0225edu
|
বন্ধুরা, আমরা আগেই বলেছি, আমাদের এ অনুষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য হলো চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চীনের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিচয় আপনাদের সামনে তুলে ধরা ও এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে পড়াশোনা করছেন এবং কিভাবে আরো বেশি ছাত্রছাত্রী সুযোগ পেতে পারেন তার বিস্তারিত জানানো। যাতে খুব সহজেই বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা চীনে পড়াশোনা করতে পারেন।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা শুরুতেই পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটির কিছু তথ্য তুলে ধরবো। তারপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র আসিফের গল্প শুনবো।
পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটি (বিএলসিইউ) ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মূলত তাঁর নির্দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৬৪ সালে এটির নাম ছিল পেইচিং ল্যাংগুয়েজ ইন্সটিটিউট। ১৯৭৪ সালে চীনের মহান নেতা মাও সে তুং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলকের বর্ণলিপি লেখেন।
১৯৯৬ সালের জুন মাসে এই ইন্সটিটিউট পেইচিং ল্যাংগুয়েজ এ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা ও চীনা সংস্কৃতি জানার এক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়নের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে 'মিনি জাতিসংঘ' বলেও ডাকা হয়।
১৯৮৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে শুরু করে। সাহিত্য, অর্থনীতি, আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইতিহাস, শিক্ষা এবং পরিচালনা এ সাতটি ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিএলসিইউয়ের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি। বিএলসিইউতে এখন ১৫টি পিএইচডি প্রোগ্রাম, ৩০টি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম এবং ২৫টি স্নাতক পর্যায়ের প্রোগ্রাম রয়েছে।
বিএলসিইউতে বর্তমানে ১১টি ইন্সটিটিউট আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনা ভাষার আন্তর্জাতিক শিক্ষাদান ইন্সটিটিউট, বিদেশি ভাষা ইন্সটিটিউট, উচ্চতর অনুবাদ ইন্সটিটিউট, কলাবিদ্যা ইন্সটিটিউট, সমাজ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, তথ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ইন্সটিটিউট, ইংরেজি শিক্ষা ইন্সটিটিউট, নেটওয়ার্ক শিক্ষাদান ইন্সটিটিউট, ক্রীড়া শিক্ষাদান কেন্দ্র এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
২০১৪ সালের মে মাসে পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের ৫১টি দেশ ও অঞ্চলের ৩০১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ১৬টি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।
চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির বিদেশে প্রচার এবং সংশ্লিষ্ট স্নাতকদের লালনপালনের শক্তিশালী ও ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিএলসিইউ ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলের ১.৫ লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রীদেরকে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে শিক্ষাদান করেছে।
তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ দেশের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তি হয় উঠেছেন। যেমন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব কাসেম টোকায়েভ, ইথিওপিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুলাতু তেশোমে ওয়াত্তো, কাজাকস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী করিম মাসিমোভ, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগোর মোর্গুরোভ, মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী এরিক কর্নেলসহ আরো অনেকে।
বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনলেন পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়। এখন আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানাবো।
চীন সরকারের বৃত্তি, কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের বৃত্তি ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের 'হুয়াসিয়া আর পিং আন' বৃত্তি প্রদান করে থাকে। পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। যেমন, শ্রেষ্ঠ ছাত্র পুরস্কার: পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও কালচার ইউনিভার্সিটিতে কমপক্ষে ২০ সপ্তাহের বেশি অধ্যয়নকারী বিদেশি স্নাতক,মাস্টার্স ও পিএইচডি গবেষণার ছাত্রছাত্রীদেরকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়।
গবেষণা পুরস্কার: বিদেশি স্নাতক,মাস্টার্স ও উন্নত ভিজিটিং বিশেষজ্ঞদের অসামান্য গবেষণার ফলাফলের জন্য এ বৃত্তি প্রদান করা হয়।
পূর্ণ উপস্থিতি পুরস্কার: স্নাতক ছাত্রছাত্রী যারা নিজেদের সকল পরীক্ষায় পাস করে থাকেন এবং বিভিন্ন সেমিস্টারে বিভিন্ন কোর্সে উপস্থিতির হার ৯৭ শতাংশেরও বেশি তাদেরকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়।
মৈত্রী পুরস্কার: বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য হারে অংশগ্রহণকারী বিদেশি ছাত্রছাত্রীদেরকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয় ।
চমত্কার অবদান পুরস্কার: বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি কাজে অবদান রেখেছে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম প্রচারে বিশেষ অবদান রেখেছে এমন বিদেশি ছাত্রছাত্রীদেরকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়।
বিএলসিইউ আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী বৃত্তি: নিজ খরচে বিএলসিইউতে লেখাপড়া করা বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের উত্সাহ দেয়ার জন্য এ বৃত্তি চালু করা হয়। বিএলসিইউতে অধ্যয়নকারী স্নাতক,মাস্টার ও ডক্টরেট ডিগ্রির প্রার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনারা www.blcu.edu.cn তে খোঁজ করতে পারেন।
এখুন শুনুন বিএলসিইউ'র বাংলাদেশি ছাত্র আসিফের গল্প শুনুন।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। এবার বিদায়ের পালা। তবে তার আগে বলতে চাই, আপনারা যারা চীনে লেখাপড়া করছেন তারা নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজের লেখাপড়ার গল্প জানাতে চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
(সুবর্ণা/টুটুল)