সম্ভব রিলাক্স মুডে নিয়ে যান। এমন ভাব দেখান, যেন আপনার কোনো সমস্যাই নেই। এভাবে আপনি দেরিতে ঘুমাতে যাবার বদভ্যাস থেকে রেহাই পেতে পারেন।

সপ্তম ও শেষ পরামর্শ: আত্ম-সম্মোহন বা সেলফ্-হিপনোসিস করুন।

আত্ম-সম্মোহন করে আমরা অনেক সমস্যা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। আবার অনেক সমস্যার সমাধানও করতে পারি। বিশেষ করে মানসিক সমস্যা। মনে রাখবেন, রাত জাগার বদভ্যাস মূলত মানসিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে আত্ম-সম্মোহন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। ধীরে ধীরে এগুবেন।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040