0412jiankang
|
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া প্রতিরোধের জন্য ভ্যাক্সিন বা টিকা আবিস্কার হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য হল কলেরা ভ্যাক্সিন। রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধেও ভ্যাক্সিন আবিস্কার হয়েছে।
আজকাল ডায়রিয়া বা উদারাময় কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ডায়রিয়া মারাত্মক হতে পারে। তাই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। আসলে, শিশুদের যে-কোনো অসুখ-বিসুখেই আমাদের অতিরিক্ত সাবধান হওয়া উচিত। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে বিশেষজ্ঞরা শিশুদের ডায়রিয়ার চিকিত্সায় ৫টি পরামর্শ দিয়েছেন। আজ আমরা এসব পরামর্শসহ কয়েকটি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো।
পরামর্শ এক: শিশুর মল ও প্রস্রাব ত্যাগের সংখ্যার হিসেব রাখুন।
শিশুর ডায়রিয়া হলে তাকে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। পাশাপাশি তার মল ও প্রস্রাব ত্যাগের সংখ্যার হিসেব রাখতে হবে। কারণ, এ থেকে বোঝা যাবে যে শিশুর শরীর থেকে কতো পানি চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনে দ্রুত শিশুর স্টুল পরীক্ষা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, স্টুল সংগ্রহ করার এক ঘন্টার মধ্যে তার পরীক্ষা শেষ করা জরুরি। বেশি দেরি হলে পরীক্ষার যথাযথ ফল না-ও পাওয়া যেতে পারে।
পরামর্শ দুই: পেটে গরম জলের শেক দিতে পারেন।
ডায়রিয়া হলে শিশুর শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। এ সময় তাদের খাওয়ার আগ্রহও কমে যায়। ফলে, তাদের শরীর তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা হতে পারে। এসময় গরম পানির বোতল বা ব্যাগ দিয়ে শিশুর পেটে শেক দেওযা যেতে পারে। তবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে বাচ্চার ত্বকের কোনো ক্ষতি না হয়।
পরামর্শ তিন: বাচ্চার ডায়াপার ঘন ঘন পরিবর্তন করুন
ডায়রিয়া আক্রান্ত বাচ্চার ডায়াপার ঘন ঘন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই। তাই বিষয়টার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডায়াপার ভিজে গেলেই তার পরিবর্তন করে দিতে হবে। পাশাপাশি হালকা গরম পানি দিয়ে বাচ্চার নিতম্ব ধুয়ে ক্রিম মাখিয়ে দেওয়া ভালো।
পরামর্শ চার: জ্বর হয় কি না খেয়াল রাখতে হবে
অনেক বাচ্চার ডায়রিয়া হলে জ্বর হয়। সুতরাং, বাবা-মার উচিত বিষয়টার দিকে খেয়াল রাখা। জ্বর হলে বাচ্চাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
পরামর্শ পাঁচ: সময়মতো সুস্থ না-হলে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যান
পরিমিত খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পরও, সময় মতো অবস্থার উন্নতি না-হলে, শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। এ কাজে দেরি না-করাই ভালো। বিশেষ করে চিকিত্সক যদি ভর্তি করাতে বলেন, তখন কেনো অবস্থাতেই দেরি করা যাবে না।
আসলে শিশুর যথাযথ যত্ন নেওয়া হলে, তাদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হবার আশঙ্কা এমনিতেই কম। আর আমরা তো একটা কথা জানি যে, অসুখ হবার পর চিকিত্সা করার চেয়ে, অসুখ হতে না-দেওয়া উত্তম। সকল পিতামাতাকেই জানতে হবে, কেন শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। জেনে প্রতিরোমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই হলো। প্রসঙ্গক্রমে শিশুদের যত্নের কথা এলো। শিশুর যত্নে চিকিত্সকরা ৪টি পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
পরামর্শ এক: শিশুকে শারীরিকভাবে সবল করে গড়ে তুলুন
আপনার আদরের শিশুটিকে শারীরিকভাবে সবল করে গড়ে তুলুন। সারাক্ষণ ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে না-রেখে, তাকে বাইরের আলো-বাতাস পেতে দিন। এতে সে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখবে। পাশাপাশি তার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।
পরামর্শ দুই: শিশুকে যথাযথ কাপড় পড়ান
বাচ্চাকে কী ধরনের কাপড় পড়াচ্ছেন তার ওপর আপনার শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকা বা না-থাকা অনেকাংশে নির্ভর করে। তাপমাত্রার সাথে মানানসই কাপড় পড়ান। গরমের সময় শিশুদের গায়ে বেশি কাপড় রাখবেন বা গরম কাপড় পড়াবেন না। শীতের সময় ঠিক উল্টো। মোদ্দাকথা, শিশুর জন্য আরামদায়ক পোশাক বেছে নিন। আরেকটি কথা, রাতে ঘুমের সময় শিশুর পেটের ওপর একটু মোটা কাপড় দিন। এতে শিশুর পেটে ঠাণ্ডা লাগবে না।
পরামর্শ তিন: বেশি করে পানি পান করান
পর্যাপ্ত পানি সবসময়, সব বয়সের মানুষের জন্যই অপরিহার্য। শিশুদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষ করে শিশু যদি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তবে তাকে খাবার স্যালাইন ও সাধারণ পানি পান করান। এসময় তার শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই পানির অভাব পূরণ করা জরুরি।
পরামর্শ ৪: ডায়রিয়ায় শিশুকে ভাতের স্যুপ তৈরি করে খাওয়ান
আসলে বাংলাদেশে এটা রাইস স্যালাইন নামে পরিচিত। বাজারে এই স্যালাইন পাওয়া যায়। স্বাভাবিক অবস্থাতেও শিশুকে এই স্যুপ বা স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শিশুর শরীর ভালো থাকবে। আর ডায়রিয়া হলে তো খাওয়াতে হবেই। ঘরেও এই স্যালাইন বা স্যুপ তৈরি করা যেতে পারে। ৫০০ মিলিলিটার পানিতে ২০ গ্রাম চিনি ও ১.৭৫ গ্রাম লবণ এবং অল্প ভাত মিশিয়ে এই স্যালাইন বা স্যুপ তৈরি করা যায়। এটি খেতেও সুস্বাদু হবার কথা।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)