0403yin
|
২৭ মার্চ তৃতীয় ফিলিস্তিন ম্যারাথন জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা বিশ্বের ৫০টি দেশ ও অঞ্চলের ৩ হাজারেরও বেশি দৌড়বিদ এবারের ম্যারাথনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের 'আন্দোলনের অধিকারের" প্রতি সম্মান জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় ২৭ মার্চ সকালে ম্যারাথন অংশগ্রহণকারীরা যিশুর জন্ম গির্জার সামনে ম্যানজার স্কয়ারে জড়ো হয়। সেখানে কিছুটা ওয়ার্ম আপের পর ম্যারাথন শুরুর প্রত্যাশা করে।
২০ বছরের মির্না হলেন বেথলেহেমের অধিবাসী। সংবাদদাতার সামনে তিনি আবেগপূর্ণভাবে বলেন,
আমি প্রথমবারের মতো ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। খুবই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছি আমি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে এসেছে। আমি আশা করছি, তারা এ সময় উপভোগ করবে। তারা বুঝবে, আমাদের দেশটি তাদের কল্পনার চেয়ে একেবারে ভিন্ন এবং আমরা শান্তিকে ভালোবাসি-এ দুটো বিষয় উপলব্ধি করবে তারা।
ফিলিস্তিন ম্যারাথনের স্লোগান হচ্ছে 'আন্দোলনের অধিকার'। ইসরাইলের হাতে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল হওয়া এবং ফিলিস্তিনীদের অবাধ কার্যকলাপ সীমিত দেয়ার প্রতি সব মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
ইসরাইলের দেয়াল তৈরি করে ঘিরে ফেলার কারণে বেথলেহেমে ৪২ কিলোমিটারের সম্পূর্ণ একটি ম্যারাথন রেসিং ট্র্যাক খুঁজে বের করা যায় না। খেলোয়াড়দের প্রায় ১০ কিলোমিটার লাইনে শাটল রান করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করতে হন।
ফিলিস্তিনী মেয়ে ভারাহ ঘূর্ণায়মান চেয়ারে বসে তার বড় বোনের সঙ্গে ১০ কিলোমিটার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন,
আমার মনে হয়, সবার জন্যই আন্দোলনের অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশেষ করে আমাদের ফিলিস্তিনীদের জন্য। কারণ যখন আপনি বাইরে থেকে বেথলেহেম দেখেন, আপনি দেখবেন পৃথকীকরণ দেয়াল এবং চেক পয়েন্ট। কিন্তু যখন আপনি বেথলেহেমে ঢুকবেন, আপনি দেখবেন এখানে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আমরা আন্দোলনের অধিকারের প্রতি অবিচল থাকব। ম্যারাথন আমাদের আরো বেশি আশা-ভরসা দিয়েছে। শুধু বেথলেহেমের ভেতরই নয়, বরং পুরো ফিলিস্তিনে।
ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটির কর্মী এইতিদাল ইসমাইল বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত খেলোয়াড়দের ফিলিস্তিন ম্যারাথনে অংশ নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। তিনি বলেন,
যখন তারা পৃথকীকরণ দেয়াল বরাবর দৌড়ান, তখন ফিলিস্তিনীরা কী ধরনের মনঃকষ্ট সহ্য করছে তা উপলব্ধি করেন। তাদের এখানে আসা আমাদের জন্য বিরাট সমর্থন। ঠিক ম্যারাথনের স্লোগান 'আন্দোলনের অধিকার' এর মতো এটা আমাদের অধিকার। আমরা এ ধরনের অধিকার অর্জনের প্রত্যাশা করি।
প্রায় ৮শ' বিদেশী খেলোয়াড় এবারের ফিলিস্তিন ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ডেনমার্ক পার্লামেন্ট সদস্য জোহান্নে শ্মিথ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন,
ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার অভাবের প্রতি মনোযোগী হবার এটি খুবই ভালো উপায়। অনেকে মনে করে, আমরা নিশ্চয়ই এদিক-ওদিক যাই বা ঘুরে বেড়াই। আমরা যেটা চাই, সেটা করতে পারি। কিন্তু আমরা জানাতে চাই যে, ফিলিস্তিনীরা তা পারে না। তাদের অব্যাহতভাবে ইসরাইলি সেনার হয়রানির স্বীকার হতে হয়। তাদের চারদিকে রয়েছে চেক পয়েন্ট এবং উঁচু উঁচু দেয়াল।
ফিলিস্তিন ম্যারাথন শুরু হবার তিন বছর পর, চলতি বছর গাজা এলাকার এক খেলোয়াড় প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এর আগে ২ বছর ইসরাইলের অনুমোদন না পাওয়ায়, ফিলিস্তিনী নাগরিক হিসেবে গাজার মানুষ ফিলিস্তিন ম্যারাথনে অংশ নিতে পারতো না।
চলতি বছর মোট ৪৮ জন অবরুদ্ধ গাজা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বেথলেহেমে এসেছেন। গাজার খেলোয়াড় সামি নাটিল বলেছেন, ১৬ বছর পর তিনি জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে আসলেন। তিনি বলেন,
আমি প্রথমবারের মতো বেথলেহেমে আসি। এখানে পরিবেশ খুবই চমত্কার। আমি আশা করি, প্রতি বছর একবার নয়, বরং প্রতি মাসে একবার এখানে আসতে চাই। প্রতিদিন আসতে পারি। যে কোন সময় আসার অধিকার চাই। জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে আসলে আমার মন আনন্দিত হয়ে ওঠে। এটা আমার দেশের একটি অংশ। আমরা ইসরাইলিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আশা করি।
প্রেমা/তৌহিদ