সুস্থ থাকার জন্য সাধারণত আমাদের প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণির দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন দেহ ও মনের সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে। নিষ্ক্রিয় জাগ্রত অবস্থার সাথে ঘুমন্ত অবস্থার পার্থক্য হল এ সময় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শীতনিদ্রা বা কোমার চেয়ে সহজেই জাগ্রত অবস্থায় ফেরত আসা যায়। সকল স্তন্যপায়ী ও পাখি এবং বহু সরীসৃপ, উভচর এবং মাছে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী এবং অন্য বেশ কিছু প্রাণির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে নিয়মিত ঘুম আবশ্যক। ঘুমানোর কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি এবং তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে। তেমনি এক গবেষক পেইচিং ছাও ইয়াং হাসপাতালের ঘুম ও শ্বাসপ্রশ্বাস চিকিত্সা বিভাগের মহাপরিচালক ডক্টর কুও সি হেং বলেন, ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষের ঘুমানোর শ্রেষ্ঠ সময়ের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। নিজের বয়স অনুযায়ী সঠিক সময়ে আমাদের ঘুমানো উচিত।
প্রথমে আমি ৬০ বছর বা তারচে বেশি বয়সী মানুষের ঘুম সম্পর্কে বলবো। এ বয়সী মানুষের দৈনিক ঘুমের পরিমাণ হওয়া উচিত সাড়ে পাঁচ ঘন্টা থেকে ৭ ঘন্টা।
প্রবীণদের উচিত রাত বারোটার আগে ঘুমাতে যাওয়া এবং সাড়ে পাঁচ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানো। এই নিয়ম মেনে চললে তাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সময় দুই বছর পিছিয়ে যায়। আবার এ বয়সী মানুষ যদি ৭ ঘন্টার বেশি ঘুমান, তবে তাদের তুলনামূলকভাবে কম বয়সে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের প্রস্তাব এমন: যদি রাতে ঘুম ভাল না হয়, তাহলে দুপুরে এক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিন। তবে এক ঘন্টার বেশি না-ঘুমানো উচিত। দিনের বেলা বেশি ঘুমালে শরীর ও মনের ক্ষতি হয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এখন আমি ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের ঘুম সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাবো। এই গ্রুপের মানুষ প্রতিদিন ৭ ঘন্টা করে ঘুমালে ভালো।
আরো নির্দিষ্ট করে বললে, এবয়সী একজন পুরুষের দৈনিক সাড়ে ছয় ঘন্টা এবং নারীর সাড়ে সাত ঘন্টা ঘুমানো দরকার। তা ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা তাদের জন্য রাত ১০'টা থেকে ভোর ৫'টা পর্যন্ত সময়কে ঘুমের জন্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করেন। কারণ, এ সময়টা এই গ্রুপের মানুষের ক্লান্তি দূর করার জন্য বেশি সহায়ক। নিউজিল্যান্ডে এই বয়সগ্রুপের ২১ হাজার মানুষের ওপর ২২ বছর ধরে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন ৭ ঘন্টার কম ঘুমান, তাঁদের ৭ থেকে ৮টি ঘন্টার বেশি ঘুমানো মানুষের চেয়ে আগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ২৬ শতাংশ বেশি; এটা পুরুষের হিসেব। নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ২১ শতাংশ।
প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর। আমি জানি যে, এই গ্রুপের তরুণ-তরুণীরা কাজে চাপ থাকা বা পারিবারিক সমস্যার কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না; তাদের ঘুমের গুণগত মানও অনেক সময় ভাল হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের নিত্যদিনের খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসও আমাদের ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে বেশি খাবার গ্রহণ করা যেমন খারাপ, তেমনি খারাপ প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করা। আরকেটি কথা বলতে চাই যে, আমাদের ঘুমের পরিবেশও ভালো হওয়া চাই। এর গুরুত্বও কম নয়। কর্কশ উচ্চশব্দ, অপরিচ্ছন্ন ঘরবাড়ি, তীব্র আলো ইত্যাদি আমাদের ঘুমের ক্ষতি করতে পারে। যা হোক, এখন আমি ১৩ থেকে ২৯ বছর পর্যন্ত বয়সগ্রুপের মানুষের ঘুম সম্পর্কে কিছু বলবো।
এই গ্রুপের তরুণ-তরুণীর সাধারণত প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘন্টা করে ঘুমানো দরকার। তাদেরও উচিত ঘুমের সঠিক সময় মেনে চলা।
এই বয়সগ্রুপের মানুষ সাধারণত সপ্তাহের শেষ দিনে লম্বা সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকতে পছন্দ করে। এটাও কিন্তু খুব ভাল অভ্যাস নয়। কারণ, এতে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও ডিনার খাওয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম হবার আশঙ্কা বাড়ে। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণের নিত্যদিনের সুঅভ্যাসের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তরুণ-তরুণীরা রাত জাগাও পছন্দ করেন। এ অভ্যাস দীর্ঘকাল ধরে থাকলে শরীরের ত্বকের ক্ষতি হয় এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া, শোয়ার এক ঘন্টা আগে কোনোকিছু খাওয়া ভাল না। এ সব কিছু মেনে চললে শরীর ভালো থাকবে আশা করা যায়।
আচ্ছা এখন আমি ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ঘুম সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই।
এই গ্রুপের ছেলে-মেয়ের প্রতিদিন ১২ ঘন্টা ঘুম দরকার। তাদের বিছানায় যাওয়া উচিত রাত আটটার মধ্যে। দুপুরের ঘুমও তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এর চেয়ে বেশি না-ঘুমানোই ভালো। কারণ, এর চেয়ে বেশি ঘুমালে বাচ্চাদের অস্বাভাবিক মোটা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ছোট ছেলে-মেয়েদের শোয়ার আগে বাবা-মার উচিত কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করা। যেমন, বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে বিছানা পরিষ্কার করা, মুখ ধোয়া এবং দাঁত মাজা। এ থেকে বাচ্চা বুঝতে পারে যে, ঘুমানোর সময় হয়েছে; এখন আর অন্যকোনো কাজ করা যাবে না।
(ঊর্মি/আলিম)