মার্চ ১১: চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর চীন সরকারের দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে 'জিরো টলারেন্স' মনোভাব গ্রহণের পর লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং 'চারটি মূল লক্ষ্য' উত্থাপনের পর 'সার্বিকভাবে কঠোর হাতে পার্টি পরিচালনা করার মাধ্যমে দুর্নীতি দমনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং তা বিদেশী গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের 'দ্য হুফিংটন পোস্ট পত্রিকার ২ মার্চের খবরে বলা হয়েছে, 'সার্বিকভাবে কঠোর হাতে পার্টি পরিচালনা করা' হচ্ছে 'চারটি মূল লক্ষ্য'র মধ্যে সবচেয়ে উদ্ভাবনশীল শক্তির অধিকারী লক্ষ্য। এর আগে চীন সরকারের ব্যবস্থাগুলো পার্টির অভ্যন্তরিণ পরিচালনার বিষয় ছিল না। 'কঠোর হাতে পার্টি পরিচালনা করা' হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের সাহসী সংস্কার। এ চারটি মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাইলে বিশেষ করে কঠোর হাতে পার্টি পরিচালনা করার ওপর নজর রাখা উচিত।
রয়টার্সে প্রকাশিত নিবন্ধে 'চারটি মূল লক্ষ্য'র মৌলিক অর্থ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে, গেল বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির 'বাঘকে আঘাত হানা এবং মাছিকে গ্রেফতার করা' হচ্ছে 'কঠোর হাতে পার্টি পরিচালনা করার' প্রতিফলন।
স্পেনের 'বিশ্ব পত্রিকা' ৬ মার্চের নিবন্ধে বলা হয়েছে, সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং ২০১২ সালে 'বাঘকে আঘাত হানা এবং মাছিকে গ্রেফতার করা' এই দুর্নীতি দমনের চিন্তাধারা উত্থাপন করেন এবং 'সার্বিকভাবে কঠোর হাতে পার্টি পরিচালনা করাকে 'চারটি মূল লক্ষ্য'র কৌশলগত চিন্তাধারার মধ্যে তালিকাভূক্ত করেন। এ থেকে দুর্নীতি দমনের সঙ্গে সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সংগ্রাম করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞাও প্রতিফলিত হয়েছে।
আর্জেন্টিনার 'শিঙ্গা' পত্রিকার এক নিবন্ধে বিশেষ করে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সরকারী কার্যবিবরণীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আয় এবং দুর্নীতিতে আঘাত হানাসহ নানা বিষয়ের ওপর নজর দেয়া হয়েছে এবং চীন সরকারের কঠোর হাতে দুর্নীতি দমনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞার প্রশংসা করা হয়েছে।
স্পেনের ই.এফ.ই বার্তার সংবাদদাতা সারা ডিয়াজ বলেছেন, সি চিন পিং রাষ্ট্রীয় নেতা নিয়োগ হওয়ার দু'বছরে মধ্যে চীন সক্রিয়ভাবে দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রাম শুরু করেছেন। চীন সরকার উপলব্ধি করেছে, দুর্নীতি হচ্ছে একটি বড় সমস্যা এবং তা নির্মূল করার জন্য সরকার সক্রিয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি আশা করেন, চীনের দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে চলবে এবং এক্ষেত্রে আরো বেশি সাফল্য অর্জিত হবে।
আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণালয়ের সভাপতি জর্জ ক্যাস্ট্রো সম্প্রতি সিআরআই অনলাইনের সংবাদদাতাকে দেয়া সাক্ষাত্কারে চীনের আইনানুসারে প্রশাসন পরিচালনা আর দুর্নীতি দমনে অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। 'চারটি মূল লক্ষ্য' হচ্ছে বর্তমান চীনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।
রাশিয়ার তাসের চীনে নিযুক্ত প্রধান সাংবাদিক আনদ্রেয় কিরিলোভ বলেন, তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা নিবিঢ়ভাবে চীনের দুর্নীতি দমন তত্পরতার ওপর দৃষ্টি রাখেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, দুর্নীতি দমনে উচিত গভীর, টেকসই এবং উচ্চ কার্যকর ভূমিকা পালন করা। চীনের কাজ রাশিয়াকে প্রভাবিত করছে। রাশিয়া চীনের অভিজ্ঞতাকে খুব গুরুত্ব দেয়।
পাকিস্তানের চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফাজাল উর রহমান বলেন, দুর্নীতির সমস্যা সবসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থায়ী সমস্যা। চীন সরকারের দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা কেবল চীনের সমাজের সম্প্রীতিময় উন্নয়নকে অগ্রসর করছে তা নয়, বরং সরকার জনগণের সক্রিয় সারাও পেয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। (ইয়ু/মান্না)