0325
|
চীনে অবসরজীবন একটি সামাজিক হট ইস্যু এবং প্রতি বছরের 'দুই অধিবেশনে' প্রতিনিধি ও সদস্যরা এ বিষয়ের ওপর দৃষ্টি দিয়ে থাকেন।
আন হুই প্রদেশের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস চেয়ারম্যান লি হং থা ছিলেন আন হুই প্রদেশের বেসামরিক প্রশাসন বিভাগের প্রধান। তিনি বলেন, চীনে প্রবীণ লোকের সংখ্যা বাড়ছে ধারণার চেয়ে দ্রুতগতিতে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, ২০৩০ সালে চীনা প্রবীণ লোকের সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কোনো কোনো মহল মনে করেন, এ সংখ্যা আরো বেশি হবে। আসলে এ সমস্যার সূত্রপাত অনেক আগেই। গত শতাব্দীর ৮০-র দশক থেকে চীনে 'এক সন্তান নীতি' চালু হয় এবং এর প্রভাবে কয়েক বছর পরই দেখা গেল, বহু পরিবারে দু'জন মানুষকে ৪ জন প্রবীণের দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ওর চাপ পড়তে থাকে।
চে চিয়াং থেকে এবারের দ্বাদশ জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি ছিলেন স্যু থিং। অধিবেশনে তিনি 'প্রবীণদের জন্য গৃহভিত্তিক সেবা ব্যবস্থা' শীর্ষক একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, চীনা মানুষের ধারণা, প্রবীণরা শিশুর মতো হয়ে যায় এবং তারা শিশুদের সঙ্গে ভালো থাকেন। চলতি বছর চে চিয়াং প্রদেশে 'প্রবীণদের জন্য গৃহভিত্তিক সেবা উন্নয়ন' শীর্ষক একটি আইন চালু করা হয়। এ আইন গ্রহণের পর তিনি কিছু জায়গা পরিদর্শন করেন। তিনি দেখতে পান যে, এ ধরনের একটি আইন বাস্তবায়ন করতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন "প্রথম সমস্যা হচ্ছে অর্থের অভাব। বর্তমানে গৃহভিত্তিক সেবা ব্যবস্থা শুধু সরকারি অর্থের ওপর নির্ভর করছে। অথচ সরকার এ খাতে যথেষ্ট অর্থ সরবরাহ করতে পারছে না। কিছু কিছু জায়গায় 'গৃহভিত্তিক সেবাকর্মীরা' শুধু প্রবীণদের জন্য কোনো ভবনের দরজা খুলে দেওয়া বা তাদের পানি পান করানোর দায়িত্ব পালন করেন। এটাকে উন্নত সেবা বলা যেতে পারে না।"
দক্ষ কর্মীর অভাব এবং এ খাতে সামাজিক শক্তির যথেষ্ট ব্যবহার না-থাকাও একটি সমস্যা। স্যু থিং বলেন "সাধারণত শহরে কমিউনিটি বা গ্রামে স্বেচ্ছাসেবকরা গৃহভিত্তিক সেবা বা home-based care দিয়ে থাকে। তারা পেশাদার নন বলে তাদের সেবার মান উন্নত নয়। চে চিয়াংয়ে বেসরকারি পর্যায় থেকে এ খাতে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আছে। কিন্তু সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতি না-থাকায় এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে না; বিনিয়োগকারীরা এখানে অর্থ বিনিয়োগকে নিরাপদ মনে করছেন না।"
'প্রবীণদের জন্য গৃহভিত্তিক সেবা' (home-based care for the aged) চীনে একটি আধুনিক ধারণা। তবে এ ধারণা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এতে সরকার, সমাজ ও বাজারের কী ভূমিকা থাকা উচিত? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
২০১৫ সালে ২৫ জানুয়ারি চে চিয়াং প্রদেশের দ্বাদশ গণ কংগ্রেসে 'চে চিয়াং সামাজিক অবসরসেবা উন্নয়ন নিয়ম-বিধি' নামক একটি আঞ্চলিক আইন অনুমোদন করা হয়। পয়লা মার্চ থেকে এ আইন বলবত হয়। এ আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, home-based care for the aged হল সামাজিক অবসর সেবার একটি কেন্দ্রীয় বিষয়।
চে চিয়াং গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির আইন কমিটির হে সিয়াং মিং এ আইন প্রণয়ণ কাজে অংশ নেন। তিনি বলেন, আইনে এ খাতে বিশেষ করে বেসরকারি অর্থ বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সামাজিক শক্তির অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন "আইনের মাধ্যমে আমরা অবসর-সেবা শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগকে উত্সাহিত করেছি। সরকার চায় বিভিন্ন পর্যায়ের অবসর সংস্থা নির্মাণ এবং সরকারি অবসর সংস্থার ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাত অংশগ্রহণ করুক। তা ছাড়া, এ খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও আইনে বলা হয়েছে।"
আইনে এ খাতে দক্ষ কর্মী সৃষ্টির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন, যদি স্নাতক ডিগ্রিধারী কোনো যুবক বা যুবতী প্রবণীদের জন্য গৃতভিত্তিক সেবা প্রকল্পে কাজ করে, তবে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাতা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে আইনে। এ ছাড়া, সাধারণ কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে আইনে।
আইনে আরেকটি আকর্ষণীয় বিধি আছে। যে ব্যক্তি আজ এ প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রবীণদের সেবা করবে, সে নিজে বৃদ্ধ বয়সে সেবা পাবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এ বিষয়ে হে সিয়াও মিং বলেন "চে চিয়াং প্রদেশে সময় ব্যাংক নামে একটি ভার্চুয়াল ব্যাংক আছে। এ ব্যাংকে স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া সেবার সময়ের রেকর্ড থাকে। এ রেকর্ড অনুসারেই তিনি বৃদ্ধ বয়সে সেবা পাবেন।"
নীতিটি স্পষ্ট। আজ আপনি প্রবীণদের সেবা দিন, ভবিষ্যতে আপনিও এ ধরনের সেবা পাবেন। বর্তমানে চীনা পরিবারগুলোতে শিশুর চেয়ে প্রবীণ বেশি। এ অবস্থায় প্রবীণদের জন্য সেবা দেওয়ার এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে আশা করি।
চীনের সব প্রদেশের মধ্যে চে চিয়াং সবার আগে তথাকথিত 'প্রবীণ সমাজে' প্রবেশ করে। ২০২০ সালে প্রদেশটিতে মোট লোকসংখ্যার আনুমানিক ২৪ শতাংশই হবে প্রবীণ। তার মানে, তখন প্রতি ৪ জন চে চিয়াং বাসিন্দার মধ্যে একজন হবেন প্রবীণ। চে চিয়াংয়ের 'সামাজিক অবসর সেবা উন্নয়ন নিয়ম-বিধি' চীনের অন্যান্য প্রদেশের জন্যও একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে।
চে চিয়াংয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সম্ভবত রাজধানী পেইচিংয়ে আগামী পয়লা মে থেকে চালু হতে যাচ্ছে 'প্রবীণদের জন্য গৃহভিত্তিক সেবা প্রকল্প আইন।'
অবসর জীবন শুধু একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারের সমস্যা নয়। এটি একটি সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে চাই সামাজিক আন্দোলন, সমাজের সবার অংশগ্রহণ, সমাজের সকলের প্রচেষ্টা। এ ক্ষেত্রে একটি শ্লোগান আমরা ব্যবহার করতে পারি। আর সেটি হচ্ছে: "আজ যে যুবক, কাল সে প্রবীণ; আজকের সেবক, কালকের সেবাগ্রহীতা।"