Web bengali.cri.cn   
কোরীয় উপদ্বীপ পরিস্থিতি পর্যালোচনা
  2015-01-23 19:11:51  cri

শেষ হলো ২০১৪ সাল। বন্ধুরা চলুন, নতুন বছরের শুরুতে ফেলে আসা ঘটনাবহুল দিনগুলোর কিছুটা পর্যালোচনা করি।

২০১৪ সালে কোরীয় উপদ্বীপ পরিস্থিতি তার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা শান্ত ছিল। আঞ্চলিক পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগজনক কোনো নতুন ঘটনা এ সময় ঘটেনি। পাশাপাশি ২০১৪ সালে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেমন, দুই অঞ্চলের আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলন এবং উত্তর কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দক্ষিণ কোরিয়া সফর ইত্যাদি। পাশাপাশি, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া পারস্পরিক সংলাপ ও সম্পর্ক উন্নত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। যদিও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে, উপদ্বীপের ভবিষ্যৎ ক্রমাগত জটিল ও বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠছে।

আমাদের জাতি এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এটা বেদনাদায়ক। একই জাতির মধ্যে পারস্পরিক অপবাদ ও ঘৃণা ছড়ানোর ফলে কোরীয় উপদ্বীপের শত্রুরা লাভবান হবে। এখন ক্ষয়ক্ষতি ও বিভ্রান্তির অবসান টানা উচিৎ। সমঝোতা ও ঐক্য নষ্ট হতে দেয়া ঠিক নয়। জাতির ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অতীত ঘটনাকে পেছনে ফোলে রেখে হাতে হাত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ভবিষ্যতে আমরা আরো ইতিবাচক চেষ্টা চালাবো।

বন্ধুরা, আপনারা এতক্ষণ শুনলেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের নববর্ষের ভাষণ। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গেউন-হায়ে বলেন,

আমরা দুই কোরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে উত্তরের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে আন্তরিক আচরণ। কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি ও ঐক্যের জন্য আমরা যে কোন পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। কিন্তু বৈঠক হওয়া উচিৎ বাস্তব সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আমি আশা করি, উত্তর ও দক্ষিণের বিছিন্ন আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলনের আয়োজন করায় উত্তর- দক্ষিণ সম্পর্ক উন্নত করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

২০১৪ সাল শুরুর পর জাং সং থ্যাকের ঘটনায় উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়। কিন্তু দু'পক্ষের শীর্ষ নেতার মধ্যে দূরত্ব কমানোর লক্ষণ দেখা গেছে। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তর ও দক্ষিণের বিছিন্ন আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে দক্ষিণ ও উত্তরের মধ্যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির বাস্তব উন্নয়ন হয়।

মোট ৬ দিনে উত্তর ও দক্ষিণের ৭৬০ জনেরও বেশি বিচ্ছিন্ন আত্মীয়স্বজন কুমগাং পাহাড়ে আপনজনের সঙ্গে দেখা করেছেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিচ্ছিন্ন আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ মানুষের বয়স ৯৬ বছর। ৬০ বছরেরও বেশি সময় বিচ্ছিন্নতার কারণে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি ও দু:খ বোধ দেখা গেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ ঐক্যের প্রত্যাশায় গান গেয়েছেন। কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল প্রতিশ্রুতি। যদিও এ ধরনের প্রতিশ্রুতি কিছুটা দুর্বল।

পুরুষ: ধূমপান অনেক ধরনের রোগ ডেকে আনবে। আজ আমাদের দেখা হয়েছে। আমাকে কথা দাও যে তুমি ধূমপান করবে না, ঠিক আছে?

নারী: বাবা আপনি নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন। পরে আবার দেখা হবে।

গত বছর আবারো উত্তর ও দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দুই কোরিয়ার সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ এটি। এছাড়া ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার ইনছনে ১৭তম এশীয় গেমসের সমাপনী দিনে, উত্তর কোরিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হোয়াং পিয়ং সো এবং কোরিয়া ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ছুই লংহাইসহ উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা হঠাৎ দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। এটা উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন একটি "মাইলফলক" হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। যদিও সাধারণ মানুষ জেনেছে, উত্তর কোরীয় প্রতিনিধিদল দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে খেলাধুলা নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু, সবকিছুর মধ্যে 'ঐক্য' সম্পর্কিত বিষয়, নিঃসন্দেহে উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রেখেছে। সংবাদদাতাদের সঙ্গে দেখা করার সময় ছুই লংহাই বলেন,

এবারের প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শক ও খেলোয়াড়রা আমাদের নিঃস্বার্থ সমর্থন দিয়েছেন। দক্ষিণের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা সুবিধাজনক শর্তের কারণে আমাদের খেলোয়াড়রা ভাল ফলাফল অর্জন করেছে।

প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া দু'পক্ষের কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ কয়েক দফা সাক্ষাত করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছুং হংওয়ান, কিম কুয়ান-চিন এবং ঐক্য মন্ত্রী রিও কিল-চ্যা সাক্ষাতে অংশ নিয়েছেন। উত্তর কোরীয় প্রতিনিধিদলের সফর শেষে, দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করে যে, উত্তর কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দক্ষিণ কোরিয়া সফর ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক 'বড় পদক্ষেপ'। রিও কিল-চ্যা বলেন,

এক কথায় আমেজ খুবই ভাল। এবার উত্তর কোরিয়া বড় একটি পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগিয়েছে। আগে এমন ছিল না। হঠাৎ করেই তা হয়েছে। এতে দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছে। গতকালের সাক্ষাত খুবই আনন্দদায়ক পরিবেশে হয়েছে।

কিন্তু যদিও উত্তর কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দক্ষিণ কোরিয়া সফর বাইরের জন্য দক্ষিণ-উত্তর সম্পর্ক উন্নয়নে আশার দিক দেখিয়েছে, তবুও পরের অভ্যুত্থান উন্নয়ন বাইরের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করেনি। দু'পক্ষের ঐকমতের বাস্তবায়নের ঊর্ধ্বতন বৈঠক এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী সমুদ্রে ও স্থলে বেশ কয়েকবার 'গুলিবর্ষণ' করেছে। দু'পক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়া বিরোধী প্রচারপত্র বিতরণ নিয়ে একে অপরকে নিন্দা করছে।

গত ১৮ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি "উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার প্রস্তাব" গ্রহণ করেছে। এতে উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করার পাশাপাশি জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিরাপত্তা পরিষদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত আইসিসি'র কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর একই প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তবুও পাশাপাশি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ নিরাপত্তা পরিষদকে উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন আইসিসি'র কাছে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকবার এর বিরোধিতা করেছে। তবে, এ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বছরের শেষ নাগাদ এ বিষয়টি দুই কোরিয়ার মধ্যে শীতল সম্পর্ক তৈরি করেছে।

২০১৪ সালে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, দক্ষিণ কোরিয়ার হোসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধ্যাপক কুয়ান সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, পুরো পরিস্থিতিটি আগের বছরের চেয়ে প্রশমিত হয়েছে, সে দৃষ্টিভঙ্গি রাজী হন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, উত্তর ও দক্ষিণের সম্পর্ক উন্নয়ন কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের অগ্রগতির বাস্তব কার্যকারিতা স্পষ্ট নয়।

২০১৫ সালে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক কুয়ান মনে করেন,

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে কোরীয় উপদ্বীপ পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের উচিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার করা। এ পূর্বশর্তে উত্তর কোরিয়ার প্রতি সংশ্লিষ্ট পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা প্রশমিত হবে, উত্তর কোরিয়াও নতুন বিরাট সাফল্য-অর্জন অন্বেষণ করবে। তিনি আশা করেন, উত্তর কোরিয়া পরমাণু পরীক্ষার মতো আচরণ বাছাই করবে না। কারণ সেটা হলে, উত্তর কোরিয়া আরো অসহায় হবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040