qiche
|
গত ১৫ জানুযারি পেইচিং-সাংহাই হাইওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে ৫০টি চার্জিং স্টেশান। প্রতিটি স্টেশানে ৪টি করে চার্জিং বুথ আছে। এসব বুথে মাত্র ৩০ মিনিটে কোনো গাড়ির ব্যাটারির ৮০ শতাংশ চার্জ করা যায়। ঘরে ব্যাটারির এটুকু চার্জ করতে সময় লাগবে দশগুণ বেশী। চার্জিং স্টেশানে ব্যাটারি চার্জ করালে খরচও কম। ৩০ ইউয়ানের চার্জ নিলে গাড়ি চলবে প্রায় একশ কিলোমিটার। পেইচিং ও সাংহাইর মধ্যে ব্যবধান ১২৬২ কিলোমিটার। সাধারণ জ্বালানিচালিত গাড়িতে এটুকু পথ অতিক্রম করতে খরচ হবে ৮০০ ইউয়ানের তেল। অথচ বিদ্যুতচালিত গাড়িতে লাগবে শুধু ৪০০ ইউয়ানের বিদ্যুতচার্জ।
বলা বাহুল্য, চীনের হাইওয়েগুলোর মধ্যে পেইচিং-সাংহাই হাইওয়েতেই প্রথম এতোগুলো চার্জিং স্টেশান স্থাপন করা হলো। আগে এ ধরনের সুবিধা না-থাকায় চীনের বিদ্যুতচালিত গাড়িগুলো পেইচিং থেকে সাংহাই যাবার কথা কল্পনাও করতে পারতো না। এখন বাস্তবেই তা করা সম্ভব হচ্ছে। এখন যে কেউ বিদ্যুতচালিত গাড়ি নিয়ে পেইচিং থেকে সাংহাই চলে যেতে পারবেন সপরিবারে। খরচ বেঁচে যাবে অর্ধেক। বেঁচে যাওয়া অর্থ তিনি ব্যয় করতে পারবেন অন্য খাতে।
পেইচিং-সাংহাই হাইওয়ে ছাড়াও, পেইচিং-হংকং-ম্যাকাও হাইওয়ে, ছিং তাও-সি চিয়াং চুয়াং হাইওয়েসহ চীনের অন্যান্য হাইওয়েতেও পর্যায়ক্রমে এভাবে চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। তখন পেইচিং, থিয়ান চিন এবং ছাং চিয়াং ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো ৯৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি হাইওয়ে চার্জিং নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে চীনে ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ চার্জিং নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে চীনে বিদ্যুতচালিত গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশন আছে ৮০০টি এবং এসব স্টেশানে বুথ আছে ৩০ হাজার। ২০১৪ সালে চীনে উত্পাদিত হয় ৭৮ হাজার বিদ্যুতচালিত গাড়ি। এগুলোর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭৪ হাজার গাড়ি, যা ২০১৩ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩.৫ গুণ ও ৩.২ গুণ বেশি। কিন্তু যেমনটি আগেই বলেছি, চার্জিং স্টেশানের সংখ্যা খুবই কম। উদাহরণস্বরূপ পেইচিং ছিং হুয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কের কথা উল্লেখ করা যায়। এখানে চার্জিং বুথ রয়েছে মাত্র ২৫টি। এসব বুথে প্রতিদিন ভিড় লেগেই থাকে।
২০১৩ সালে পেইচিংয়ে চালু হয় বিদ্যুতচালিত গাড়ি প্রকল্প। এ প্রকল্প সমন্বয়ের জন্য পেইচিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ৬টি কেন্দ্র যেখানে বিদ্যুতচালিআত গাড়ি ভাড়া ও চার্জ করা যায়। ২০১৩ সালে যখন পেইচিং ছিং হুয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখন কম মানুষই এখানে বিদ্যুতচালিত গাড়ি ভাড়া করতে বা চার্জ করতে আসতো। কিন্তু ২০১৪ সালে এসেই দেখা গেল এ কেন্দ্রে সবসময় গাড়ির লাইন লেগে আছে।
পেইচিংয়ের মতো বড় শহরে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন প্রতিষ্ঠা সহজ নয়। এ ধরনের স্টেশানের জন্য বড় জায়গা প্রয়োজন। আর রাজধানীতে জমির দাম চড়া। তা ছাড়া, চার্জিং বুথের জন্যও অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন। বিদ্যমান ফিলিং স্টেশানগুলোতে এ ধরনের একটি চার্জিং বুথ স্থাপন করতে প্রতিটির জন্য ১০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করতে হয়। তাই ফিলিং স্টেশানগুলো বিদ্যুতচালিত গাড়ির জন্য আলাদা চার্জিং বুথ তৈরিতে অনাগ্রহী।
চার্জিং স্টেশন যথেষ্ট নয়, চার্জের সময় অন্তত ৩০ মিনিট এবং চার্জিং স্টেশন ব্যবস্থাপনা করলে মুনাফা কম---এ ধরনের নানান সমস্যার কারণে চীনের বিদ্যুতচালিত গাড়ি জনপ্রিয় করে তোলা একটা কঠিন কাজ। অবশ্য চার্জিং অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রচারের জন্য একদিকে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে এবং অন্যদিকে সামাজিক অর্থ এনেও এ খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারি চীনে সামাজিক বিনিয়োগের বৃহত্তম চার্জিং স্টেশন চালু হয়। এ স্টেশন প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হয় ২০০টি চার্জিং বুথ। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিকল্পনা অনুসারে, চলতি বছর পেইচিংয়ের বিভিন্ন চার্জিং স্টেশানে ৩৫০০ নতুন চার্জিং বুথ স্থাপন করা হবে।
চার্জিং বুথ সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি পেইচিংতে চালু হয় রাস্তার বাতি রূপান্তর প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় পেইচিং শহরের ছাং পিং এলাকার একটি রাস্তায় ৮৮টি বাতিকে LED বাতিতে পরিবর্তন করা হয়। LED বাতিতে কম বিদ্যুত খরচ হয় এবং অতিরিক্ত বিদ্যুত গাড়ি চার্জিংয়ের কাজে লাগে। রাস্তার ৮৮টি বাতির উদ্বৃত্ত বিদ্যুত দিয়ে দশ-বারোটি বিদ্যুতচালিত গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করা যায়।
এ ধরনের প্রকল্পের জন্য নতুন জায়গার প্রয়োজন নেই, ব্যয়ও কম। অবশ্য, রাস্তার বাতি রূপান্তর কার্যক্রমের জন্য সরকারের অনুমোদন লাগে। বিশেষ করে পার্কিং স্পট ও চার্জিং বুথ তৈরি করতে অনুমোদন প্রয়োজন।
জানা গেছে, চীনা জ্বালানি ব্যুরোর উদ্যোগে 'বিদ্যুতচালিত গাড়ি চার্জিং ব্যবস্থা উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০১৫-২০২০' শিগগিরই প্রকাশিত হবে।