0126huanqiu
|
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় যেন এক রাতের মধ্যে অনেক 'দন্তহীন' মানুষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা হয়তো টুইটার বা ফেসবুকে 'দন্তহীন' মানুষের ছবি ছাপাতে চান, অথবা 'দন্তহীন মানুষের বিপ্লব' চালাতে চান। তাদের কি সত্যিই কোনো দাঁত নেই?
আসলে এসবের উত্স হলো ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদের সাবেক বান্ধবী ভালেরি ট্রিয়েরভেইলের ২০১৪ সালে প্রকাশিত নতুন বই 'এ মুহূর্তকে ধন্যবাদ—প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশা, গোপন ও মিথ্যা'। বইতে তিনি উল্লেখ করেন, সবার সামনে ওলাঁদ বলেন যে, তিনি ধনী মানুষকে পছন্দ করেন না, আসলে ওলাঁদ গরিবদেরকে সবচেয়ে অপছন্দ করেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি গরিবদেরকে 'দন্তহীন মানুষ' হিসেবে ডাকেন। তিনি মনে করেন এটি এক রকমের রসালো জিনিসের মতো এবং এমন ধরনের রসবোধ অনেক ভালো লাগে তাঁর।
তথ্য মাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর পরই তা জনসাধারণের মধ্যে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে। এক দিনের মধ্যেই, যারা নিজেদেরকে গরিব হিসেবে মনে করেন, তাঁরা 'দন্তহীন মানুষ' নামে ওয়েবসাইট গড়ে তোলেন এবং জনসাধারণকে বিপ্লবের আহ্বান জানান। এরপর ফেসবুকেও তাঁরা 'দন্তহীন মানুষ' নামে একটি এ্যাকাউন্ট খোলেন এবং সবাইকে প্রেসিডেন্ট ভবনে সমাবেশ করার আহ্বান জানান। প্রায় ৪০ হাজার লোক এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন।
হ্যাঁ, এসব জনগণের সেদেশের সরকার এবং প্রেসিডেন্টের উপর এত রাগান্বিত হবার আরো কারণ রয়েছে। কারণ সরকার গরিবদের জীবনের ওপর গুরুত্ব দেন না এবং বেকারত্বের সমস্যায় কোনো সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন না।
এখন আমরা আপনাদেরকে নিয়ে যাবো নিউজিল্যান্ডে। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডে এমন একটি বাক্য অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে, তা হলো 'বীরের মতো মাতাকে ধন্যবাদ'। পার্লামেন্টের সদস্য হোক, সাধারণ জনগণ হোক, সবাই লুসি নাইট নামে ৪৩ বছর বয়সী এক গৃহিণীর সাহসী আচরণ দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, এই গৃহিণীর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন তাঁরা।
এ ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২৩ অক্টোবর।
এদিন ছয় শিশুর মা লুসি তাঁর দুই ছেলে নিয়ে এক সুপার মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করছিলেন। হঠাত মার্কেটের বাইরে তিনি দেখেন যে, এক স্থানীয় ছেলে চীনা বংশোদ্ভূত এক নারীর ব্যাগ ডাকাতি করছে। তিনি কোনোকিছুর দ্বিধা না করেই ওই নারীকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যান। সাহায্য করার সময় তিনি পড়ে যান এবং মাথার পিছনে গুরুতর আঘাত পান। এ ঘটনায় তাঁর মাথা থেকে অনেক রক্তপাত হয়। পরে তাঁকে জরুরিভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং সেখানে ৩ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ ১৭ বছর বয়সী ওই ছেলেকে গ্রেফতার করেন।
আরো মুগ্ধকর বিষয় হলো যখন লুসির অবস্থা একটু ভালোর দিকে, তখন লুসি এক বিবৃতির মাধ্যমে ওই নারীকে বলেন, যদিও তিনি আহত হয়েছেন, তবে তিনি আশা করেন এ কারণে ওই নারী নিজেকে আত্মনিন্দা করবেন না।
পরে লুসির গল্প খুব তাড়াতাড়ি পুরো নিউজিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। জনসাধারণ খুব তাড়াতাড়ি একটি দাতব্য অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যাতে লুসির চিকিত্সার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যায়। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী চীনা বংশোদ্ভূতরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
অনেকেই অর্থ প্রদানের সময় 'চীনা মানুষ' নিজের এই নামটি লিখে দেন। পরে ওয়েবসাইট প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান চাঁদা সংগ্রহ করে। এর অধিকাংশই প্রবাসী চীনা বা চীনা বংশোদ্ভূতদের দেয়া। কারণ চীনে এমন একটি কথা আছে, 'কেউ আমাকে এক ফোটা পানি দিলে আমি তাকে পুরো সমুদ্র দিয়ে দেবো'।
প্রায় ৩ মাস চিকিত্সার পর লুসি বাসায় ফেরেন। তিনি বলেন, আবার এমন ঘটনা ঘটলে তিনি আবারও সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, নিজের চেয়ে দুর্বল এমন লোকের উপর অত্যাচার করা আমি অনেক ঘৃণা করি। আমি একজন মা, আমার দু'ছেলেও এ ঘটনা দেখেছে। আমার স্বভাব থেকেই আমি ওই নারীকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেই।
হ্যাঁ, এ ঘটনা বিভিন্ন মানুষকে সাহায্য করতে আমাদেরকে উত্সাহিত করবে । অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেই কেউ সহজে অন্যায় বা খারাপ কাজ করতে সাহস পাবেনা । ধন্যবাদ লুসিকে, যিনি আমাদের সামনে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। (ফেইফেই/টুটুল)