Web bengali.cri.cn   
জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করুন, দীর্ঘজীবী হোন
  2015-02-11 20:17:08  cri


বেশি কথা বলা দীর্ঘ জীবন লাভের একটি অন্যতম উপায়? ধারণা করা হয়, যারা বেশি কথা বলেন, তারা তুলনামূলকভাবে কম দুঃখী হন। তাদের মন তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো থাকে। তাই, তারা তুলনামূলকভাবে অধিক আয়ু লাভ করেন। হ্যা, বিশেষজ্ঞরাও মোটামুটি এমন ধারা কথাই বলছেন। তবে, বেশি কথা বলা বা বকবক করা তো জীবনের একটি দিক। আরো কিছু ফ্যাক্টরও রয়েছে, যেগুলো মানুষকে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়তা করে।

দীর্ঘজীবন কে না চায়? অধিকাংশ মানুষই সুস্থ ও সুন্দরভাবে অনেকদিন বেঁচে থাকতে চায়। মানুষ মাত্রই মরণশীল। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। তারপরও এই সুন্দর পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ উপভোগ করতে দীর্ঘজীবন কামনা করেন প্রায় সবাই। অনেকে তো বেঁচেও থাকছেন অনেক বছর, তাই না? বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। চীনের অনেকেই শত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকছেন। চীনের রাস্তায় হাঁটলে অনেক মানুষ দেখা যায়, যাদের বয়স নব্বইয়ের ওপর। তো, সম্প্রতি চীনা বৃদ্ধবৃদ্ধা সমিতি শতায়ু ব্যক্তিদের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপ অনুসারে, তারা দীর্ঘজীবন পেয়েছেন বিভিন্ন কারণে। তাদের দীর্ঘজীবনের জন্য জিনগত কারণ ১৫ শতাংশ, সামাজিক কারণ ১০ শতাংশ, উন্নত চিকিত্সা ৮ শতাংশ, আবহাওয়া ৭ শতাংশ এবং জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ৬০ শতাংশ দায়ী। বোঝাই যাচ্ছে, দীর্ঘজীবন লাভের জন্য জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সবচে জরুরি।

চীনে একটা কথা প্রচলিত আছে। কথাটি হচ্ছে: আধুনিক মানুষ আপসেট হয় বেশি চিন্তা করার কারণে, রেগে যায় অন্যের সাথে তুলনা করার কারণে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় নতুন কিছু করার তাগিদ থেকে, এবং অসুস্থ হয় খাওয়ার কারণে। একটু বুঝিয়ে বলি। কোনো বিষয় নিয়ে যখন আপনি বেশি চিন্তা করবেন, তখন আপনি আপসেট হবেন এমন আশঙ্কা প্রবল। আবার অন্যের সঙ্গে তুলনা করলেও আপনার নিজের ওপর, সমাজের ওপর রাগ হবে। দু'টি ক্ষেত্রেই ক্ষতি ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই আপনার জন্য। চীনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক হুং চাওকুয়াং জানালেন তার সঙ্গে ৯৪ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার পরিচয়ের কথা। বৃদ্ধাকে দেখতে মনে হয় ৬০ বছর বয়সী। অধ্যাপক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনার দীর্ঘায়ুর গোপন টিপস কী? ভাল খাবার এবং ভাল শরীরচর্চা?' বৃদ্ধা হাসিমুখে বললেন, 'আমি বেশি কথা বলি, বেশি হাসি। তা ছাড়া, আমি আমার হৃদয় ও ফুসফুসকে মুক্ত রাখি।' বৃদ্ধার কথা কিন্তু সহজেই বোধগম্য। হৃদয় ও ফুসফুসকে মুক্ত রাখা মানে সবসময় হাসিখুশি থাকা ও প্রাণ ভরে তাজা বাতাসে শ্বাস নেওয়া। আরো সহজ করে বললে, মন খোলা রাখুন, হাসিখুশি থাকুন; কোনো ব্যাপারেই উত্তেজিত হবেন না, রাগ করবেন না। সবসময় মন-মরা হয়ে থাকা বা কথায় কথায় রেগে যাওয়া যাদের স্বভাব, তাদের দীর্ঘায়ু লাভের সম্ভাবনা কম। অতএব অভ্যাস বদলান, যদি বেশি দিন বাঁচতে চান, সুস্থ ও সুন্দরভাবে।

আলিম: পেইচিংয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন এমন এক হাজার রোগীর ওপর একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। তারা সবাই মনে করেন, জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম মূল মন্ত্র। দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক হলে, প্রায় সময়ই মানুষকে হতাশায় পেয়ে বসে, তখন ভালোভাবে বেশিদিন বাঁচার আগ্রহও কমে যায়। অথচ দীর্ঘায়ু লাভের জন্য আগ্রহ থাকা চাই।

যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কর্মীরা ৯০ হাজার নারীর ওপর ৮ বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছিলেন। গবেষণায় দেখা গেল, যারা হাসিখুশি থাকেন তারা, যারা মন-মরা হয়ে থাকেন তাদের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি আয়ু পেয়ে থাকেন। এদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার হারও ৯ শতাংশ কম। এ ছাড়া, নরওয়েতে ২০১৫ জন রোগীর ওপর একটি জরিপ হয়েছিল। জরিপের ফল বলছে: যাদের রসবোধ প্রবল, তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা রসকষহীন ব্যক্তির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।

পেইচিংয়ের 'আন চেন' হাসপাতালের হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ বিভাগের মহাপরিচালক ও অধ্যাপক চৌ ইয়ুচিয়ে বলেন, 'যে কোন রোগে মন ভালো রাখা, একদন দক্ষ চিকিত্সকের চিকিত্সার চেয়েও ভালো ভাল।' তিনি বলেন, যাদের মন ভালো থাকে, তাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

হ্যাঁ, রেগে গেলে কিন্তু আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। হঠত রেগে গেলে আপনার পাল্স্ , হৃত্পিন্ডের স্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাবে। আপনি যখন দুঃখ পান, তখন আপনার পৌষ্টিক গ্রন্থি থেকে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম নিঃসরণ কমে যাবে। এতে আপনার খাবারে অরূচিও হতে পারে। এমনকি মিথ্যা কথা বললেও তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি কোনো গুরুতর মিথ্যা বলেন, তবে আপনার রক্তচাপ হঠাত করে বেড়ে যাবে।

মনে যখন কষ্ট জমাট বাধে তখন শরীরে Epinephrine এপিনেফ্রিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ পদার্থ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের মূল কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, আপনি যখন আনন্দিত হবেন, তখন আপনার শরীরে Endorphin-এর নিঃসরণ বেড়ে যাবে, যা আপনার শরীরের জন্যও ভালো।

ঊর্মি: চীনের চীনা চিকিত্সা বিষয়ক বৈজ্ঞানিক একাডেমীর গবেষক ইয়াং চিন শেং মনে করেন, বকবক করার মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিশক্তি এবং ভাষাদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বকবক করলে মস্তিষ্ক কোষগুলোও সচল থাকে। যারা মাঝে মাঝে বকবক করেন, তাদের মুখের পেশী ও গলা ভালো থাকে। এতে কানের ভেতর ও বাইরের চাপের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। এ ছাড়া, Presbyopia, Cataract ও Vision loss প্রতিরোধেও বেশি কথা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি দাবি করেন।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040