

laba
|
'লা পা' দিবস পালিত হয় চীনা চান্দ্র পঞ্জিকার দ্বাদশ মাসের ৮ তারিখে। দ্বাদশ মাসের নাম 'লা ইউয়্যু'। অন্যদিকে, চীনা ভাষায় '৮'-কে বলা হয় 'পা'। তাই এ দিবসকে আমরা 'লা পা' দিবস বলে ডাকি। প্রাচীনকালে চীনারা এ দিনে পূর্বপুরুষ এবং দেবতাদের পূজা করতেন। এখনো অনেকে সেই রীতি ধরে রেখেছেন। এ ছাড়া, চীনের কোনো কোনো অঞ্চলে 'লা পা' দিবসে পরিজ খাওয়ার নিয়ম আছে।
চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে 'লা পা' পরিজের উপকরণ ভিন্ন। সাধারণত চাল, চিনাবাদাম, সবুজ মটরশুটি, লাল মটরশুটি ও পদ্মবীজ এ পরিজ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। কুল, লঙ্গন, রাঙা আলু ও অন্য শিমও পরিজের জনপ্রিয় উপকরণ।
প্রায় এক হাজার বছর আগে চীনের সং রাজবংশ আমল থেকে মানুষ 'লা পা' পরিজ খেতে শুরু করে। তখন রাজপ্রাসাদ, মন্দির, সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে লা পা পরিজ তৈরি হতো। পরে এ প্রথা আরও জনপ্রিয় হয়। ছিং রাজবংশ আমলে লা পা দিবসে রাজা, রাণী এবং রাজকুমাররা তাদের মন্ত্রী, পরিচারক ও মন্দিরের ভিক্ষুদের মাঝে পরিজ বিতরণ করতেন। সাধারণ পরিবারেও লা পা পরিজ রান্না করে বন্ধু, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিতরণের রেওয়াজ ছিল।
চীনের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী দিবসগুলোর মতো 'লা পা' দিবসের উত্সে সম্পর্কে রয়েছে নানা মজার কিংবদন্তী।
চু ইউয়ুন ছাং ছিলেন চীনের মিং রাজবংশের রাজা। রাজা হওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন ভিক্ষুক। একবার শীতকালে তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। শীতার্ত ও ক্ষুধার্ত চু ইউয়ুন ছাং কারাগারে ইঁদুর গর্তে কিছু লাল মটরশুটি, কুল ও চাল খুঁজে পান এবং এসব মিলিয়ে পরিজ রান্না করেন। দিনটি ছিল লা ইউয়ু মাসের ৮ তারিখ। তাই ছু ইউয়াংন ছাং এ পরিজের নাম দেন 'লা পা'। পরে চু ইউয়ুন ছাং চীনের রাজা হন এবং ওই দিনের স্মৃতি রক্ষার্থে 'লা পা' দিবস পালনের ঘোষণা দেন।
'লা পা' বৌদ্ধ ধর্মেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা শাক্যমুনি ৬ বছর তপস্যা করে লা ইউয়ু মাসের ৮ তারিখে বুদ্ধে পরিণত হন। ৬ বছর ধরে তিনি দিনে মাত্র একবার খেতেন। পরে শাক্যমুনি বা গৌতম বুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার জন্য মানুষ লা ইউয়ু মাসের ৮ তারিখে পরিজ খাওয়া শুরু করে।
আগে 'লা পা' দিসবে মন্দিরে সন্ন্যাসীরা পরিজ রান্না করতেন এবং বিশ্বাসীদের মাঝে বিতরণ করতেন। তারা মানুষের কাছ থেকে চাল, কুল ও বাদাম সংগ্রহ করতেন এবং পরিজ রান্না করে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। এখনও চীনের কিছু বৌদ্ধ মন্দিরে লা পা দিবসে বিনামূল্যে পরিজ বিতরণ করা হয়।
অন্য একটি গল্প প্রাচীন চীনের বিখ্যাত জেনারেল ইউয়ু ফেইর সঙ্গে সম্পর্কিত। নান সং রাজবংশ আমলে ইউয়ু ফেই তার সৈন্যদের নিয়ে ছু সিয়ান জেলায় শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তখন শীতকাল এবং সৈন্যদের পোশাক ও খাবার অভাব ছিল প্রকট। তখন জেলার অধিবাসীরা পরিজ রান্না করে সৈন্যদেরকে খাওয়াতেন। অবশষে যুদ্ধে ইউয়ু ফেই ও তার বাহিনীর জয় হয়। তাদের চূড়ান্ত বিজয়ের দিনটি ছিল লা ইউয়্যু মাসের ৮ তারিখ। পরে মানুষ ইউয়্যু ফেইয়ের যুদ্ধজয়ের সেই স্মৃতি রক্ষা করতে প্রতি বছর 'লা পা' দিবস পালন করতে শুরু করে। পরে এটি প্রথায় পরিণত হয়। এ সবই হচ্ছে উপকথা। সত্যি আসলে কী, তা বলা মুশকিল। তবে এ কথা সত্যি যে, প্রাচীনকাল থেকেই 'লা পা' দিবস পালনের রেওয়াজ চলে এসেছে।
প্রিয় শ্রোতা, 'লা পা' পরিজ খেতে চান? তাহলে চলুন জেনে নিই পরিজ রান্নার পদ্ধতি।
চাল, কুল, চিনাবাদাম এবং ডিম বা আপনার পছন্দের উপকরণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিনি। চাল পানিতে ডুবিয়ে রাখুন অন্তত দু'ঘন্টা। যদি ৬ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে আরো ভালো।
ডিম বা এরকম উপকরণ অন্তত ৪ ঘন্টার মতো পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। সময়টা ১২ ঘন্টা হলে আরো ভালো।
উপযুক্ত পরিমাণ পানি ও ডিম হাঁড়িতে নিয়ে ২০ মিনিটের মতো সিদ্ধ করার পর ভেজানো চাল মিশিয়ে আরো ৪৫ নিমিটের মতো সিদ্ধ করুন।
রান্না শেষ করার ৫ মিনিট আগে কুল ও চিনি মিশিয়ে মিষ্টি 'লা পা' পরিজ পরিবেশন করুন।
সুপ্রিয় শ্রোতা, রান্না শেষ? খেতে কেমন লাগছে? রান্নার পদ্ধতিটিও খুব সহজ, তাই না? আশা করছি আপনারা নিজের বাড়িতে লা পা পরিজ রান্না করে নিয়মিতই খাবেন।




