২০০৯ সালে শ্রীলংকার ৩০ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষ হয়। বর্তমানে একটি নতুন অর্থবিনিয়োগের দেশ হিসেবে অর্থবিনিয়োগে অধিক থেকে অধিকতরভাবে বিভিন্ন দেশকে আকর্ষণ করছে শ্রীলংকা।
বিখ্যাত লেখক, পর্যটক মার্কো পোলো এই দেশটিকে 'সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ' বলে অভিহিত করেন।
শ্রীলংকায় অর্থবিনিয়োগকারী চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজায়নের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং একই সঙ্গে দেশটিতে সামাজিক দায়িত্বও পালন করেছে।
কলম্বো দক্ষিণ বন্দর হলো দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর। চায়না মার্চেন্টস স্টিমশিপ কোম্পানি ও শ্রীলংকার বন্দর বিষয়ক ব্যুরোর প্রতিষ্ঠিত কলম্বো আন্তর্জাতিক কন্টেইনার বন্দর কোম্পানি অর্থাত সিআইসিসি একসাথে কলম্বো দক্ষিণ বন্দর নির্মাণ করে। এতে এ পর্যন্ত ৫০কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি বরাদ্দ করা হয়।বন্দরটিতে প্রতি বছর মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ হলো ২৪লাখ।
কলম্বো দক্ষিণ বন্দর কন্টেইনার জাহাজঘাট কোম্পানির অর্থ পরিচালক সুন লিকান বলেন, বন্দর নির্মাণ করার মাধ্যমে প্রচুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াও বেশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন,
(রে ১)
'আমরা শ্রীলংকার সঙ্গে ৩৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করি। অনুমান অনুযায়ী চুক্তির সময়ে কর আদায় করা হবে ১৮০কোটি মার্কিন ডলার। পাশাপাশি প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমরা স্থানীয় কর্মকর্তা ও শ্রমিকদেরকে চীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পাঠাবো। জাহাজঘাট ব্যবহারের যোগ্যতা ও মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে আমরা আরো বেশি স্থানীয় মানুষকে নিযুক্ত করবো।'
স্থানীয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা সৃষ্টি করা ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা হলো চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশে অর্থবিনিয়োগের একটি লক্ষ্য।
চীনের সহায়তায় শ্রীলংকার জাতীয় নাট্যশালা ২০১১ সালের শেষ দিকে নির্মিত হয়। এটি শ্রীলংকার একটি স্থাপত্য প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তিন বছর ধরে নাট্যশালাটিতে ২শ'র বেশি পরিবেশনা উপস্থাপনা করা হয়। ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান এ নাট্যশালায় আয়োজিত হয়। নাট্যশালা নির্মাণের ম্যানেজার লিউ ওয়েনসিন বলেন,
(রে ২)
'স্থানীয় পরিবেশনার টিকিটের দাম ৩হাজার রুপির বেশি নয়। কারণ এখানে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করা হয়। প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার শিশুদের জন্য ফ্রি পরিদর্শনের ব্যবস্থা আছে। চীন এ নাট্যশালার নির্মাণ করে। সেজন্য এখানে শিশু থেকে চীন-শ্রীলংকা মৈত্রী প্রচার করা হয়।'
শ্রীলংকার প্রথম এক্সপ্রেস-কলম্বো বিমানবন্দর এক্সপ্রেস সড়ক চীন নির্মাণ করে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে এক্সপ্রেস সড়কটি চালু হয়।
এর আগে কলম্বো থেকে গাড়ীতে বিমানবন্দরে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় লাগতো। কিন্তু এক্সপ্রেস সড়ক চালু হওয়ার পর মাত্র আধা ঘণ্টায় সেখান পৌঁছানো যায়।
চায়না মেটাল্লুর্জিকাল লিমিটেড বাই শেয়ার কোম্পানির শ্রীলংকা শাখার জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং চৌ বলেন, স্থানীয় নাগরিকরা বিমানবন্দর এক্সপ্রেস সড়কের সুবিধা উপভোগ করেন। তিনি আরো বলেন,
(রে ৩)
'শ্রীলংকা সড়ক পরিচালনা ব্যুরো থেকে জানা গেছে, বিমানবন্দর এক্সপ্রেস সড়কে প্রতি দিন গাড়ীর পরিমাণ প্রায় ১৫হাজার। এ সড়কের মাধ্যমে শহর থেকে বিমানবন্দরে যেতে অনেক কম সময় লাগে। শ্রীলংকার অর্থনীতি দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি আমি মনে করি, ১০ বছর পর একই এক্সপ্রেস সড়ক দেশটির জন্য যথেষ্ট হবে না। শ্রীলংকায় নিযুক্ত চীনা দূতাবাস ও শ্রীলংকা সরকার বহু বার আমাদের নির্মিত এক্সপ্রেস সড়কের অনেক প্রশংসা করে।'
বিমানবন্দর এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে শ্রীলংকার জনগণ 'মেড ইন চায়না'র নতুন ধারণা সম্পর্কে জানতে পারেন। ২০১৩ সালে চায়না মেটাল্লুর্জিকাল লিমিটেড বাই শেয়ার কোম্পানি কলম্বোর বাইরে সংযোগ সড়ক নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে। অনুমান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এ পরিকল্পনা সম্পন্ন হবে।
এদিকে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকায় রাজনৈতিক পরিবেশের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। চাইনিজ ট্রাফিক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্মিত 'কলম্বো বন্দর শহর' পরিকল্পনা শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সমস্যায় বেশ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শ্রীলংকার প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির শীর্ষ নেতা রনিল ইক্রিমাসিংহে সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবর সম্পর্কে বলেন, তিনি চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের অর্থবিনিয়োগে কলম্বো বন্দরের নির্মাণ বন্ধ করার কথা খোলাসা করবেন। তিনি বলেন, তাঁর মানে যদি বিরোধী দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়, তাহলে নতুন সরকার আগের সরকারের পরিকল্পনা যাচাই করবে।
এ সম্পর্কে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় পরিবেশ ব্যুরোর সাবেক চেয়ারম্যান উদাইয়া গাম্মানপিলা বলেন,
(রে ৪)
'শ্রীলংকা বরাবরই পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়। প্রতি বছর মাথাপিছু আয় ৩হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি ও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ১টনেরও কমের একমাত্র দেশ হলো শ্রীলংকা। কারণ বর্তমান সরকার পরিবেশ সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। কলম্বো বন্দর পরিকল্পনা প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।'
চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড'র শ্রীলংকা শাখার জেনারেল ম্যানেজার চাং সিয়াওছিয়াং বলেন, ২০১০ সালে শ্রীলংকা বন্দর বিষয়ক ব্যুরো মোরাতুওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে বন্দর পরিকল্পনার পরিবেশ মূল্যায়ন করে। মূল্যায়ন রিপোর্ট ২০১১ সালের এপ্রিলে শ্রীলংকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে দাখিল করা হয়। ২০১৩ সালে বন্দর নির্মাণে প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়। গত অক্টোবরে শ্রীলংকা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর নির্মাণ অনুমোদন করে। পরিবেশন সুরক্ষা নির্মাণের প্রতিটি পর্যায় ও অংশে কার্যকর হয়।
আসলে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকায় অর্থবিনিয়োগে আরো বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন, চায়না মেকানিক্যাল ইকুইপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড বাই শেয়ার লিমিটেড'র পুত্তালাম কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা।
কেন্দ্রটি হলো শ্রীলংকার প্রথম কয়লা বিদ্যুত্ কেন্দ্র এবং দু'দেশের নির্মাণ সম্পর্কিত বৃহত্তম অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিকল্পনা। কেন্দ্রটির বিদ্যুত্ উত্পাদনের পরিমাণ শ্রীলংকায় সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু কেন্দ্রটিতে কাজ শুরু করার প্রথমদিকে প্রযুক্তির কিছু সমস্যা ছিল। এতে শ্রীলংকার কোনো কোনো গণ মাধ্যম ও বিরোধী রাজনৈতিক দল সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।
সিএমইই'র পুত্তালাম কয়লা বিদ্যুত্ কেন্দ্রের নির্মাণ পরিকল্পনার জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং লুতং বলেন,
(রে ৫)
'প্রযুক্তির সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি। কিন্তু রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করার সামর্থ্য আমাদের নেই।'
কিন্তু শ্রীলংকার সাধারণ জনগণ পুত্তালাম কয়লা বিদ্যুত্ কেন্দ্রের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তখন শ্রীলংকা সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও সেদেশের প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাক্সা কেন্দ্রটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রটি নির্মাণের মাধ্যমে শ্রীলংকায় বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ কমে যায়।
বিদেশে অর্থবিনিয়োগে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো আরো কঠোর তত্ত্বাবধান ও আরো জটিল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হবে। এ পরিস্থিতিতে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত সবুজায়ন, প্রযুক্তির নবায়ন ও উদ্ভাবনের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া।
গান
আচ্ছা, বন্ধুরা, আপনারার শুনছিলেন চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রীলংকায় অর্থবিনিয়োগের ওপর একটি প্রতিবেদন।
এবারে রয়েছে আপনাদের চিঠিপত্রের পালা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ইন্টারন্যাশনাল রেডিও লিসনার্স ক্লাবের সম্পাদক দেবাশীষ গোপ তার চিঠিতে লিখেছেন, ......
ভাই দেবাশীষ গোপ, আপনাকে চিঠির জন্য ধন্যবাদ। নতুন বছর আপনার জীবনে অনেক অনেক শুভ বার্তা বয়ে আনুক এই কামনা করি। ভালো থাকবেন এবং নিয়মিত আমাদের লিখবেন।
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার ইন্টারন্যাশনাল রেডিও ডিএক্স ক্লাবের সভাপতি মানিক মাহামুদ ইমেইলে লিখেছেন, প্রিয় মুক্তা আপু, ইমেইলের শুরুতে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা নিবেন। আশা করি সকল শ্রোতাদের মাঝে অনেক ভালো আছেন। আসলে সময় কিভাবে চলে যায় বুঝা যায় না, অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। যেমনটি আজ রাতটুকু পেরোলেই কাল পুবাকাশে উঠবে নতুন সূর্য। এ সূর্য নতুন বছরের, এ সূর্য নতুন দিনের, নতুন স্বপ্নের। নতুন সূর্যালোকিত দিনের প্রতি অসীম প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা মানুষের। উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়েই সারা দেশের মানুষ স্বাগত জানাবে খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০১৫ সালকে। বিশ্ববাসীও মেতে উঠবে নতুন বছরের আগমনী উল্লাসে। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে নানা দেশে চলছে নানা আয়োজন। আসুন আমরা সবাই অতীতের ময়লা ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে একটি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে প্রত্যাশিত হয়ে, নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই । নতুন বছর ২০১৫ সবার জীবনে নিয়ে আসুক শান্তি ও আনন্দ উল্লাস, এটাই আমার কামনা। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা।
বন্ধু মানিক মাহামুদ, সুন্দর চিঠি লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি, আপনি নতুন বছরেও নিয়মিত আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে থাকবেন।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আর হ্যাঁ, আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না।
আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/টুটুল)