0217
|
ইউরোপের বাজারে চীনের এ প্রদর্শনীটিই হলো সবচেয়ে বড় আকারের। গত ১০০ বছরে চীনের একাডেমিক ইতিহাস ও প্রকাশনা ইতিহাসের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান।
ভ্যাটিকান লাইব্রেরি ইউরোপের লাইব্রেরেরির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীনা বইপত্র সংগ্রহ করেছে। ১৬তম শতাব্দীর শেষ নাগাদ চীনা বইপত্র সংগ্রহ করতে শুরু করে ভ্যাটিকান লাইব্রেরি। বর্তমানে ভ্যাটিকান লাইব্রেরিতে রাখা আছে ১৩০০টিরো বেশি বই। তবে দীর্ঘসময় এ বইগুলো শুধু লাইব্রেরিতেই রাখা ছিল, খুব অল্প মানুষই এ বইগুলো পড়েছেন বা ব্যবহার করেছেন।
২০০৮ সালে প্রকল্পটি চালু হয়। প্রকল্পের অধীনে ভ্যাটিকানের লাইব্রেরিতে চীনের মিং ও ছিং রাজবংশ, চীন ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কিত বইপত্র সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প শুরু ও বাস্তবায়নে রোম বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোম বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের দায়িত্বশীল ব্যক্তি অধ্যাপক মেশিন এ প্রসঙ্গে বলেন
রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে শুরু হয় এ প্রকল্প। আমরা ও বেইজিং ফরেন স্টাডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছাং সি পিংয়ের সঙ্গে এ প্রকল্পটি চালু করেন। তারপর হানবান ও রোম বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য অনেক সহযোগিতা করে।
এ প্রকল্পের অর্থায়ন সম্পর্কে প্রকল্পটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি, বেইজিং ফরেন স্টাডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছাং সি পিং তার বক্তব্যে বলেন,
ভ্যাটিকান লাইব্রেরির সংগৃহীত চীনা মিং ও ছিং রাজবংশ ও চীন ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কিত বইপত্রগুলোর আবারো কপি করা, বাছাই এবং প্রকাশ করা চীনের একাডেমিক ইতিহাস ও প্রকাশনা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি সাফল্য। চীন ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাস, চীনা মিং ও ছিং রাজবংশের ইতিহাস, চীনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইতিহাস, চীনা ক্যাথলিক ইতিহাস, চীনা অনুবাদ ইতিহাস, চীনা আধুনিক ইতিহাসসহ নানা গবেষণার জন্য এ বইগুলো অনেক অর্থবহ।
অধ্যাপক ছাং সি পিং মনে করেন, যদিও মিং ও ছিং রাজবংশে চীন ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সম্পর্কিত কিছু বইপত্র তাইওয়ানেও প্রকাশিত হয়েছে। তবে সে বইগুলো ভ্যাটিকান লাইব্রেরিতে নেই। তিনি মনে করেন, চীন ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কিত যে বই ভ্যাটিকান লাইব্রেরি সংগ্রহ করেছে সার্বিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বইগুলোতে চীন ও পাশ্চাত্য বিশ্বের প্রথম পরিচিতির চমৎকার মূল্যায়ন করা হয়েছে।
অধ্যাপক মেশিন অধ্যাপক ছাং সি পিংয়ের কথায় একমত প্রকাশ করেন। তিনিও মনে করেন, এ বইপত্রগুলো পুন:প্রকাশ করার মাধ্যমে চীনা পণ্ডিতরা ভালোভাবে চীন ও পাশ্চাত্য সভ্যতার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাস জানতে পারবেন। তিনি বলেন,
এ বইগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত ৪০০ বছর এ তথ্যগুলো ঘুমিয়ে ছিল। তারা এখন আবারো জেগে উঠেছে। চীনা পাঠক ও পণ্ডিতদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে। চীন ও পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক বিনিময় নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
অধ্যাপক ছাং সি পিং বলেন, আবারো এ বইগুলো প্রকাশ করা খুব অর্থবহ। ছিং রাজবংশের শেষে চীন ও পাশ্চাত্য দেশের সম্পর্ক অবনতি হয় এবং চীনে ধর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অনেক বইপত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্যাটিকান লাইব্রেরি যে বইগুলো সংগ্রহে রেখেছে তা এখন চীনে নেই। এ বইয়ের সাহায্যে আমরা প্রথম থেকে চীন ও পাশ্চাত্য দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় নিয়ে গবেষণা করতে পারি। অধ্যাপক ছাং বলেন,
আসলে প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে পাশ্চাত্য সমাজের কাছ থেকে শিখতে শুরু করে চীন। ওই সময়ের ইতিহাস জানতে চাইলে এ বইপত্রগুলো খুবই প্রয়োজন। এবার প্রকাশিত বইগুলোতে রয়েছে চীন ও পাশ্চাত্যের সম্পর্কের উত্স। ২০০ বছর আগে থেকেই আমরা পাশ্চাত্যকে জানতে শুরু করি।
অধ্যাপক ছাং মনে করেন, একাডেমিক মূল্য ছাড়া, বিশ্বায়নের পটভূমিতে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে পরস্পরিক আদান প্রদানের অনেক গুরুত্ব আছে।
"আমি মনে করি ইতিহাসে মিং ও ছিং রাজবংশ ২০০ বছর ধরে ইউরোপের পাশাপাশি ছিল। ১৮৪০ সালের আগে আমরা দু'পক্ষ পরস্পরকে সম্মানের ভিত্তিতে কাজ করেছি এবং উপকৃত হয়েছি। আমরা শিখেছি জ্যোতির্বিদ্যা, তৈরি করেছি ক্যালেন্ডার। তারা আমাদের কাছে থেকে শিখেছে দর্শন। ১৮৪০ সালের পর নতুন ইতিহাস শুরু হয়। পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে শেখার কোনো শেষ নেই। আজ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একে অপরের সংস্কৃতি জানার ধারণা উত্থাপন করেছেন। ইউরোপের উচিৎ শান্তিপ্রিয়ভাবে অন্যদের সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করা এবং এদিক থেকে দেখলে এবার এ প্রকল্পের অর্থও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।"
সম্পাদকীয় গ্রুপ আট বছরে ভ্যাটিকান লাইব্রেরির সংগৃহীত চীনের মিং ও ছিং রাজবংশ এবং চীন ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিনিময় সম্পর্কিত বইপত্র প্রকাশ ও প্রদর্শন করেছে এবং গত আগস্ট মাসে প্রথম পর্যায়ে ৪৪টি বই প্রকাশ করেছে। মোট ৩০০টি বই চতূর্থবারের মতো প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ৪৪টি বইয়ের মধ্যে আছে ভ্যাটিকান লাইব্রেরির ১৭০টি মূলব্যান চীনা গ্রন্থ এবং তার মধ্যে বেশ কয়েকটি বই বিশ্বে শুধুমাত্র একটি কপিই আছে।