গত ৩১ মার্চ চীনের পিপলস ডেইলি পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিয়ার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, রাশিয়ার গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউরি তাভরোভস্কির একটি নিবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে।
'এক অঞ্চল এক পথ'-এর দ্বারা প্রতিবেশী দেশগুলোও উপকৃত হবে শিরোনামে এ নিবন্ধে বলা হয়েছে, আগেকার আঞ্চলিক সহযোগিতার তুলনায় কিছুটা পার্থক্য আছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল রাষ্ট্রের বাইরে কোনো প্রশাসনিক সংস্থা গঠন করেনি এবং এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। সেজন্য এ অঞ্চল নির্মাণে স্বায়ত্তশাসনবোধ এবং নমনীয়তা রয়েছে।
২০০২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দশ বছরে চীন ও মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্যিক পরিমাণ ২৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৩৭০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩০.৮ শতাংশ। আগের উত্তপ্ত মরুভূমির প্যাঁচানো রাস্তা বর্তমানে রেল, সড়ক ও গ্যাস-তেল পাইপ, বিদ্যুত ব্যবস্থা দ্বারা গঠিত উন্নত নেটে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে অতীতকালীন সিল্ক রোডে আর কেবল সিল্ক, মণি-মুক্তা ও মসলার চলাচল নয়, বরং ব্যাপক পণ্য, সম্পদ ও পুঁজির বিনিময় হবে।
চীনের সুপ্রতিবেশী দেশ হিসেবে রাশিয়া বিশেষ করে ফার ইস্ট ও সাইবেরিয়া অঞ্চল এর ভৌগোলিক সুবিধা ভোগ করবে। ২০১৪ সালের মে মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন 'এক অঞ্চল এক পথ' অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছিলেন এবং রাশিয়ার ফার ইস্ট অঞ্চলে চীনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানান পুতিন। বর্তমানে দু'দেশ জ্বালানি ও আন্তঃসীমান্ত পরিবহণের অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করেছে।
এ নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, যৌথভাবে 'এক অঞ্চল এক পথ' অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করায় বিশ্ব অর্থনৈতিক কেন্দ্র পূর্ব দিকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর যৌথ উন্নয়ন সাধনের সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। এ অঞ্চলের যৌথ নির্মাণ ইউরোপ-এশিয়ার অর্থনৈতিক একীকায়ণ এবং পুরো অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়নের জন্য অনুকল। পাশাপাশি এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অনুকূল হবে। ইউরেশিয়ার বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টেরিটরিতে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। একই সঙ্গে এখানেই সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চরমপন্থিদেরও অবস্থান রয়েছে। সেজন্য টেকসই শান্তি ও অভিন্ন সমৃদ্ধ ইউরেশিয়া নির্মাণ করতে এ অঞ্চলের সকল দেশের অভিন্ন মতৈক্য রয়েছে।
যৌথভাবে 'এক অঞ্চল এক পথ' অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা সাংস্কৃতিক একীকরণের জন্যও অনুকল। বর্তমান 'এক অঞ্চল এক পথ' নতুন সহযোগিতার পদ্ধতিতে সকল সভ্য মানবজাতিকে সংযুক্ত করেছে। তাছাড়া এর ফলে বিভিন্ন দেশ ও জনগণের সম্প্রীতিময় সহাবস্থান, পরস্পরের শিক্ষাগ্রহণ এবং সমতাসম্পন্ন ও পরস্পরের উপকারিতা এবং অভিন্ন উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং'এর কথার উদ্ধৃতি দিয়ে নিবন্ধে বলা হয়েছে, দু'হাজার বছরের যোগাযোগের ইতিহাস থেকে প্রতিফলিত হয়েছে যে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে ও পরস্পরের আস্থা জোরদার করে, সমতাসম্পন্ন ও সহযোগিতামূলকভাবে নীতিবোধে অবিচল থাকলে বিভিন্ন জাতি ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের দেশ যৌথভাবে শান্তি ও যৌথ উন্নয়ন অর্জন করতে পারে।
(ওয়াং তান হোং/মান্না)