Web bengali.cri.cn   
দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের অবদান
  2015-04-20 19:26:44  cri


'চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর' হচ্ছে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলগত ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ দ্বিপাক্ষিক করিডোর প্রতিষ্ঠার ধারণার আওতায় বাস্তবতার খাতিরেই পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন নানাভাবে অবদান রাখছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে অবকাঠামো স্থাপন, জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি ও জলসেচ প্রকল্প ইত্যাদি। এখন আমরা শ্রোতাদের এমন কয়েকটি প্রকল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।

২০১৩ সালের মে মাসে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং পাকিস্তান সফরকালে 'চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর' প্রস্তাব উত্থাপন করেন। 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলগত ধারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন, জ্বালানি, টেলি-যোগাযোগ, সমুদ্রসহ নানা ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং এর মাধ্যমে দু'দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করা।

দু'দেশের মধ্যে স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাকিস্তানের উত্তরাংশের চীন-পাক সীমান্তের খুনজেরাব পাস বন্দর থেকে দক্ষিণাংশের গোয়াদার বন্দর পর্যন্ত একটি রাজপথ নির্মাণ করা হবে। গত শতাব্দীতে নির্মিত কারাকোরাম সড়কের পাকিস্তান অংশ হবে এ নতুন রাজপথের উত্তরাংশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র স্থলপথ হিসেবে কারাকোরাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

চীনের সড়ক ও সেতু প্রকল্প লিমিটেড কোম্পানি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেছে। এ কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান ওয়েন কাং বলেন, "আমাদের কোম্পানি এখন পাকিস্তানে দুটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। একটা হচ্ছে কারাকোরাম রাজপথের সম্প্রসারণ প্রকল্প। আরেকটা হচ্ছে, কারাকোরাম রাজপথের বাঁধযুক্ত হ্রদের লাইন পরিবর্তন প্রকল্প। কারাকোরাম রাজপথ প্রকল্পের আরম্ভবিন্দু হচ্ছে পাকিস্তানের রাইকোট এবং এর শেষবিন্দু হচ্ছে সীমান্তের খুনজেরাব। এ রাপজথের মোট দৈর্ঘ্য ৩৩৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের পয়লা আগস্ট এবং ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর এর কাজ সম্পন্ন হয়। কারাকোরাম রাজপথের বাঁধযুক্ত হ্রদের লাইন পরিবর্তন প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট মূল্য ২৭.৫ কোটি মার্কিন ডলার। কার্যমেয়াদ ৩৮ মাস। এ প্রকল্প ২০১২ সালের ২৬ জুলাই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের ৮৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নকাজ শেষ হবে।"

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর পরিকল্পনার মধ্যে জ্বালানি প্রকল্পও লক্ষণীয় স্থান দখল করে আছে। ২০১৪ সালের ৬ মে পাকিস্তানের কাশিম বন্দর কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এ প্রকল্প ২০১৩ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং পাকিস্তান সফরকালে উত্থাপিত প্রস্তাবের পর নেওয়া প্রথম বিদ্যুত খাতের সহযোগিতা প্রকল্প। এ কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর প্রতি বছর প্রায় ৯৫০ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুত্ উত্পাদিত হবে।

এ ছাড়া, চীনের গেচৌবা গ্রুপ জ্বালানি খাতেও পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এ গ্রুপের পাকিস্তান শাখা কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক থাও চিয়ে বলেন, "সুকি কিনারি জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মানসেহরা অঞ্চলে অবস্থিত। এর অবস্থান রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ২৬৫ কিলোমিটার দূরে। এ জলবিদ্যুত কেন্দ্রের বিদ্যুত উত্পাদন ক্ষমতা ৮৭০ মেগাওয়াট। আর বার্ষিক পড় বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ৩০৮.১ কোটি কিলোওয়াট। এ প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৯৬.২ কোটি মার্কিন ডলার এবং এর নির্মাণকাল ৭২ মাস। এ ছাড়াও রয়েছে ঝিমপির বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রকল্প। এ প্রকল্প পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচির উত্তর-পূর্বের ঝামপিরে অবস্থিত। এ প্রকল্পের বিদ্যুত উত্পাদন ক্ষমতা ৫০০ মেগাওয়াট। আর প্রকল্পের কার্যমেয়াদ ১৬ মাস।"

এদিকে, চীনের তিন-গিরিখাত গ্রুপ পাকিস্তানে সে দেশের প্রথম বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে সম্পন্ন হয়েছে। এর বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ৪৯.৫ মেগাওয়াট।

সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন খাতে টিবিইএ সিনচিয়াং নতুন জ্বালানি লিমিটেড কোম্পানি পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশে ১০০ মেগাওয়াট সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করেছে চলতি বছরের ২৭ মার্চ। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৪.৯ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যাবে, যা দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো সম্ভব। এ প্রকল্প হচ্ছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় নির্মিতব্য ১০ লাখ কিলোওয়াট সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র প্রকল্পের প্রথম ধাপ। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২১ কোটি মার্কিন ডলার। দু'দেশের কর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টায় মাত্র ১০ মাসের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। (ইয়ু/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040